Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Mathematics

আতঙ্কের অবসান

বুরুনের ভাগ্যে তবু নিধিরাম নামক উপকারী ভূত জুটে গিয়েছিল, যে বুরুনের থেকে খানিক ভীতি আদায় করার জন্য করালীবাবুর দেওয়া বিদঘুটে সব অঙ্ক কষে দিত কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে।

শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৭:৫৬
Share: Save:

অঙ্কে তেরো পেয়েছিল বলেই শেষ পর্যন্ত হাবু ওস্তাদের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিল বুরুন, সে কথা অস্বীকার করা যাবে না। তবে, অঙ্কে তেরো পেয়ে তাকে নাজেহালও কম হতে হয়নি। বুরুনের ভাগ্যে তবু নিধিরাম নামক উপকারী ভূত জুটে গিয়েছিল, যে বুরুনের থেকে খানিক ভীতি আদায় করার জন্য করালীবাবুর দেওয়া বিদঘুটে সব অঙ্ক কষে দিত কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে। তেমন ভৌতিক ভাগ্য আর ক’জনেরই বা হয়? ফলে, অঙ্কের হাতে নাকানিচোবানি খেতে খেতেই অনেক ছাত্রছাত্রী স্কুলের চৌকাঠ পার হয়; কেউ কেউ আবার অঙ্কে হোঁচট খেয়েই ছিটকে যায় লেখাপড়ার চৌহদ্দি থেকে। ও দিকে ‘আকাশে, বাতাসে, জ্যোৎস্নায় বা অন্ধকারে সর্বত্রই অঙ্কের প্রভাব’। অঙ্ক না-শিখলে উচ্চশিক্ষার অনেক দরজাই আজকাল খোলে না। পদার্থবিদ্যা বা অর্থশাস্ত্রের মতো চিরকালীন গণিতনির্ভর বিষয়ই শুধু নয়, এক কালে অঙ্কে দুর্বল ছেলেমেয়েদের নিরাপদ আশ্রয় ছিল যে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বা সমাজতত্ত্বের মতো বিষয়, সেগুলোও এখন ক্রমে অঙ্কের পথে হাঁটছে। তবে, সব বিষয়ের জন্য অঙ্কে সমান জ্ঞান বা দক্ষতার প্রয়োজন পড়ছে না।

এত দিন অবধি এখানেই একটি জট পাকিয়ে ছিল— যার যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকু অঙ্ক শিখে নেওয়ার উপায় পাঠ্যক্রমে ছিল না। হয় কমপ্লেক্স নাম্বার-ডিফারেন্‌শিয়াল ক্যালকুলাস-হাইপারবোলা ইত্যাদি বিপদসঙ্কুল পথ পার হয়ে শিখতে হয় থিয়োরি অব রিলেটিভিটির সঙ্গে অ্যাকোয়া টাইকোটিস যোগ করলে কী হয়; নচেৎ অঙ্কের চরণকমলে শতকোটি নমস্কার জানিয়ে মানে-মানে অন্য পাড়া দিয়ে যাতায়াত করার অভ্যাস করতে হয়। এত দিনে পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ একটি পথ ভেবেছে— যাতে যার যতটুকু চাই, ততটুকুই গণিতশিক্ষা সম্ভব হয়। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে কলাবিভাগের যে ছাত্রছাত্রী অঙ্ক পড়তে চায়, তাদের জন্য থাকবে ‘বেসিক ম্যাথমেটিক্স’; বাণিজ্য বিভাগের পড়ুয়াদের জন্য ‘কমার্শিয়াল ম্যাথমেটিক্স’; এবং বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রছাত্রীর জন্য চিরাচরিত ‘পিয়র ম্যাথমেটিক্স’। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদসূত্রে খবর যে, হয়তো আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই পাঠ্যক্রমে এই ব্যবস্থা চালু হয়ে যাবে।

সত্যিই যদি হয়, তবে বহু ছাত্রছাত্রীর অশেষ উপকার হবে। বস্তুত, আরও এক ধাপ এগিয়ে— বা, পিছিয়ে— ভাবারও অবকাশ রয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক নয়, মাধ্যমিক স্তরেই গণিতের পাঠ্যক্রমের এই বিভাজন সম্ভব কি না, তা ভেবে দেখা যেতে পারে। সিবিএসই বোর্ডে ইতিমধ্যেই নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্যক্রমে দু’ধরনের গণিত শিক্ষার ব্যবস্থা হয়েছে— একটি সেই ছাত্রছাত্রীদের জন্য, যারা ভবিষ্যতে গণিতনির্ভর বিজ্ঞানের উচ্চশিক্ষার পথে হাঁটবে; অন্যটি তাদের জন্য, যাদের কাজ চালানোর জন্য গণিতের প্রাথমিক জ্ঞান অর্জনই যথেষ্ট। ভবিষ্যতে যে সমাজতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করবে, ঝড়ে একটি গাছ সাড়ে বাইশ ডিগ্রি কোণে ভেঙে পড়লে তার উচ্চতা কত ছিল, সে হিসাব কষতে না জানলেও তার সমস্যা হওয়ার কথা নয়। বরং, রাশিবিজ্ঞানের প্রাথমিক জ্ঞান তার পক্ষে অনেক বেশি জরুরি। উচ্চশিক্ষার প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে মাধ্যমিক স্তরের গণিতের পাঠ্যক্রম পুনর্মূল্যায়ন করলে তা এক দিকে ছাত্রছাত্রীদের অহেতুক পাঠের বোঝা থেকে নিষ্কৃতি দেবে, এবং অন্য দিকে তাদের উচ্চশিক্ষার জন্য অনেক বেশি প্রস্তুত করে তুলবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Math HS West Bengal Council of Higher Secondary Education CBSE
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy