Advertisement
E-Paper

দুর্বৃত্তায়ন

পুলিশের পার্শ্বচর বা রাজনৈতিক গুন্ডাদের প্রবল দাপটও সমাজের মূল রোগ নহে— কর্কট রোগ বাসা বাঁধিয়াছে রাজনীতির কোষে কোষে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৫:৪৭
Share
Save

খবরে প্রকাশ, রাস্তা সারাইবার গুণমান লইয়া প্রশ্ন তুলিবার কারণে এক প্রৌঢ়কে প্রহার করিয়া হত্যা করা হইয়াছে। যাঁহারা এই নৃশংস কাণ্ড ঘটাইয়াছেন, তাঁহারা অঞ্চলের রাজনৈতিক নেতা। হুগলির চণ্ডীতলার এই বিশেষ ঘটনাটি ভয়ানক, তাহাতে সন্দেহ নাই; কিন্তু উহার ধারাবাহিকতাটি বহু গুণে আতঙ্কের। এবং, শুধু রাজনৈতিক দলের মেজো-সেজো নেতা বা পোষিত বাহুবলীরাই নহে, এই জাতীয় ঘটনায় নাম জড়াইতেছে আরও অনেকেরই। যেমন, পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার ও হোম গার্ড। গত কয়েক মাসে কলিকাতা শহরে তাহাদের আইনাতিরিক্ত কার্যকলাপ এমন মাত্রায় পৌঁছাইয়াছে যে, কর্তারাও নড়িয়া বসিতে বাধ্য হইতেছেন। সাম্প্রতিক অভিযোগ, এক ব্যক্তিকে মোবাইল চোর সন্দেহে প্রহারে হত্যা। খুচরা নেতা বা সিভিক ভলান্টিয়াররা এই দুঃসাহস পাইতেছেন কোথায়, এই প্রশ্নটির উত্তর সহজ। তাঁহারা নিশ্চয়ই বার্তা পাইয়াছেন যে, আর আইনের তোয়াক্কা না করিলেও চলিবে— তাঁহাদের মাথার উপরে আশীর্বাদি হাত আছে। রাজনৈতিক আশীর্বাদ ভিন্ন এমন শক্তি আর কিসের?

সমাজের পক্ষে বার্তাটি ভীতিপ্রদ। প্রকৃত প্রস্তাবে, পুলিশের পার্শ্বচর বা রাজনৈতিক গুন্ডাদের প্রবল দাপটও সমাজের মূল রোগ নহে— কর্কট রোগ বাসা বাঁধিয়াছে রাজনীতির কোষে কোষে। এক-এক ক্ষেত্রে তাহার এক-এক রকম বহিঃপ্রকাশ ঘটিতেছে। মূলগত চরিত্রটি অবশ্য অভিন্ন— প্রতি ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক ক্ষমতার বিকট বহিঃপ্রকাশ ঘটে। যথা, নির্মাণ প্রকল্পের ক্ষেত্রে ‘প্রোমোটিং’। পশ্চিমবঙ্গবাসী জানেন, যে কোনও প্রকল্পে ঠিকাদারের কিছু ‘লভ্যাংশ’ থাকে, তাহার উপর থাকে নেতার ‘লভ্যাংশ’, এবং দুইয়ের যৌথ পরাক্রম। বামফ্রন্ট জমানাতেই তাহার পত্তন ও বিস্তার, বর্তমানে বহু ঠিকাদার স্বয়ং নেতা বনিয়া গিয়াছেন। স্পষ্টতই, তাহা রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস। সম্প্রতি কলিকাতায় একাধিক ‘শুটআউট’-এর ঘটনা ঘটিল। ঘটনাগুলির সহিত যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে প্রোমোটিং-এর যোগ আছে, তাহা নিছক সমাপতন নহে। অপরিমেয় অর্থ এবং লাগামহীন রাজনৈতিক ক্ষমতা যে বিন্দুতে আসিয়া মিশে, সেখানে দুর্বৃত্তায়ন ও প্রবল হিংস্রতাই প্রত্যাশিত পরিণাম।

দুর্বত্তায়নের অবশ্য একটি অহিংস রূপও আছে। পথে নামিলেই সেই দুর্বৃত্তির নিদর্শন চোখে পড়ে— রাস্তা বেহাল, কারণ দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি তাহাকে সেই অবস্থায় রাখিয়াছে। হুগলির ঘটনাটি শেষ অবধি মর্মান্তিক হিংসায় পৌঁছাইয়াছে বটে, কিন্তু এই ক্ষেত্রে তাহা ব্যতিক্রম। প্রতি বৎসরই যে সড়ক মেরামত হয়, কী ভাবে তাহা বৎসরান্তে বেহাল হইয়া যায়? হয়, কারণ সড়ক খাতে বরাদ্দ অর্থ ঠিকমতো ব্যয় করেন না ঠিকাদার। প্রতি বৎসর ইট-বালি-সিমেন্ট ক্রয় করিবার আবর্তে লাভের গুড় আছে, পিপীলিকারও অভাব নাই। রাজনীতির দুষ্টচক্রে সেই গুড় আহরণ ও বণ্টনের ব্যবস্থাটি প্রবল রকম পাকা। ইহার ফলে যাতায়াতে দুর্ভোগ হয়, দুর্ঘটনা ঘটে, প্রাণহানি হয়, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি রুদ্ধ হয়। কিন্তু প্রশাসনের গয়ংগচ্ছ ভাবটির ছাড়পত্র লইয়া সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের দুষ্টচক্রও নিয়মমাফিক চলিতে থাকে। বেহাল সড়ক হইতে প্রোমোটার-রাজ হইয়া গণপ্রহার— সবই ‘স্বাভাবিক’ হইয়া উঠিতেছে। সমাজের পক্ষে ইহা সুসংবাদ নহে।

Civic Volunteers Behaviour

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।