Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Agnipath Scheme

কর্মখালি

প্রধানমন্ত্রী সহজ পথের পূজারি, ফলে কর্মসংস্থানের জন্যও তিনি সহজ পথটিই বেছেছেন। সরকারি ক্ষেত্রে নিয়োগের জন্য প্রয়োজনের মুখাপেক্ষী হতে হয় না।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০২২ ০৫:৫৫
Share: Save:

যখন বেসরকারিকরণের পক্ষে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, শুনলে মনে হয়, রোনাল্ড রেগন আর মার্গারেট থ্যাচার কথা বলছেন বুঝি, আর তাঁদের পিছনে দাঁড়িয়ে আছেন মিলটন ফ্রিডম্যান। অথচ, লোকসভা নির্বাচনের আগে যখন মুখরক্ষা করতে চাকরির ব্যবস্থা করার প্রয়োজন পড়ল, প্রধানমন্ত্রী তখন জানালেন, সরকারি দফতরগুলিকে হুকুম দিয়েছেন অতি দ্রুত দশ লক্ষ কর্মসংস্থান করার। সহজ কথায়, দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ উজাড় করে দেওয়ার সময়, বাণিজ্যিক সুবিধা করে দেওয়ার সময় অগ্রাধিকার সাঙাততন্ত্রের, কিন্তু কর্মসংস্থান করতে হলে ভরসা সেই আদি ও অকৃত্রিম সরকারি দফতর। অনুমান করা যায় যে, আঠারো মাসে সত্যিই দশ লক্ষ নতুন চাকরির ব্যবস্থা হবে— কর্তার হুকুম যখন, কর্মীর প্রয়োজন থাক অথবা না-ই থাক, চাকরি না দিয়ে দফতরগুলির উপায় কী? তার ফলে ন্যূনতম প্রশাসনের ক্ষীণ প্রতিশ্রুতিটি হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি আরও অলাভজনক হবে, কর্মীদের উৎপাদনশীলতা আরও কমবে— পরবর্তী কালে সাঙাতদের কাছে সংস্থাগুলিকে বেচে দিতেও সুবিধা হতে পারে। কিন্তু, আপাতত সে সুবিধা নেহাতই পড়ে পাওয়া চোদ্দো আনা। এই মুহূর্তে চাকরির ব্যবস্থা করাই আসল মাথাব্যথা— বছরে এক কোটি না হোক, দেড় বছরে দশ লক্ষ। অগ্নিপথ নিয়ে দেশজোড়া বিক্ষোভের মাঝখানে দাঁড়িয়ে নেতারা বিলক্ষণ টের পাচ্ছেন যে, কতখানি বারুদ জমে আছে সাধারণ মানুষের মনে। তাঁরা সাম্প্রদায়িকতার আগুন নিয়ে খেলতে পারেন, সেনাবাহিনীর ভবিষ্যৎ নিয়েও ছেলেখেলা করতে পারেন, কিন্তু নির্বাচন তাঁদের কাছে এক অলঙ্ঘ্য উপাস্য। লোকদেখানোর জন্য হলেও চাকরির ব্যবস্থা তাঁদের করতেই হবে।

প্রধানমন্ত্রী সহজ পথের পূজারি, ফলে কর্মসংস্থানের জন্যও তিনি সহজ পথটিই বেছেছেন। সরকারি ক্ষেত্রে নিয়োগের জন্য প্রয়োজনের মুখাপেক্ষী হতে হয় না। কিন্তু, অর্থব্যবস্থা সম্বন্ধে সামান্য ধারণা থাকলেই বোঝা সম্ভব যে, এটি কর্মসংস্থানের প্রকৃষ্ট পথ নয়। যত ক্ষণ না বাজারে কর্মীর চাহিদা তৈরি হচ্ছে, তত ক্ষণ অবধি উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান হতে পারে না। আর, বাজার তখনই নতুন কর্মী চাইবে, যখন উৎপাদন বৃদ্ধির প্রয়োজন হবে। তার জন্য চাহিদা বাড়া জরুরি। ভারতীয় অর্থব্যবস্থাকে এই জায়গাতেই পঙ্গু করেছে বর্তমান সরকার। অতিমারির ঘাড়ে সেই দায়টি চাপিয়ে দেওয়ার উপায় নেই— সরকারি পরিসংখ্যানই বলছে যে, অতিমারি শুরু হওয়ার আগে থেকেই ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা কমতে আরম্ভ করেছিল। প্রায় পাঁচ দশক পরে গ্রামাঞ্চলে প্রকৃত ভোগব্যয়ের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে এই সরকারের আমলে। গ্রামীণ কর্মসংস্থান যোজনায় ন্যূনতম মজুরিতে অদক্ষ শ্রমিকের কাজের জন্য যে ভাবে চাহিদা বেড়েছে, তাতে গ্রামাঞ্চলের আর্থিক সমস্যা আঁচ করা সম্ভব। শহরও তথৈবচ। নরেন্দ্র মোদীরা জানেন, বাজারের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের পথ তাঁরাই বন্ধ করে রেখেছেন। অতএব, সরকারই ভরসা।

অর্থব্যবস্থার হিসাবের কড়ি বাঘে ছোঁয় না। প্রতিটি ভুল সিদ্ধান্তই বিপুলতর আকৃতি ধারণ করে নিজের পাওনাগন্ডা বুঝে নিতে আসে। ২০১৪ সাল থেকেই ভারতীয় অর্থনীতি যে ভাবে পরিচালিত হয়েছে, তাতে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, আগামী কাল নামক কোনও একটি বস্তু আছে, কেন্দ্রীয় সরকার তা বিশ্বাসই করে না। রাজনীতির যূপকাষ্ঠে তাঁরা বারংবার অর্থনীতির যুক্তিকে বলি দিয়েছেন। আজকের পরিস্থিতি সেই ভ্রান্ত পরিচালনারই ফল। সমস্যা হল, আজও তাঁরা ভুল স্বীকার করতে নারাজ। অতীতের ভুল ঢাকতে বৃহত্তর, বিপজ্জনকতর ভুলের পথে হাঁটতে তাঁদের দ্বিধা নেই। দশ লক্ষ কর্মসংস্থানের নাটক তেমনই একটি ভুল। তার দাম মেটাতে হবে ভবিষ্যৎকে।

অন্য বিষয়গুলি:

Agnipath Scheme Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy