জার্মান সঙ্গীতশিল্পী লুডভিগ ফন বেঠোফেন Sourced by the ABP
জার্মান সঙ্গীতশিল্পী লুডভিগ ফন বেঠোফেন তাঁর প্রতিভার জন্য বিখ্যাত। তাঁর রচিত সেভেনথ, এইটথ বা নাইনথ সিম্ফনি তাঁকে অমর করে রেখেছে। পাশ্চাত্য সঙ্গীতের এই প্রাণপুরুষ ছোটবেলায় সঙ্গীতে তালিম নিয়েছিলেন তাঁর বাবা জোহান ফন বেঠোফেন-এর কাছে। ছোটবেলায় বেঠোফেন-এর সঙ্গীতপ্রতিভা দেখে চমৎকৃত হয়েছিলেন বাবা জোহান। কিন্তু তাঁর কাছে তালিম কখনওসখনও অত্যাচারে পৌঁছে যেত বলে একটু বয়স বাড়লে তিনি তালিম নেন সঙ্গীত পরিচালক ক্রিশ্চিয়ান গোটলোর নিফ-এর কাছে। সঙ্গীত বিশারদেরা বেঠোফেন-এর রচনাকে তিন পর্বে ভাগ করেন— আদি, মধ্য এবং অন্ত। এই মধ্য পর্বে— ১৮০২ থেকে ১৮১২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত— বেঠোফেন-এর শ্রবণেন্দ্রিয় বিকল হতে থাকে। পরে তা পুরোপুরি বিকল হয়ে যায়। শ্রবণশক্তি লোপ পাওয়ার পরেও তিনি সঙ্গীত রচনা করতে থাকেন। তাঁর রচনা ১৮২৭ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। কী করে বধির এক জন শিল্পী অমন অবিস্মরণীয় সঙ্গীত রচনা করেছিলেন, তা ভেবে সঙ্গীতপিপাসুরা আজও বিস্মিত হন। তাঁর উপরে হোলফগাং আমাদেউস মোৎজ়ার্ট-এর প্রভাব ছিল যথেষ্ট। অস্ট্রিয়ার এই সঙ্গীতজ্ঞ বয়সে চোদ্দো বছরের বড় ছিলেন বেঠোফেন-এর থেকে। কিন্তু মোৎজ়ার্ট যেখানে মাত্র পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে মারা যান, সেখানে বেঠোফেন বেঁচেছিলেন সাতান্ন বছর। দু’জনের অনেক বছর ভিয়েনা শহরে কাটে। ভিয়েনার বিখ্যাত অপেরা হাউসগুলিতে সঙ্গীত রচনা করতেন দু’জনেই। মোৎজ়ার্ট মারা যাওয়ার পরের বছরে, অর্থাৎ, ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে বেঠোফেন ভিয়েনায় চলে আসেন।
কী কারণে মোৎজ়ার্ট এবং বেঠোফেন-এর মৃত্যু হয়েছিল? সাধারণ মানুষেরা জানতে উদ্গ্রীব হন স্বভাবতই। তখনকার দিনে মৃত্যু আসত তাড়াতাড়ি, তবু মোৎজ়ার্টের চলে-যাওয়াকে অকালপ্রয়াণই বলতে হবে। সেই প্রয়াণের পিছনে যে কারণগুলি জানা যায়, সেগুলি হল তীব্র বাতব্যাধি, ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং যকৃতের সমস্যা। মোৎজ়ার্ট-এর প্রেম হয়েছিল একাধিক মহিলার সঙ্গে, কিন্তু তিনি শেষে কনস্টানজ়-কে বিয়ে করেন। তাঁর গর্ভে মোৎজ়ার্ট-এর ছয় সন্তানের জন্ম হয়। আর বেঠোফেন-এর মৃত্যুর কী কারণ? তিনি অকৃতদার ছিলেন। গণিকা-সংসর্গের অভ্যাস ছিল তাঁর। সে জন্য অনেক দিন পর্যন্ত ধারণা ছিল, তাঁর সিফিলিস রোগ ছিল। ওই রোগেই তিনি মারা যান, এ রকম ধরে নেওয়া হয়েছিল। ২০০৫ সালে সে ধারণার পরিবর্তন ঘটে। কারণ, আমেরিকায় ইলিনয়ে কিছু বিজ্ঞানী বেঠোফেন-এর ডিএনএ পরীক্ষা করে প্রমাণ করেন, সিসার মতো ধাতু দেহে মিশে যাওয়ায় তাঁর মৃত্যু হয়। সম্প্রতি কারেন্ট বায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, বেঠোফেন-এর যকৃতের সমস্যা ছিল, সে কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। সুতরাং, সিসার কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছিল, এ তত্ত্ব এখন বাতিল। অথচ যিনি খুবই পরিমিত মদ্যপান করতেন, তাঁর যকৃত-সমস্যা হলই বা কী করে, সেও এক রহস্য।
২০০৫ সালে বেঠোফেন-এর চুলের ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়েছিল, ২০২৩ সালেও তাঁর চুলের ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর অগণিত ভক্ত দেহ থেকে মাথার ঘন কোঁকড়া চুলের অংশ কেটে কেটে নিয়ে রেখে দিয়েছিলেন, ব্যাপারটা বিরক্তিকর হলেও ২০০ বছর পর শেষে কাজেই লেগে গেল— কেননা ওই চুল থেকে দু’বার ডিএনএ পরীক্ষা করা গেল। কিন্তু কী আশ্চর্য, একই অঙ্গের দুই ডিএনএ পরীক্ষার ফল এল ভিন্ন। ভিন্ন ফলের কারণে বিজ্ঞানীদলের প্রশ্ন: ওই চুল বেঠোফেন-এর তো? মুশকিলের ব্যাপার হল, অকৃতদার হওয়ার জন্য বেঠোফেন-এর কোনও সন্তান নেই। তাঁর বংশেরও কেউ নেই। অগত্যা চুলের কায়দা দেখে শনাক্ত করা ছাড়া কোনও উপায় নেই। চুলের কায়দা দেখে মনে হয়, ওই চুল বেঠোফেন-এর সময়কার। কিন্তু যত ক্ষণ না প্রমাণ হচ্ছে ওই চুল বেঠোফেন-এর মাথার, তত ক্ষণ কিছু নিশ্চিত করে বলা যায় না। অনেকে আবার বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে ডিএনএ পরীক্ষা সম্পর্কেই সন্দেহ করেছেন। ডিএনএ পরীক্ষা তো বহুব্যবহৃত পদ্ধতি, ওঁর ক্ষেত্রে সেই পরীক্ষায় ভুল তথ্য পাওয়া গেল কেন? অনুমান করা হচ্ছে, ভুল হয়েছে কোথাও, ওই চুল ছিল এক মহিলার, বেঠোফেন-এর নয়। তাছাড়া রয়েছে আরও এক রহস্য: বেঠোফেন-এর শ্রবণশক্তিই বা কেন কম ছিল। জার্নাল তা নিয়ে কিছু বলেনি। বিজ্ঞানের এত চেষ্টার পরও বেঠোফেন-এর জীবন নিয়ে ধোঁয়া থেকেই গেল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy