Advertisement
E-Paper

সংখ্যার লাভ

এই পরিস্থিতি থেকে নিস্তারের প্রত্যক্ষ পথ, শিক্ষায় যথেষ্ট পরিমাণ ব্যয় করা। শিক্ষাক্ষেত্রে দেশের জিডিপি-র অন্তত ছয় শতাংশ বরাদ্দ করা জরুরি। বহু পথ পেরিয়ে বরাদ্দ তার অর্ধেকে পৌঁছেছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:৩০
Share
Save

বিশ্বের জনসংখ্যা পেরিয়ে গেল আটশো কোটি। ২০৫০ সালে ৯৭০ কোটিতে, এবং নতুন শতাব্দীর সূচনায়, ২১০০ সালে তা পৌঁছবে ১০৪০ কোটিতে। অর্থাৎ, জনসংখ্যা বাড়বে বটে, কিন্তু সেই বৃদ্ধির হার কমতে থাকবে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ভারতেও কমছে— রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেতারা যে কথাই বলুন না কেন, ভারতে সব জনগোষ্ঠীর মধ্যেই জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিম্নমুখী। জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষার পঞ্চম দফার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বছরে এক শতাংশের কম, এবং সার্বিক জন্মহার দাঁড়িয়েছে দুই শতাংশে, অর্থাৎ প্রতিস্থাপন হারের চেয়ে কম। জনসংখ্যাতাত্ত্বিকদের অনুমান, ২০৪৮ সালে ভারতের জনসংখ্যা পৌঁছবে তার সর্বোচ্চ স্তর ১৬০ কোটিতে, এবং তার পর তা হ্রাস পেতে থাকবে। অর্থাৎ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে দুশ্চিন্তা করার মতো কোনও কারণ ভারতের নেই। বরং, দেশের জনসংখ্যা বিশ্বসভায় ভারতের অন্যতম প্রধান শক্তি হয়ে উঠতে পারে— শুধু ক্রেতা হিসাবে নয়, শ্রমশক্তি হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ। ভারত এখন দুনিয়ার তরুণতম দেশগুলির অন্যতম। আগামী পঁচিশ বছরে বিশ্বের কুড়ি শতাংশ কর্মক্ষম মানুষ ভারতেই থাকবেন, এবং দেশের ৬২ শতাংশ মানুষ থাকবেন কর্মক্ষম বয়স-বন্ধনীতে। পরিভাষায় একে বলা হয় ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’। এই লভ্যাংশ ঘরে তোলার সুযোগ আগামী দুই বা তিন দশকই মিলবে, কারণ তার পর থেকে ভারতও ক্রমেই আজকের চিনের পথে হাঁটবে, যেখানে জনসংখ্যায় ক্রমেই প্রবীণ নাগরিকদের অনুপাত বাড়বে, যাঁরা কর্মক্ষম নন, এবং বিভিন্ন ভাবে পরনির্ভরশীল। সুতরাং, আগামী দু’তিন দশকের লাভের জানলাটিকে খোয়ালে চলবে না।

কথাটি বলা যত সহজ, তাকে কাজে পরিণত করা ততই কঠিন। তার কারণ প্রস্তুতির অভাব। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের বাজেট খুললে দেখা যাবে, তাতে কথার ফুলঝুরি যত, শিক্ষা খাতে বরাদ্দের পরিমাণ তার অংশমাত্রও নয়। প্রাথমিক শিক্ষা থেকে উচ্চশিক্ষা বা কারিগরি শিক্ষা, কোনও ক্ষেত্রেই এমন কোনও বরাদ্দ নেই, যাতে মনে হয় যে, ভারত ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড-এর সম্ভাবনাকে বাস্তবায়িত করতে চায়। ফলে, দক্ষতার ছবিটি করুণ। ২০২১ সালের ইন্ডিয়া স্কিল রিপোর্ট বলছে, ভারতের তরুণ-তরুণীদের মাত্রে ৪৬ শতাংশ নিয়োগযোগ্য। যে সব ক্ষেত্রে অধিকতর দক্ষতা প্রয়োজন, সেখানে নিয়োগযোগ্যতার হার আরও কম। অন্য দিকে, কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের উপস্থিতির হার কমছে— ২০০৫ সালে দেশে ১৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের মহিলাদের ৩২ শতাংশ উপার্জনশীল ছিলেন, ২০১৯-২০ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৮.৭ শতাংশ। অর্থাৎ, এক দিকে যথেষ্ট দক্ষতার অভাব, এবং অন্য দিকে কর্মক্ষেত্র থেকে নারীদের দূরে থাকতে বাধ্য করা— দুইয়ে মিলে ভারতের প্রকৃত শ্রমশক্তিকে সঙ্কুচিত করে রেখেছে।

এই পরিস্থিতি থেকে নিস্তারের প্রত্যক্ষ পথ, শিক্ষায় যথেষ্ট পরিমাণ ব্যয় করা। শিক্ষাক্ষেত্রে দেশের জিডিপি-র অন্তত ছয় শতাংশ বরাদ্দ করা জরুরি। বহু পথ পেরিয়ে বরাদ্দ তার অর্ধেকে পৌঁছেছে। শিক্ষাক্ষেত্রে বেসরকারি পুঁজি স্বাগত, কিন্তু কী ভাবে তাকে দেশের বৃহত্তর স্বার্থের সমানুবর্তী করতে হবে, সরকারের কাছে তার যথাযথ পথনির্দেশ থাকা জরুরি। কর্মক্ষেত্রে মহিলা শ্রমিকদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থার দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। তাঁদের নিরাপত্তা, মাতৃত্বকালীন ছুটি, সন্তানের জন্য ক্রেশ, পরিচ্ছন্ন শৌচাগার ইত্যাদি নিশ্চিত করা জরুরি। কিন্তু একটি বৃহত্তর কর্তব্য রয়েছে। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড পাওয়ার জন্য দেশের সব মানুষকে নিয়ে চলতে হবে— রাজনৈতিক পরিসরে সঙ্কীর্ণ বিভাজনের খেলা চললে অর্থব্যবস্থার গায়েও তার আঁচ লাগবেই। উদার, সর্বজনীন ও গ্রহিষ্ণু রাজনৈতিক সংস্কৃতিসঞ্জাত সামাজিক বিশ্বাসই আর্থিক সমৃদ্ধি অর্জনের একমাত্র দীর্ঘমেয়াদি পথ।

World Population Population Control GDP

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।