Advertisement
E-Paper

আধিপত্যের শিক্ষা

কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান প্রশ্ন তুলেছেন, নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে নানা মহল থেকে এত আপত্তি কেন?

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২২ ০৪:৩৯
Share
Save

কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান প্রশ্ন তুলেছেন, নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে নানা মহল থেকে এত আপত্তি কেন? নতুন নীতি বলে কথা, তাতে কত ভাল হবে, মাতৃভাষায় লেখাপড়ার প্রসার ঘটবে, ছেলেমেয়েদের দক্ষতা বাড়বে, তারা কাজের সুযোগ পাবে, রাজ্যের সরকার কি তা চায় না? প্রতিবাদী শিক্ষক সংগঠন বা অন্য যারা বিরোধিতা করছে তারাও কি চায় না? ব্যাপারটা কী? তাঁর প্রশ্নে যেন মিশে আছে কিছু বিস্ময়, কিছু ক্ষোভও। পশ্চিমবঙ্গের লোকেরা নিজেদের ভাল চায় না, তাই বিস্ময়; কেন্দ্র যা করে এই রাজ্য তাতেই বাদ সাধে, তাই ক্ষোভ। বুঝতে অসুবিধা হয় না, এ নিয়ে তিনি বা তাঁরা, মানে কেন্দ্রীয় সরকার তথা শাসক দলের কর্তাদের মনে একটা অসন্তোষ এবং বিরক্তি পোষা আছে, কলকাতা সফরে এসে সেই মনোভাবটি মন্ত্রিবর জানিয়ে দিয়ে গেলেন। ‘বেয়াড়া পশ্চিমবঙ্গ’ সম্পর্কে ভালমন্দ দু’কথা বলে যাওয়ার জন্য হয়তো বড়কর্তাদের কাছে তাঁর কিছু নম্বর বাড়বে।

শিক্ষামন্ত্রী স্থূলে ভুল করছেন। করারই কথা, কারণ যে প্রশ্ন তিনি তুলেছেন তার ঠিক উত্তরটা তাঁকে শেখানো হয়নি, সেই উত্তরে পৌঁছতে গেলে যে ভাবে ভাবতে হয়, সেই ভাবনা তিনি বা তাঁর বড়কর্তারা ভাবেননি। তাঁরা নিরঙ্কুশ আধিপত্য ছাড়া কিছু বোঝেন না। তাই এই সহজ এবং মৌলিক সত্যটা তাঁরা জানেন না যে, জাতীয় শিক্ষানীতি বস্তুটাই একটা আধিপত্যবাদের প্রকরণ। রাজ্যের উপর কেন্দ্রের আধিপত্য। মন্ত্রিমশাই শিক্ষানীতির গুণ গেয়েছেন। গাইতেই পারেন। এই নীতির নানা দিক, নানা নির্দেশ। তাদের কিছু ভাল, কিছু ভাল নয়। কিন্তু সেটা পরের কথা। প্রথম কথা হল, শিক্ষার নীতি কী হবে, কী ভাবে সেই নীতির রূপায়ণ হবে, সেটা কেন্দ্রীয় সরকার ঠিক করবে কেন? শিক্ষার ব্যাপারটা যত দূর সম্ভব শিক্ষক ও শিক্ষাবিদদের হাতে ছেড়ে দেওয়া বিধেয়। সমন্বয় বা সামগ্রিক তদারকির প্রয়োজনে এই বিষয়ে সরকারি স্তরে যেটুকু যা করার, সেটা একেবারেই রাজ্য স্তরে করণীয়। সেটাই যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার স্বাভাবিক নীতি। পশ্চিমবঙ্গ বা তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যে জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে যে অসন্তোষ ও আপত্তি, তার মূল কারণ এটাই।

শিক্ষামন্ত্রী বা তাঁর সহমর্মীরা বলতে পারেন, ভারতীয় সংবিধানে শিক্ষা রাজ্য তালিকায় নেই, আছে যুগ্ম তালিকায়, তা হলে কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতি রচনা এবং রাজ্যগুলোকে তা মানতে বলার মধ্যে দোষের কী আছে? আইনের হিসাবে কোনও দোষ নেই। কিন্তু আইনের প্রশ্ন এখানে হচ্ছে না, প্রশ্নটা নৈতিকতার। যুক্তরাষ্ট্রীয় নৈতিকতা। এটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ যে, শিক্ষা সংবিধানের রাজ্য তালিকাতেই ছিল, জরুরি অবস্থার সময় তাকে যুগ্ম তালিকায় ঠাঁইনাড়া করা হয়। এটা ছিল, স্পষ্টতই, কেন্দ্রীয় আধিপত্য বাড়ানোর একটা উদ্যোগ। লক্ষণীয়, পরবর্তী কালে কোনও সরকারই এই উদ্যোগ প্রত্যাহার করেনি, বরং এটিকে রাজ্যের উপর কেন্দ্রের ক্ষমতা চাপিয়ে দেওয়ার প্রকরণ হিসাবে কাজে লাগিয়েছে— এর আগের জাতীয় শিক্ষানীতি রচিত হয়েছিল ১৯৮৬ সালে, রাজীব গান্ধীর জমানায়। সেই যুক্তরাষ্ট্র-বিরোধী কেন্দ্রমুখী আধিপত্যবাদ সমানে চলছে বললে কম বলা হবে, মোদী জমানায় তাকে আরও অনেক জোরদার রূপ দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ আপত্তি করছে, তামিলনাড়ু তো করছেই। তামিলনাড়ু এক বছরের মধ্যে তার নিজস্ব শিক্ষানীতি ঘোষণা করবে, এই বক্তব্য জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। তবে উল্লেখযোগ্য যে, এমন কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া অধিকাংশ রাজ্যই এই আধিপত্যবাদকে মেনে নিচ্ছে। দলীয় সংহতি এবং স্বার্থের পায়ে যুক্তরাষ্ট্রের অধিকারকে বলি দেওয়া নিয়ে দেশব্যাপী বিশেষ মাথাব্যথা দেখা যাচ্ছে না। প্রকৃত বিপদটি এখানেই।

National Education Policy Dharmendra Pradhan West Bengal

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।