রাতের শেষ মেট্রোর ভাড়ার উপরে ১০ টাকা সারচার্জ বসানোর ‘প্রস্তাব’ অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত রাখা হল। ১০ টাকা ভাড়া বাড়লে অনেকেরই অসুবিধা হয়, সত্য— কিন্তু, এই সারচার্জ নিয়ে যে জনরোষ তৈরি হয়েছিল, তার মূল কারণ সেই বাড়তি খরচ কি না, সে প্রশ্ন করা প্রয়োজন। রাত গড়ালেই মেট্রোয় দু’টি ট্রেনের মধ্যে সময়ের ব্যবধান বাড়ে, মাঝেমধ্যে বাতিলও হয়ে যায় ট্রেন। এবং, সবচেয়ে বড় কথা, দশটা বাজতে না-বাজতেই ঝাঁপ পড়ে যায় বলে অনেককেই পড়িমরি ছুটতে হয়ে শেষ ট্রেনটি ধরার জন্য। এই যদি পরিষেবার হাল হয়, তবে তার জন্য ভাড়ার উপরে সারচার্জ দিতে মানুষের আপত্তি না-থাকাই সম্ভবত অস্বাভাবিক। কলকাতা তো গণ্ডগ্রাম নয়, মহানগর। সেখানে অনেকেই রাত দশটার পরেও বাড়ি ফেরেন। মেট্রো পরিষেবা মধ্যরাত্রি বা অন্তত এগারোটা অবধি চালু থাকলে তাঁরা উপকৃত হবেন। এ কথা ঠিক যে, অত রাতে উপচে-পড়া ভিড় হবে না ট্রেনে। কিন্তু, ভাড়ার উপরে সারচার্জ আদায় করা হলে তাতে লোকসানও কমবে। আশা করা যায় যে, সেই সারচার্জ দিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই বিশেষ আপত্তি করবেন না।
কেবলমাত্র বেশি রাতের ট্রেনেই নয়, সারচার্জ আদায় করা চলে অফিসবেলার ব্যস্ত সময়েও। অথবা, সারচার্জের কথা বললে যদি মানুষ রুষ্ট হন, তবে উল্টোটাও করা যেতে পারে— মেট্রোর ভাড়া বাড়ানো হোক যথেষ্ট পরিমাণে, এবং দিনের কিছু সময়, যেমন সকাল ন’টার আগে পর্যন্ত বা দুপুর বারোটা থেকে সাড়ে চারটে, সেই ভাড়ার উপরে ডিসকাউন্ট বা ছাড় দেওয়া হোক। মোট কথা, দিনের সব সময় ট্রেনের ভাড়া সমান হতেই হবে, এই বাধ্যবাধকতা থেকে সরে আসা প্রয়োজন। বিশ্বের প্রায় সব আধুনিক শহরেই ব্যস্ততার সময়ে গণপরিবহণে এক রকম ভাড়া, ফাঁকা সময়ে অন্য রকম। কলকাতাবাসীরাও এতে বিলক্ষণ অভ্যস্ত— মোবাইল ফোন-নির্ভর অ্যাপ ক্যাব পরিষেবায় একই দূরত্বের জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাড়া দেওয়ার অভিজ্ঞতা প্রায় সকলেরই আছে। কাজেই, মেট্রোর ক্ষেত্রেও এই নিয়মের ব্যতিক্রম হওয়ার কোনও কারণ নেই। বস্তুত, অতি-ব্যস্ত সময়ে ভাড়া যথেষ্ট পরিমাণ বাড়লে ট্রেনে ভিড়ও খানিক কমতে পারে। যাঁরা বেশি ভাড়া দিতে নারাজ, তাঁরা অন্য সময়ে যাতায়াত করবেন। এবং, যাঁরা বেশি ভাড়া দিতে ইচ্ছুক, তাঁদের জন্য খানিক স্বাচ্ছন্দ্যেরও ব্যবস্থা করা যাবে। বাজারের অদৃশ্য হাত এ ভাবেই সম্পদের কুশলী বণ্টন করে।
এ কথা অনস্বীকার্য যে, কলকাতার মেট্রো রেল অসম্ভব রকম সস্তা। এখানে এখনও পাঁচ টাকায় টিকিট কাটা সম্ভব। তার ফলে পরিবহণটি পকেটবান্ধব হয়েছে বটে, কিন্তু তা ক্রমে এই ব্যবস্থার ধ্বংসেরও কারণ হয়ে উঠছে। এত কম ভাড়ায় লাভজনক ভাবে মেট্রো চালানো মুশকিল। এবং, যথেষ্ট লাভ না হলে তার আধুনিকীকরণের পথেও বাধা আসে। সাম্প্রতিক কালে মূলত বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মেট্রোয় টিকিট-বহির্ভূত আয়ের পরিমাণ অনেকখানি বেড়েছে। কিন্তু, সেই বৃদ্ধির একটি স্বাভাবিক সীমা রয়েছে। মেট্রোর ভাড়া বাড়ুক, গোটা ব্যবস্থাটির আধুনিকীকরণ হোক, এবং যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্যের প্রশ্নটিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হোক। কলকাতার মেট্রো এক সময় গোটা দেশের গর্ব ছিল। শহরের স্বার্থেই সেই অহঙ্কার পুনরুদ্ধার করা প্রয়োজন। কলকাতার জীবনরেখাকে নতুন জীবনের হদিস দেওয়া জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy