খেলায় এমন কিছু অবিস্মরণীয় মুহূর্ত থাকে, যা চিরকালের জন্য স্মৃতিপটে জায়গা করে নেয়। হাঙ্গেরি-র বুদাপেস্ট-এ অনুষ্ঠিত দাবা অলিম্পিয়াডের ‘ওপেন’ ও মেয়েদের বিভাগে সোনা জিতে দেশকে তেমনই কিছু মুহূর্ত উপহার দিলেন ভারতীয় দাবাড়ুরা। উজ়বেকিস্তানের সঙ্গে একটি ড্র ম্যাচ বাদে ওপেন প্রতিযোগিতার বাকি সব ক’টি খেলাতেই নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখেন ভারতের পুরুষ দাবাড়ুরা এবং এক রাউন্ড বাকি থাকতেই জিতে নেন সোনা। তা ছাড়া, ওপেন দলের হয়ে অষ্টাদশী জি গুকেশ এবং একুশ বছরের অর্জুন এরিগাইসি তাঁদের পারফরম্যান্সের সুবাদে ব্যক্তিগত স্তরে শুধু সোনা জিতলেন না, ঢুকে পড়লেন বিশ্বর্যাঙ্কিং-এর প্রথম পাঁচেও। অন্য দিকে, মহিলাদের দলটি একটি ম্যাচ হেরে ও একটি ড্র করেও শেষের দু’টি ম্যাচ জিতে সোনা ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয়। পাশাপাশি ব্যক্তিগত স্তরে সোনা পেলেন অষ্টাদশী দিব্যা দেশমুখ এবং বাইশ বছরের ভান্তিকা আগরওয়াল। বলা বাহুল্য, দলগত সংহতি, জোরদার প্রস্তুতির সঙ্গে প্রতিভা ও অভিজ্ঞতার সংমিশ্রণেই এ-হেন কৃতিত্ব অর্জন করতে সক্ষম হলেন ভারতের দাবাড়ুরা।
২০২২ সালে চেন্নাইতে অনুষ্ঠিত এই একই প্রতিযোগিতায় এই দুই বিভাগেই ব্রোঞ্জ পদক জিতেছিল ভারত। কিন্তু সাম্প্রতিক ফলাফলে স্পষ্ট যে, এই দু’বছরে দলের নবীন সদস্যরা তাঁদের দক্ষতাকে আরও অনেকখানি পরিশীলিত করেছেন। তবে বর্তমানে ভারতীয় দাবায় যে প্রতিভার কমতি নেই, তার অন্যতম প্রমাণ অন্তত ৮৫ জন গ্র্যান্ডমাস্টার, যাঁদের গড় বয়স আঠারো থেকে পঁচিশের মধ্যে। যদিও প্রতিভার পাশাপাশি ভারতে দাবা নিয়ে উৎসাহ বৃদ্ধির নেপথ্যে রয়েছে অন্যান্য কারণও। ভাল প্রশিক্ষক ছাড়াও দাবা সংক্রান্ত উন্নত কম্পিউটার প্রোগাম (চেস ইঞ্জিন) ও সফটওয়্যার এখন দেশের দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্তরের শহরেও উপলব্ধ হওয়ার ফলেই আজ দাবার বিশ্বমঞ্চে উঠে আসছেন নাগপুরের দিব্যা দেশমুখ কিংবা ওয়রঙ্গলের অর্জুন এরিগাইসি। উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যেই গুকেশের মতো ভারতীয় দাবাড়ুরা কয়েক মাস অন্তর বিদেশে না গিয়েও বিদেশি কোচদের থেকে প্রশিক্ষণ নিতে পারছেন। বিশ্বনাথন আনন্দ-দের মতো পূর্বসূরিদের অবদানও আছে। অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় সরকার-সহ বেশ কিছু রাজ্য সরকারও সহযোগিতা করছে। পিছিয়ে নেই বহুজাতিক সংস্থাগুলিও। প্রতিযোগিতার স্পনসরশিপ-এর সঙ্গে বিদেশি গ্র্যান্ডমাস্টারদের সঙ্গে প্রশিক্ষণের টাকা ও অন্যান্য সহায়তা দিচ্ছে তারা।
আছে অভিভাবকদের একাংশের সমর্থনও, যাঁরা নিজেরাই সন্তানদের উৎসাহিত করছেন দাবা খেলতে। অনেক স্কুলও গুরুত্ব দিচ্ছে দাবাকে। যে কোনও ক্ষেত্রের সাফল্য বৃদ্ধি করে তার জনপ্রিয়তা, যা অনেকের অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়ায়। অলিম্পিয়াডের সাফল্য বা অর্জুনদের প্রথম পাঁচে উন্নীত হওয়াই প্রমাণ করে, যে দেশে ক্রিকেটকে ধর্ম হিসাবে মনে করা হয়, সেখানে আজ দাবা পিছিয়ে পড়ে নেই। অনেক নবীন দাবাড়ু রয়েছেন, যাঁরা এই সব প্রতিযোগিতায় দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন। জার্মান দাবাড়ু এমানুয়েল লাস্কার-এর উক্তি ছিল, ভাল (দাবার) চাল দেখলে আরও ভাল চালের খোঁজ করো। ভারতীয় দাবা সেই স্বর্ণযুগের পথেই এগোচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy