গাড়ি পুরাতন হইলে, দূষণ সৃষ্টি করিলে তাহাকে বাতিল ঘোষণা করা প্রয়োজন। পরিবেশের দিক হইতেও, গাড়িশিল্পের স্বার্থেও। সুতরাং, কেন্দ্রীয় সরকার এই বৎসরের গোড়া হইতেই ১৫ বৎসরের অধিক পুরাতন গাড়ি বাতিলের নীতি প্রয়োগ করিবার কথা বলিয়াছিল। সম্প্রতি সেই সংক্রান্ত নূতন জাতীয় নীতিটি ঘোষণা করিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বর্তমান আইন অনুযায়ী, ১৫ বৎসর পরে রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ উত্তীর্ণ হইলে গাড়ির স্বাস্থ্যপরীক্ষা হয়। পাশ করিতে না পারিলে গাড়িটিকে বাতিল তালিকাভুক্ত করা হয়। নূতন নীতি অনুযায়ী, বাতিল গাড়ির জন্য একটি শংসাপত্র মিলিবে। নূতন গাড়ি কিনিবার সময় শংসাপত্রটি প্রদর্শিত হইলে ক্রেতা কিছু বিশেষ সুবিধা পাইবেন। যেমন— গাড়ির দাম, রেজিস্ট্রেশন, পথকরের উপর কিছু ছাড় মিলিবে। এখন বাজারে যে নূতন পেট্রল গাড়ি বিক্রয় হয়, সেগুলি বিএস-৬ বিধি মানিয়া প্রস্তুত হইয়াছে— অর্থাৎ, ইহাতে নাইট্রোজেন অক্সাইড নিঃসরণের পরিমাণ ২৫ শতাংশ কম। বিশেষজ্ঞদের মতে, নূতন গাড়ির তুলনায় পুরাতন গাড়ির দূষণ-ক্ষমতা ১০-১২ গুণ অধিক। রাস্তায় পুরাতন গাড়ি কমিলে দূষণও কমিবে। ভারতের রাস্তায় ২০ বৎসরের অধিক পুরাতন ছোট গাড়ির সংখ্যা প্রায় ৫১ লক্ষ, এবং ১৫ বৎসরের অধিক পুরাতন গাড়ির সংখ্যা ৩৪ লক্ষ। ইহার সঙ্গে যোগ হইবে ১৫ বৎসরের অধিক পুরাতন মাঝারি এবং ভারী বাণিজ্যিক গাড়ির বিপুল সংখ্যা, যাহারা যথাযথ ফিটনেস সার্টিফিকেট ব্যতীতই চলাচল করিতেছে। এই পরিসংখ্যানের দিকে তাকাইলে নূতন নীতিটির গুরুত্ব বোঝা যায়।
কোনও গাড়ি বাতিল হওয়া মানেই যে তাহার কোনও অংশই আর ব্যবহারযোগ্য নাই, তাহা নহে। এত দিন অবধি পুরাতন গাড়ি হইতে ব্যবহার্য অংশগুলি পুনর্ব্যবহার করিবার কোনও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা ছিল না। এই বার সেই ব্যবস্থা হইতেছে। এই বিষয়টি এই নীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক। প্রধানমন্ত্রীর কথাতেও এই ‘সার্কুলার ইকনমি’ সৃষ্টির প্রসঙ্গটি উঠিয়া আসিয়াছে। বাতিল গাড়ির ক্ষেত্রে যেমন ধাতু ছাড়াও অন্যান্য অংশ, যেমন— আসন, ব্যবহৃত প্লাস্টিক ইত্যাদিও নূতন ভাবে ব্যবহার করা যাইবে। এবং ইহার দরুন বর্জ্য উৎপাদন, দূষণ এবং কার্বন নিঃসরণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভবপর হইবে।
কিন্তু এই ঘোষণার পরেও একটি প্রশ্ন থাকিয়া যায়। দূষণ রোধে একাধিক নীতি লওয়া সত্ত্বেও অনেকাংশেই তাহা খাতায়-কলমে রহিয়া গিয়াছে। দেশে দূষণের মাত্রা কমে নাই। যানবাহন বাতিল নীতিরও শেষ পর্যন্ত সেই অবস্থা হইবে না তো? এই ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের উদাহরণটি উল্লেখ্য। এক সময়ে পরিবেশ আদালতের নির্দেশ ছিল, প্রথমে কলিকাতা, হাওড়া এবং পরবর্তী কালে রাজ্যের অন্যত্রও যেন শুধুমাত্র বিএস-৬ মাপকাঠির গাড়িই চলাচল করে, তাহা নিশ্চিত করিতে হইবে। কিন্তু পরিবেশবিদদের অভিযোগ, এখনও বিএস-৪ মাপকাঠির নীচের বহু গাড়ি কলিকাতা এবং হাওড়ায় চলিতেছে। এবং কাঞ্চনমূল্যে ক্রয় করা যাইতেছে গাড়ি চলাচলের শংসাপত্র। সুতরাং, দূষণ নিয়ন্ত্রণে আন্তরিক হইলে শুধুমাত্র ঘোষণায় আবদ্ধ থাকিলে চলিবে না। তাহা যাতে কঠোর ভাবে প্রয়োগ করা হয়, সর্বাগ্রে সেই বিষয়ে দৃষ্টি রাখিতে হইবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy