—প্রতীকী ছবি।
এই নির্বাচন উপলক্ষে প্রকাশিত বিভিন্ন দলের ইস্তাহার পড়লে মনে হতে বাধ্য যে, একেই বলে বৈচিত্রের মধ্যে একতা। কোনও দল সোজাসুজি, আর কোনও দল ইনিয়েবিনিয়ে শেষ পর্যন্ত একই কথা বলল— ক্ষমতায় এলে আমরা জনতাকে ‘পাইয়ে দেব’। কেউ দেবে প্রতি মাসে কয়েক কেজি চাল, কেউ দেবে মাটি কাটার কাজের নিশ্চয়তা, কেউ দেবে আরও কিছু। কিন্তু, প্রতিটি ইস্তাহারেই এই বিশ্বাস স্পষ্ট যে, অর্থব্যবস্থার স্বাস্থ্য এমনই হয়েছে যাতে রাষ্ট্রীয় সাহায্য ছাড়া সাধারণ মানুষের পক্ষে বেঁচে থাকা অসম্ভব। আপৎকালীন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র তার সর্বশক্তিতে নাগরিককে রক্ষা করবে, তাঁর জীবনের অধিকার বজার রাখবে, এমনই কাম্য। অর্থাৎ, পরিস্থিতির কারণে নাগরিক যখন নিজের প্রাথমিক প্রয়োজনগুলিও মেটাতে অক্ষম, তখন রাষ্ট্র সেই দায়িত্ব নেবে। কিন্তু, রং এবং আদর্শগত অবস্থান নির্বিশেষে রাজনৈতিক দলগুলি সেই আপৎকালীন পরিস্থিতিকেই ‘স্বাভাবিক অবস্থা’ বলে বিবেচনা করলে মুশকিল। এক অর্থে ইস্তাহারগুলি জানাচ্ছে যে, অনতিদীর্ঘ মেয়াদে ভারতীয় অর্থব্যবস্থায় সুদিন আসবে, এমন বিশ্বাস কোনও দলেরই নেই। ফলে, দলগুলি নিশ্চিত, সাধারণ মানুষকে নির্ভর করতে হবে সরকারি সাহায্যের উপরেই। যে দল এই সাহায্যকে ‘রেউড়ি’ বলে, যে দল একে ‘আইনি অধিকার’-এর তকমা দেয়; যে দল এই রাষ্ট্রীয় সহায়তাকে তাদের উন্নয়নের মূল মডেল বলে বিবেচনা করে আর যে দল এই সাহায্যকে ‘ভিক্ষা’ বলে ব্যঙ্গ করে আরও বেশি জনসমর্থন হারায়, প্রতিটি দলই শেষ অবধি এই রাষ্ট্রীয় প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তরের নীতিতে এসে মিশে যায়।
এই দুর্দশা থেকে সাধারণ মানুষকে উদ্ধার করার একটিই পথ, তার নাম কর্মসংস্থান। সাধারণ মানুষের আর্থিক সক্ষমতার ব্যবস্থা হতে পারে কেবলমাত্র কাজের বাজারেই। বিরোধীরা বেকারত্বের কথা বলে সরকারকে আক্রমণ করছেন; প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের ফিরিস্তি শুনিয়ে বলছেন, কর্মসংস্থান ছাড়া কি এত কাজ হয়? কিন্তু, কোনও পক্ষই মূল প্রশ্নটির ধারেকাছেও যাচ্ছে না। কংগ্রেস জানিয়েছে যে, তারা ক্ষমতায় এলে শ্রমিকস্বার্থ-বিরোধী নতুন শ্রমবিধি পুনর্বিবেচনা করা হবে; বামপন্থী দল জানিয়েছে, তারা সবাইকে কাজের অধিকার দেবে। কিন্তু, কোনও দলই যে কথাটি স্বীকার করতে রাজি নয়, তা হল, শ্রমের বাজারের এই সঙ্কট অধিকারের অভাবের কারণেও নয়, শ্রমবিধির ‘শ্রমিকস্বার্থ-বিরোধী’ চরিত্রের কারণেও নয়। বাজারের সঙ্কটের মূল কারণ, যথাযথ গুণগত মানের যথেষ্ট কাজ তৈরি হচ্ছে না। বেকারত্বের পরিসংখ্যান এবং পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভে থেকে স্পষ্ট, পাকা মাইনের চাকরি তো বটেই, যথেষ্ট পরিমাণে ঠিকা কাজও তৈরি হচ্ছে না। কাজই যদি না থাকে, তা হলে সেই কাজের অধিকারের কোনও অর্থ থাকে কি?
একশো দিনের কাজের প্রকল্পের গুরুত্ব অনস্বীকার্য; সেই প্রকল্পে মজুরির হার বাড়ানোও জরুরি। কিন্তু, তাকে যদি ভারতের শ্রম বাজারের সঙ্কট মেটানোর একমেবাদ্বিতীয়ম্ পন্থা হিসাবে বিবেচনা করা হয়, তা হলে মুশকিল। শ্রম বাজারের সমস্যার সমাধান সরকারি কর্মসংস্থানের মাধ্যমেও হতে পারে না— প্রধানমন্ত্রীর ‘রোজগার মেলা’ নামক কুনাট্যটি যে কারণে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য ছিল। এক দিকে গুরুত্ব দিতে হবে বেসরকারি ক্ষেত্রে অধিকতর কর্মসংস্থানের দিকে। তার জন্য বাজারের চাহিদা এবং অর্থব্যবস্থার স্বাস্থ্যের কথা যেমন বিবেচনা করতে হবে, তেমনই কর্মসংস্থানকে গুরুত্ব দিতে কিছু প্রণোদনার কথাও ভাবা যেতে পারে। অন্য দিকে, ভারতের শ্রমশক্তি যাতে বিশ্বমানের উৎপাদন ব্যবস্থার যোগ্য হয়ে উঠতে পারে, সে দিকেও জোর দিতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে দক্ষতাভিত্তিক পেশাদারি প্রশিক্ষণ, গুরুত্ব দিতে হবে সব দিকেই। এত বড় করে ভাবার চেয়ে কয়েক কেজি চালের ব্যবস্থা করা সহজ— সম্ভবত সব দলই তাই সেই সহজ পথে হেঁটেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy