Advertisement
E-Paper

ক্ষুধার মহামারি?

সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা দেখিয়ে দিয়েছে যে, বাজারে আগুন লাগলে তার থেকে রক্ষা পাওয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য বেশির ভাগ ভারতবাসীরই নেই।

Vegetables

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৩ ০৭:৩৭
Share
Save

টমেটো বা ক্যাপসিকাম নাহয় বাদই দেওয়া যায় রান্না থেকে। তেমন বুঝলে নাহয় ছেঁটে ফেলা যায় কাঁচা লঙ্কাও। কিন্তু, চালের দামও যদি লাগামহীন ছুটতে থাকে, তা হলে সাধারণ মানুষ যায় কোথায়? খাদ্যপণ্যের সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধি গভীর উদ্বেগের কারণ হয়েছে। বিশেষজ্ঞ মহলে আশঙ্কা, খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার ফের ছয় শতাংশের সীমা ছাড়াতে চলেছে। মে মাসে খুচরো পণ্যে মূল্যবৃদ্ধির হার যেখানে ৪.২৫ শতাংশে নেমে এসেছিল, জুন মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪.৮১ শতাংশে। অর্থাৎ, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক কঠোর মুদ্রানীতির পথ থেকে সরতে পারে বলে যে আশা তৈরি হচ্ছিল, তার বাস্তবায়নের সম্ভাবনা ক্ষীণতর হল। তার প্রভাব পড়বে সামগ্রিক অর্থব্যবস্থার উপরেই। এমনিতেই রফতানির পরিমাণ তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে দাঁড়িয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারের আর্থিক শ্লথতা সেই পথে ভারতীয় অর্থব্যবস্থায় প্রবেশ করছে। এই অবস্থায় কঠোর মুদ্রানীতির ফলে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিমাণ সঙ্কুচিত হলে তা দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের বৃদ্ধির হারকে নিম্নমুখী করবে। লক্ষণীয় যে, উন্নয়নশীল অর্থব্যবস্থাগুলির মধ্যে দ্রুততম-র শিরোপা ভারত ইতিমধ্যেই হারিয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এবং পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ, যেমন ভিয়েতনাম বা ফিলিপিনস রফতানির ক্ষেত্রে ভারতকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ফের লাগামছাড়া হলে তা ভারতের পক্ষে সুসংবাদ হবে না।

কিন্তু, প্রশ্ন শুধু অর্থব্যবস্থার স্বার্থের নয়, প্রশ্ন সাধারণ মানুষের খাওয়াপরারও। সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা দেখিয়ে দিয়েছে যে, বাজারে আগুন লাগলে তার থেকে রক্ষা পাওয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য বেশির ভাগ ভারতবাসীরই নেই। তার সবচেয়ে বড় কারণ, কোভিড-১৯’জনিত আর্থিক ধাক্কা থেকে ভারতের পুনরুত্থান অত্যন্ত অসম ভঙ্গিতে হয়েছে। দেশের কর্তারা যতই ঘুরে দাঁড়ানোর কথা বলুন, পরিসংখ্যান বলছে যে, দেশের সিংহভাগ মানুষেরই প্রকৃত আয় এখনও অতিমারি-পূর্ব স্তরে ফেরেনি। কর্মসংস্থানের ছবিটিও অত্যন্ত মলিন। বিশ্ব অর্থনীতির ছবিটিও একই রকম। রাশিয়া ব্ল্যাক সি গ্রেন ইনিশিয়েটিভ থেকে সরে এসেছে, ইউক্রেন থেকে রফতানির বিরুদ্ধে আগ্রাসী অবস্থান নিয়েছে। তার ফলে বিশ্ব বাজারে গমের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে তো বটেই, তৈরি হয়েছে জোগানে ভয়াবহ ঘাটতির আশঙ্কা। গত দেড় বছর এই যুদ্ধ গোটা দুনিয়ার খাদ্যপণ্যের বাজারকে ত্রস্ত করেছে। আন্তর্জাতিক স্তরে মূল্যবৃদ্ধির প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে সব দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে— ভারতও তার ব্যতিক্রম নয়। গত কয়েক বছরের ধাক্কায় সাধারণ মানুষ বিপর্যস্ত, নতুন করে মূল্যবৃদ্ধির বোঝা বইবার সামর্থ্য তাঁদের নেই। অতএব, দেশের বাজারে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রশ্নটিকে ছোট বা সাময়িক সমস্যা হিসাবে দেখা চলে না। তার জন্য আপৎকালীন এবং দীর্ঘমেয়াদি, উভয় গোত্রের ব্যবস্থাই চাই। সরকারকে বুঝতে হবে যে, ভারত একটি ক্ষুধার মহামারির সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

সবচেয়ে বড় এবং দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাটির নাম জলবায়ু পরিবর্তন। এত দিনে স্পষ্ট যে, জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়ঙ্কর প্রভাব কৃষিক্ষেত্রে পড়তে শুরু করেছে। এই বর্ষাতেও কিছু জায়গায় অতিবৃষ্টি চলছে, অন্যত্র পর্যাপ্ত বৃষ্টির দেখা নেই। দুই ক্ষেত্রেই ক্ষতি হচ্ছে ফসল উৎপাদনের। এ বছরই গম ওঠার আগে অকালবর্ষণে ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছিল। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে যে পদক্ষেপ করার, সরকারকে তা অবশ্যই করতে হবে। কিন্তু তার সুফল যদি আদৌ মেলে, তা মিলবে দীর্ঘমেয়াদে। তার আগে ভাবতে হবে, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে কৃষিকে কী ভাবে খাপ খাইয়ে নেওয়া যায়— যাকে অ্যাডাপ্টেশন স্ট্র্যাটেজি বলা হয়ে থাকে। সেই আলোচনা আরম্ভ হয়েছে, কিন্তু সরকারি নীতিতে তার কোনও প্রভাব এখনও পড়েনি। হাতে যে বেশি সময় নেই, এই কথাটা মনে রাখা প্রয়োজন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Food Price Inflation

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}