Advertisement
৩০ জানুয়ারি ২০২৫
Janardan Choudhary

নিরপেক্ষ

জনার্দন চৌধরী অবশ্য জানিয়েছেন, অক্টোবরের বৈঠকে যখন আদানি গোষ্ঠীর প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল, তিনি তখন নিজেকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন।

শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৩ ০৪:৪৮
Share: Save:

পরিবেশ মন্ত্রকের জলসম্পদ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ কমিটিতে অপ্রাতিষ্ঠানিক সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হলেন জনার্দন চৌধরি, সেপ্টেম্বর মাসের শেষে। শ্রীচৌধরি আদানি গ্রিন এনার্জি লিমিটেড-এর পরামর্শদাতাও বটে। অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে পুনর্গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রথম বৈঠকেই আলোচনা হল মহারাষ্ট্রের সাতারা জেলায় আদানি গ্রিন এনার্জির একটি প্রকল্প বিষয়ে— সংস্থাটি সেই প্রকল্পের ‘টার্মস অব রেফারেন্স’-এ সংশোধনীর দাবি জানিয়েছিল। স্মর্তব্য যে, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদন ক্ষেত্রে আদানি গ্রিন এনার্জি লিমিটেড ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক সংস্থা। বিশেষজ্ঞ কমিটির বিবেচনার জন্য রয়েছে সংস্থার আরও অনেকগুলি প্রকল্প, যেমন অন্ধ্রপ্রদেশের রাইওয়াড়া ও পেড়াকোটায় যথাক্রমে ৮৫০ ও ১৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্প, মহারাষ্ট্রের পটগাঁও, কোয়না-নিভাকানে ও মালশেজ ঘাট বারন্দে-র যথাক্রমে ২১০০, ২৪৫০ ও ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্প। আরও ৩.৭ গিগাওয়াট আয়তনের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থার, মোট বিনিয়োগের পরিমাণ সাড়ে সতেরো হাজার কোটি টাকারও বেশি। প্রতিটি প্রকল্পের জন্যই ১৯৮৬ সালের এনভায়রনমেন্ট (প্রোটেকশন) অ্যাক্ট-এর অধীনে জারি হওয়া ২০০৬ সালের এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট বিধি অনুসারে পরিবেশ দফতরের বিশেষজ্ঞ কমিটির ছাড়পত্র প্রয়োজন। এমন পরিস্থিতিতে, এবং এমন সময়ে পরিবেশ দফতরের পুনর্গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটিতে আদানি গোষ্ঠীর পরামর্শদাতার অন্তর্ভুক্তিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একটি উদ্ধৃতি স্মরণে আসা বিচিত্র নয়— ‘আপ ক্রোনোলজি সমঝিয়ে’।

জনার্দন চৌধরী অবশ্য জানিয়েছেন, অক্টোবরের বৈঠকে যখন আদানি গোষ্ঠীর প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল, তিনি তখন নিজেকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত অন্য এক সদস্যের থেকে সেই কথার সমর্থনও পাওয়া গিয়েছে। তর্কের খাতিরে কেউ ধরে নিতে পারেন যে, শ্রীচৌধরির ব্যক্তিগত নৈতিকতার বোধ প্রশ্নাতীত— তিনি যে সংস্থার বেতনভুক পরামর্শদাতা, মন্ত্রকের বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য হিসাবে তিনি কোনও অবস্থাতেই সেই সংস্থার কোলে ঝোল টানার চেষ্টা করবেন না। কিন্তু, তাঁর ব্যক্তিগত নীতিবোধের উপর ভরসা রাখা তো বিশেষজ্ঞ কমিটির নিরপেক্ষতা বজায় রাখার পন্থা হতে পারে না। এ কথা বিশ্বাস করা মুশকিল যে, একটি বিশেষ গোষ্ঠীর বেতনভুক পরামর্শদাতাকে বাদ রাখলে দেশে যথেষ্টসংখ্যক বিশেষজ্ঞ নেই, ফলে কমিটি গঠনের পক্ষে তিনি অপরিহার্য ছিলেন। আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদন ক্ষেত্রে আদানি গোষ্ঠীর ব্যবসায়িক স্বার্থ— কোনওটিই সরকারের অজানা নয়। ফলে, যে কমিটির সম্মতির উপরে আদানি গোষ্ঠীর সাড়ে সতেরো হাজার কোটি টাকার লগ্নি পরিকল্পনা নির্ভরশীল, সেই কমিটিতেই শ্রীচৌধরির অন্তর্ভুক্তি নিয়ে কেউ বিস্মিত হলে তাঁকে দোষ দেওয়া মুশকিল।

দুর্জনে অবশ্য বলবে, এতে বিস্ময়ের তিলমাত্র কারণ নেই। গত দশ বছরে আদানি গোষ্ঠীর যে আর্থিক বৃদ্ধি ঘটেছে, গোটা দুনিয়ায় তার তুলনা মেলা ভার। ভারতে কেন্দ্রীয় সরকার এই গোষ্ঠীকে কার্যত একক সহযোগী বেসরকারি সংস্থার মর্যাদা দিয়েছে; বহু সরকারি ঘোষণা বিশ্লেষণ করলেই দেখা যাবে যে, তাতে সর্বাধিক লাভের সম্ভাবনা এই গোষ্ঠীরই। হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টের কথাটিও স্মরণে রাখা বিধেয়। দুর্জনের কথায় গুরুত্ব দেওয়ার দরকার নেই। প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত গৌতম আদানিকে বর্তমান সরকার অন্যায্য সুবিধা পাইয়ে দিচ্ছে, অকাট্য প্রমাণ ব্যতিরেকে এমন দাবি করারও প্রশ্ন নেই। কিন্তু, নিরপেক্ষতা বজায় রাখার, এবং জনসমক্ষে তার প্রমাণ পেশ করার দায়িত্ব সরকারের উপরও বর্তায় বটে। বিশেষজ্ঞ কমিটিতে জনার্দন চৌধরির অন্তর্ভুক্তি তার উল্টো দিকে সাক্ষ্য দিচ্ছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Adani
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy