Advertisement
E-Paper

ডিজিটাল দূরত্ব

ডিজিটাল পরিষেবার প্রসার হচ্ছে, কিন্তু পুরনো দূরত্বগুলি কিছুতেই ঘুচছে না। শতাংশ-বিন্দু দিয়ে হিসাব করলে শহর-গ্রাম, নারী-পুরুষে একই ফারাক থেকে যাচ্ছে বছরের পর বছর।

শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৫ ০৫:১০
Share
Save

ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারকারীদের সংখ্যায় ভারত বিশ্বে তৃতীয়, কিন্তু মাথাপিছু গড় ব্যবহারের নিরিখে তার স্থান নেমে গিয়ে দাঁড়ায় আটাশ-এ। এর মানে সহজ— বিপুল জনসংখ্যার কারণে, এবং মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট পরিষেবা দ্রুত ছড়িয়ে যাওয়ায় মোট ব্যবহারকারীর সংখ্যায় আমেরিকা এবং চিনের পরেই ভারত। কিন্তু যত ধরনের কাজের জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে, তার খুব সামান্যই কাজে লাগাচ্ছেন গড় ভারতীয়। আবার ফারাক থেকে যাচ্ছে শহর ও গ্রাম, পুরুষ ও নারীর ডিজিটাল সক্ষমতার মধ্যে। যেমন, শহরে ৭১ শতাংশ পুরুষ ও ৬২ শতাংশ নারী স্মার্ট ফোন ব্যবহার করেন, গ্রামে ৪৫ শতাংশ পুরুষ ও ৩০ শতাংশ নারী। বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যেও ডিজিটাল সংযুক্তিতে যথেষ্ট ব্যবধান থাকছে, পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ সংযুক্তির চিত্র আশাজনক নয়। ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর রিসার্চ অন ইন্টারন্যাশনাল ইকনমিক রিলেশনস’ সংস্থার প্রতিবেদনটি ফের কিছু প্রশ্ন তুলে দিল। ডিজিটাল প্রযুক্তি আশা জাগিয়েছিল যে, তার প্রসার প্রান্তিক, উপেক্ষিত মানুষদের সক্ষমতা বাড়াতে পারে, অর্থনীতি ও সামাজিক কার্যকলাপে তাদের সংযুক্তি বাড়াতে পারে। কিন্তু যত সময় গিয়েছে, তত দুশ্চিন্তা বেড়েছে ডিজিটাল প্রযুক্তির নাগাল ও ব্যবহারে ফারাক (ডিজিটাল ডিভাইড) নিয়ে। এই সমীক্ষাও ফের দেখাল যে, ডিজিটাল পরিষেবার প্রসার হচ্ছে, কিন্তু পুরনো দূরত্বগুলি কিছুতেই ঘুচছে না। শতাংশ-বিন্দু দিয়ে হিসাব করলে শহর-গ্রাম, নারী-পুরুষে একই ফারাক থেকে যাচ্ছে বছরের পর বছর।

ভারতে ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসার নিয়ে উৎসাহী শিল্পমহল— ভারতের বিশাল বাজারে সহজে প্রবেশ করার পথ ইন্টারনেটে বিপণন। ৪০ লক্ষ মানুষ অ্যাপ-এ খাবার আনিয়েছেন, এ তথ্য তাঁদের আগ্রহ উস্কে দেবে, এটাই স্বাভাবিক। সমীক্ষা দেখিয়েছে যে, ভারতের ডিজিটাল অর্থনীতি তার জিডিপি-র প্রায় ১২ শতাংশ ছিল ২০২৩ সালে। যুব সম্প্রদায় ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহী, তথ্যপ্রযুক্তি রফতানিতে ভারতের স্থান অত্যন্ত শক্তিশালী, মোবাইল-বাহিত ইন্টারনেট দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে, আধার, ইউপিআই, ডিজিলকারের মতো ডিজিটাল পরিকাঠামো নির্মাণ করায় ডিজিটাল লেনদেন সহজ হয়েছে। এই উজ্জ্বলতার পিছনেই রয়েছে এক ধূসর চিত্র— গত বছর ভারতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মাত্র ২৬ শতাংশ ডিজিটাল উপায়ে টাকার আদান-প্রদান করেছেন। কেবল ৪৩ শতাংশ সমাজমাধ্যম ব্যবহার করেছেন, ৪০ শতাংশ ইমেল করেছেন। গ্রামে বিদ্যুতের খুঁটি পুঁতলেই যেমন ধরা চলে না যে প্রতি ঘরে আলো জ্বলছে, তেমনই ইন্টারনেট সংযোগের সংখ্যা দেখলেই হবে না। তা কতটা কাজে লাগছে, তার পরিমাপও দরকার। মাথাপিছু ব্যবহারের নিরিখে ব্রাজ়িল, তাইল্যান্ড, মেক্সিকোর চেয়েও পিছিয়ে ভারত। যার অন্যতম কারণ, নিরাপত্তার অভাব। ভুয়ো পরিচয় দিয়ে প্রতারণা (ফিশিং) বা অন্যের পরিচয় ব্যবহার করে জালিয়াতির সংখ্যা সর্বাধিক। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের একটি রিপোর্ট অনুসারে, তথ্য চুরির জন্য (ডেটা ব্রিচ) আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২০২০-২৩ সালের মধ্যে ২৮ শতাংশ বেড়েছে। এ বিষয়ে বিশ্বেও ভারতের স্থান উদ্বেগজনক।

মনে রাখতে হবে তাঁদের, যাঁরা রয়ে গিয়েছেন নেট-দুনিয়ার বাইরে। ইন্টারনেট এবং স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের সংখ্যার নিরিখে ভারত বিশ্বে দ্বিতীয়, কিন্তু ভারতের ৪০ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না, অর্ধেকেরও বেশি মানুষের স্মার্ট ফোন নেই। দরিদ্র, প্রান্তিক, প্রবীণ এই মানুষগুলির সমাজ-বিচ্ছিন্নতা আরও প্রগাঢ় হচ্ছে ডিজিটাল দুনিয়ায় তাঁদের প্রবেশের পথ রুদ্ধ, বা অতি-সঙ্কীর্ণ হওয়ার জন্য। এক দিকে যেমন তাঁদের ডিজিটাল সাক্ষরতা তৈরি করা দরকার, স্মার্টফোন ও নেটসংযোগ সুলভ করা দরকার, অন্য দিকে অফলাইন পরিষেবাও চালু রাখা দরকার। নয়া প্রযুক্তির উত্তেজনায় সামাজিক ন্যায়কে অবজ্ঞা করা চলে না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

internet Digital Technology

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}