E-Paper

ভোটের রক্ত

পশ্চিমবঙ্গে ইতিপূর্বে যে সব নির্বাচন রাজ্যবাসী দেখেছেন, তার অভিজ্ঞতার নিরিখে অবশ্য এই প্রশ্নগুলো তোলাই বাতুলতা বলে মনে হতে পারে।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২৪ ০৮:৫৭
Share
Save

পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন ফের কলঙ্কিত হল হত্যা, রক্তপাত, প্রকাশ্য সংঘর্ষে। প্রথম পাঁচটি পর্বে রাজনৈতিক হানাহানিতে প্রাণহানির কোনও ঘটনা সে ভাবে নজর না এলেও, ষষ্ঠ দফায় নন্দীগ্রাম ও মহিষাদলের এক বিজেপি সমর্থক এবং এক তৃণমূল কর্মীর হত্যাকাণ্ড ফের বোঝাল, হিংসায় এগিয়ে বাংলা। প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলির বেশ কিছু কর্মী ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জখম, অর্থাৎ নিহতের সংখ্যা আরও বাড়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিল। ভোটের আগে এবং নির্বাচনের দিন দফায়-দফায় সহিংস সংঘাত, বিরোধী প্রার্থীর হেনস্থা, মারমুখী জনতার সামনে নিরাপত্তা বাহিনীর পিছু হটা, এ সবই দেখা গেল মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে। যা ইঙ্গিত দিল, গোড়ার গলদ রয়ে গিয়েছে গোড়াতেই, নিরাপত্তার নানা স্তর নির্মাণ বাইরের আস্তরণ মাত্র। তা হলে সাত দফা ভোট, এক মাস আগে থেকে নিরাপত্তা কর্মীদের রাজ্যে এনে স্কুল ভবনে রাখা, নির্বাচন কমিশন এবং পুলিশ-প্রশাসনের এত দিন ধরে এত পরিকল্পনা, এ সবই কি ছিল ছেলেভুলানো খেলা? নন্দীগ্রামের সোনাচূড়ায় রাস্তার উপরে কুপিয়ে খুন করা হল রথিবালা আড়িকে। এই মধ্যবয়সি মহিলা গ্রামের অন্য বিজেপি সমর্থকদের সঙ্গে মনসাপুকুরে রাতে ‘পাহারা’ দিচ্ছিলেন। প্রশ্ন ওঠে, পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনী থাকতে কেন এলাকার মানুষকে পাহারা দিতে হয়? নির্বাচনের আগের রাতে দলীয় কাজ সেরে ফেরার পথে রাস্তার উপরে দুষ্কৃতী দল পিটিয়ে মারে তৃণমূল কর্মী শেখ মইবুলকে। রথিবালার ছেলে এবং মইবুলের ভাই অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচেছেন। এমন হামলা ঘটতে পারে, তার আগাম খবরই বা কেন ছিল না? কেন দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করে আগাম গ্রেফতার করেনি পুলিশ, ধারালো অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করেনি? কোথায় কখন সংঘর্ষ ঘটতে পারে, তার আগাম খবর ছিল না পুলিশ কিংবা নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষকদের কাছে, এ কি বিশ্বাসযোগ্য?

পশ্চিমবঙ্গে ইতিপূর্বে যে সব নির্বাচন রাজ্যবাসী দেখেছেন, তার অভিজ্ঞতার নিরিখে অবশ্য এই প্রশ্নগুলো তোলাই বাতুলতা বলে মনে হতে পারে। তবু, পঞ্চায়েত বা বিধানসভার চাইতে সাধারণ নির্বাচনে দৃঢ়তর হবে নিরাপত্তা, এমন আশা অনেকে করেছিলেন। দীর্ঘ প্রস্তুতি, বহু আশ্বাসের পরেও নির্বাচনের দিনে যে বিশৃঙ্খলা দেখা গেল, এবং তা নিয়ে প্রশ্ন তুললে যে ভাবে পুলিশ বা নির্বাচন কমিশন উত্তর এড়িয়ে গেল, তাতে গোটা ব্যবস্থাটার উদ্দেশ্য-বিধেয় নিয়েই ধন্দ জাগতে বাধ্য। রাজ্য পুলিশ পক্ষপাতদুষ্ট, কেন্দ্রীয় বাহিনী সেই সঙ্কট কিছুটা হলেও কাটাবে, প্রতি বারই এমন একটা প্রত্যাশার পরিমণ্ডল তৈরি করা হয়। কাজের বেলা দেখা যায়, মৌলিক বিধিনিয়মও অবাধে ভঙ্গ করা হচ্ছে, পুলিশ বা কেন্দ্রীয় বাহিনী তা রুখতে পারছে না। বুথের দু’শো মিটারের মধ্যে জমায়েত, প্রার্থীর রাস্তা আটকানো ও হেনস্থা, পোলিং এজেন্টদের মারধর, রাস্তার উপর দফায়-দফায় সংঘর্ষ, সবই চলেছে অবাধে। যেখানে নিরাপত্তা বাহিনী দেখা গিয়েছে, সেখানেও তা মারমুখী জনতাকে রুখে প্রার্থীদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

ভোটপ্রার্থী এবং দলীয় কর্মীরাই যেখানে বার বার আক্রমণের মুখে পড়ছেন, তখন সাধারণ ভোটদাতাদের নিরাপত্তা কতটুকু, তা আন্দাজ করা মোটেও কঠিন নয়। পশ্চিমবঙ্গ এখন এক এমন রাজ্য, যেখানে নিজের ভোট নিজে দিতে পারলেই নাগরিক নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে করেন। এই লাগামহীন হিংসা বস্তুত নির্বাচনকে এক বিকৃত, অসুস্থ প্রতিযোগিতার রূপ দিচ্ছে। কে আরও বেশি জনমত সংগঠিত করতে পারে, কাজ ও আচরণ দিয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারে, সে প্রশ্ন বদলে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে এই প্রশ্নে— কার হাতে কত দুর্বৃত্ত রয়েছে, কে এলাকায় কত তীব্র ভয়ের আবহ তৈরি করতে পারে। দুর্বৃত্ত কেনার টাকা জোগায় দুর্নীতি, আর দুর্নীতি তৈরি করে দুর্বৃত্ত— এই কুচক্র থেকে পশ্চিমবঙ্গের যেন মুক্তি নেই। ভয়হীন, হিংসাহীন নির্বাচন কেমন, পশ্চিমবঙ্গে বসে তা কল্পনা করাও কঠিন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Post Editorial Lok Sabha Election 2024

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

ক্যানসেল করতে পারবেন আপনার সুবিধামতো

Best Value
প্রতি বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
প্রতি মাসে

৪২৯

১৬৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।