Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal

নেই-রাজ্য

জোড়াতালি ব্যবস্থার মাধ্যমে চলছে অগণিত শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ গঠনের কাজ। অথচ, জেলাগুলির প্রচুর শিক্ষার্থী এই স্কুলগুলির উপরেই মূলত নির্ভরশীল।

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২২ ০৫:১৪
Share: Save:

পশ্চিমবঙ্গে স্কুলে শিক্ষক-নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে যে পরিমাণ আলোচনা হয়, স্কুলে শিক্ষকের ঘাটতি শিক্ষাব্যবস্থার কতখানি ক্ষতি করছে, সে বিষয়ে আলোচনার পরিমাণ তার কণামাত্রও নয়। রাজনীতির কাছে চাকরির গুরুত্ব অনেক, শিক্ষা সে তুলনায় নিতান্তই এলেবেলে। মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জে সাকার ঘাট জুনিয়র হাই স্কুলের খবর মিলেছে— সেখানে উচ্চ প্রাথমিকে ৭৭২ জন পড়ুয়া-পিছু শিক্ষকের সংখ্যা মাত্র ১। এবং স্কুলটি ব্যতিক্রম নয়। অন্যত্র ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতের ছবিটা সর্বদা এমন ভয়াবহ না হলেও, বহু উচ্চ প্রাথমিক স্কুলে মাত্র এক বা দু’জন শিক্ষকের উপরেই পঠনপাঠনের দায়িত্বটি ন্যস্ত। কখনও সেই শিক্ষক ছুটিতে গেলে স্কুলের গ্রুপ-ডি কর্মীকে ক্লাস নিতে হয়, কখনও আংশিক সময়ের শিক্ষক নিয়োগ করে আপৎকালীন সমাধানের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু, স্কুলে লেখাপড়া হবে না, এই কথাটি ক্রমেই এত স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে যে, এমন ভয়ঙ্কর অবস্থাও সচরাচর আলোচনা বা আন্দোলনের যোগ্য বলে বিবেচিত হয় না।

জোড়াতালি ব্যবস্থার মাধ্যমে চলছে অগণিত শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ গঠনের কাজ। অথচ, জেলাগুলির প্রচুর শিক্ষার্থী এই স্কুলগুলির উপরেই মূলত নির্ভরশীল। শিক্ষকসংখ্যার অপ্রতুলতার কারণে তাদের পঠনপাঠনে যে ক্ষতি হচ্ছে, তা অপূরণীয়। এই অবস্থা শিক্ষার অধিকার আইনের পরিপন্থী। এই আইনের বলে শিক্ষার অধিকার নাগরিকের মৌলিক অধিকার। কিন্তু শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপে যদি ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতের ক্ষেত্রে এমন বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়, যার জন্য দৈনন্দিন পঠনপাঠনই ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে শিক্ষার অধিকারটি অটুট থাকে কি? এক জন শিক্ষার্থীর জীবনে প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিকের শিক্ষাকে ভিত্তি হিসাবে ধরা হয়। সেই ভিত্তিই যদি এমন দুর্বল থাকে, তা হলে তার আগামী জীবন দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত হবে কী উপায়ে? প্রসঙ্গত, শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ার পিছনে বার বারই আইনি জটের কথা বলা হয়। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য, ২০২১ সালের টেট লিখিত পরীক্ষায় পাশ করা চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ সংক্রান্ত কোনও মামলা দায়ের হয়নি। অথচ, সেই প্রক্রিয়া ছয় মাস অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পরও শুরু হয়নি। ইন্টারভিউ কবে হবে, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ তারও কোনও সদুত্তর দিতে পারেনি।

শিক্ষার ক্ষেত্রে উপযুক্ত পরিকাঠামো নির্মাণ বা শিক্ষক নিয়োগের মতো বিষয়গুলি একেবারে প্রাথমিক কর্তব্য। কোনও সরকার যদি সেই প্রাথমিক বিষয়গুলিতেই উদাসীন থাকে, তবে শিক্ষার প্রসারে তার সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা তেমনই। কোথাও পর্যাপ্ত স্কুলঘর নেই, শিক্ষার্থীরা গাদাগাদি করে একটিমাত্র ঘরে, নয়তো খোলা আকাশের নীচে ক্লাস করতে বাধ্য হয়; কোথাও শিক্ষক নেই, অথবা শিক্ষক থাকলেও পড়ুয়া নেই; কোথাও শৌচালয়-পানীয় জলের সুষ্ঠু ব্যবস্থা নেই— আশ্চর্য নয়, সচেতন অভিভাবকরা কিছু অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে বেসরকারি স্কুল, অথবা গৃহশিক্ষকতার শরণাপন্ন হচ্ছেন। অবিলম্বে সরকার এবং সরকার-পোষিত বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষার পরিবেশ ফেরানো দরকার। নয়তো বৈষম্য আরও চওড়া হবে। এমনিতেই অতিমারির কারণে শিক্ষার বিপুল ক্ষতি হয়েছে। মৌলিক কর্তব্যগুলিতে গাফিলতি করে সেই ক্ষতির পরিমাণ না বাড়ানোই মঙ্গল।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy