ফাইল চিত্র।
গালোয়ান উপত্যকায় ভারত-চিন প্রাণঘাতী সংঘাতের পর বৎসরকাল অতিবাহিত হইয়াছে। আজও স্থানীয় বাসিন্দা ও সেনাকর্মীরা জানাইতেছেন, প্রতি মাসেই দুই-তিন বার দুই পক্ষের ভিতর সংঘাত বাধে। অভূতপূর্ব সমরসজ্জায় ব্যস্ত বাহিনী, সীমান্ত বরাবর পশুচারণেও নিষেধাজ্ঞা আসিয়াছে। দৈনিক সংবাদপত্রে এই বিষয়ে বিশদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হইয়াছে। প্রকাশমাত্র যৎপরোনাস্তি ক্ষুব্ধ ভারতীয় সেনা উহাকে ‘ভুয়া তথ্যের সমাবেশ’ বলিয়া চিহ্নিত করিয়াছে। প্রশ্ন হইল, জাতীয় নিরাপত্তার জন্য চূড়ান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ভুয়া তথ্য বা ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ থাকিবে কেন? সংবাদমাধ্যমে খবর বাহির হইবার পর বাহিনীকে তাহা খণ্ডন করিতে হইবে কেন? বস্তুত, প্রতিবেদনগুলি নিরালম্ব বায়ুভুক নহে, অকুস্থল হইতে আহরিত তথ্যের ভিত্তিতেই প্রস্তুত। সেইখানেই ইহাও উল্লিখিত যে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের পক্ষে কেহ তথ্য জানাইতে রাজি হন নাই। কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্যপ্রকাশ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা থাকিলেই এই তর্কের অবকাশ আসিত না, বলা বাহুল্য। লৌহবাসরের ছিদ্রপথটি, অতএব, দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট।
দুর্ভাগ্যের কথা, এক বৎসরে দুই পক্ষের সেনাকর্তারা একের পর এক বৈঠক করিয়াছেন, সীমান্ত সমন্বয় মঞ্চগুলি আলাপ চালাইয়াছে, দুই দেশের বিদেশ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকও সক্রিয় হইয়াছে, তবু শান্তি প্রক্রিয়ার সূচনাটুকুও হয় নাই। শি চিনফিং জমানায় ক্রমশ আগ্রাসী সীমান্ত সঙ্কট মিটাইতে দৃশ্যতই তাদৃশ আগ্রহী নহে। উত্তরে মঙ্গোলিয়া হইতে দক্ষিণে মায়ানমার, পূর্বে জাপান হইতে পশ্চিমে নেপাল-সহ সতেরোটি দেশের সহিত বেজিং-এর সীমান্ত লইয়া বিতর্ক চলমান। স্পষ্টতই, দখলীকৃত মেদিনীর সূচ্যগ্রও তাহারা বিনাযুদ্ধে ফেরত দিতে নারাজ। এহেন আগ্রাসী প্রতিবেশীর সামনে পিছাইয়া আসা সহজ নহে, ভারতও পিছাইয়া আসে নাই। বিবিধ আন্তর্জাতিক মঞ্চে বেজিং-বিরোধী ঐকমত্য গড়িয়া তুলিবার চেষ্টা করিয়াছে, যাহার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ ব্রিকস। মুখোমুখি বারংবার মধুর বচন বিনিময় চেষ্টা হইলেও সমাধান প্রক্রিয়ায় আগাইবার পথটি তমসাচ্ছন্ন।
এমতাবস্থায়, তথ্য লইয়া সরকারের লুকাচুরি ভারতের ভাগ্যাকাশ যেন আরও মেঘাচ্ছন্ন করিয়া তুলিতেছে। পূর্ব লাদাখের সংঘর্ষ লইয়া নাগরিক সমাজের প্রায় কিছুই জানা নাই। বর্তমানে কোন বিন্দুতে দাঁড়াইয়া আছে দুই পক্ষ? চিন কি পিছু হটিয়াছে? ভারত কি তাহার এলাকা পুনরুদ্ধার করিতে পারিয়াছে? প্রায় বৎসরব্যাপী সংঘাতের ফলাফল কী হইল? প্রতিটি উত্তরই, অন্তত নাগরিকের নিকট, অজ্ঞাতের গর্ভে নিহিত। এবং, সরকারি নথিপত্র প্রকাশ করিলে যাহা সহজেই হইতে পারিত, তাহা হয় নাই বলিয়া, ভারতের অভ্যন্তরে বিষয়টি এতাদৃশ জটিল, রাজনীতির প্রয়োজনে সরকারপক্ষের হাতে সুবিধাজনক অস্ত্র— যখনতখন যাহা খেলাইয়া দেশবাসীর মনে জাতীয়তাবাদের জিগির তোলা যায়। কূটনৈতিক বিষয়ে গোপনীয়তা বিধেয়। কিন্তু এমন দীর্ঘ যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে অন্তত প্রাথমিক তথ্যও না জানাইলে নাগরিক সমাজের প্রতি রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালিত হয় না। শতপুত্রের হত্যার কাহিনি যতই বেদনাদায়ক হউক, ধৃতরাষ্ট্রকে তাহা জানানোই ছিল সঞ্জয়ের কর্তব্য। ভিয়েতনাম যুদ্ধেও সমাজের নিকট সত্য গোপনের ফল আমেরিকার কাছে ভাল হয় নাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy