Advertisement
২১ নভেম্বর ২০২৪
Bank Interest

কঠোর নীতির পরে

আমেরিকা কঠোর আর্থিক নীতির পথ থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তেমন সিদ্ধান্ত অবশ্য শুধু সে দেশেরই নয়— ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক ইতিমধ্যেই দু’দফা সুদ কমিয়েছে; ব্যাঙ্ক অব ইংল্যান্ডও সুদ কমিয়েছে অগস্ট মাসে।

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:২৪
Share: Save:

অবশেষে কি চড়া সুদের দিন শেষ হতে চলেছে? আমেরিকার ফেডারাল রিজ়ার্ভের সাম্প্রতিক সুদ হ্রাসের সিদ্ধান্ত তেমনই ইঙ্গিত বহন করছে। আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক তাদের সেপ্টেম্বরের ঘোষণায় জানাল, সুদের হার কমছে ০.৫ শতাংশ-বিন্দু বা ৫০ বেসিস পয়েন্ট। ফেড-এর সুদের হার কমে দাঁড়াল ৪.৭৫-৫ শতাংশ। এর পরেও যে সুদের হার কমতে পারে, তেমন ইঙ্গিতও স্পষ্ট। এ বছরের শেষে সম্ভবত আরও ৫০ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমবে, ২০২৫ ও ২০২৬ সালে কমবে আরও খানিকটা। অর্থাৎ, আমেরিকা কঠোর আর্থিক নীতির পথ থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তেমন সিদ্ধান্ত অবশ্য শুধু সে দেশেরই নয়— ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক ইতিমধ্যেই দু’দফা সুদ কমিয়েছে; ব্যাঙ্ক অব ইংল্যান্ডও সুদ কমিয়েছে অগস্ট মাসে। বস্তুত, আমেরিকায় প্রশ্ন উঠছে, সুদের হার কমাতে ফেডারাল রিজ়ার্ভ প্রয়োজনের চেয়ে বেশিই দেরি করল কি না। ২০২২ সালে যখন ফেড সুদের হার বাড়াতে আরম্ভ করেছিল, তার উদ্দেশ্য ছিল ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির হারকে নিয়ন্ত্রণ করা। সে কাজ বহু দূর অবধি সম্পন্ন হয়েছে— ফেড জানিয়েছে যে, ভোগ্যপণ্য মূল্যসূচকের নিরিখে অগস্ট মাসে সে দেশে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছিল ২.৫ শতাংশ। ব্যক্তিগত ভোগব্যয় সূচকের নিরিখে অনুমান করা হচ্ছে যে, ২০২৪ সালের মধ্যেই এই হার কমে দাঁড়াবে ২.৩ শতাংশে, এবং ২০২৫ সালে তা আরও কমে দাঁড়াবে ২.১ শতাংশ। উন্নত বিশ্বের যে কোনও দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কই মূল্যবৃদ্ধির হারকে দুই থেকে তিন শতাংশের কোঠায় রাখতে চায়। ফলে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ফেড-এর কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলেই ধরা যায়। সে কারণেই সুদ কমানোর সিদ্ধান্ত।

সাম্প্রতিক অতীতে ভারতও কঠোর আর্থিক নীতির পথেই হেঁটেছে। এ দেশেও তার প্রধানতম কারণ ছিল মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে যে, ভোগ্যপণ্য মূল্যসূচকের নিরিখে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সহনসীমার মধ্যে থাকছে। ফলে, বাজারে স্পষ্ট আশা তৈরি হয়েছে যে, অক্টোবরের প্রথমার্ধে মনিটরি পলিসি কমিটির বৈঠকে ভারতেও হয়তো সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত হবে। দু’টি কথা মনে রাখা প্রয়োজন। এক, ভারতে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির ওঠানামা অন্তত সাম্প্রতিক অতীতে বেশ দ্রুত ঘটেছে। সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্তটি যতখানি সময়কালের জন্য প্রযোজ্য, মূল্যবৃদ্ধির হারের ওঠা-নামার মেয়াদ তার তুলনায় সচরাচর কম হচ্ছে— অতএব, সিদ্ধান্তটির ‘টাইমিং’ বিষয়ে বিশদ চিন্তাভাবনা করা প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, অন্যান্য ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার মাথা নোয়ালেও খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে তা যথেষ্ট ঘটেনি। সাধারণ মানুষের স্বার্থকে কমিটি কতখানি গুরুত্ব দেয়, সে দিকে নজর থাকবে। তবে, সে মূল্যবৃদ্ধিকে সুদের হার দিয়ে কতখানি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, সেই প্রশ্নও থাকছে।

মূল্যস্ফীতির হার কমাতে সুদের হার বাড়ানোর সিদ্ধান্তের প্রত্যক্ষ নেতিবাচক প্রভাব পড়ে বিনিয়োগের উপরে। আর, বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার প্রভাব পড়ে কর্মসংস্থানের উপরে। আমেরিকায় ফেডারাল রিজ়ার্ভ সুদের হার কমিয়ে বলেছে, এ বার কর্মসংস্থান বৃদ্ধির দিকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। ভারতে গত কয়েক বছরে কর্মসংস্থানহীনতার সমস্যা এমনই বিপুল আকার ধারণ করেছে যে, সুদের হার কমানোর পক্ষে সেই যুক্তি অতি জোরদার। কর্মসংস্থানের গুরুত্ব প্রশ্নাতীত। কিন্তু, ভারতের ক্ষেত্রে আগে অন্য একটি প্রশ্নের উত্তর খোঁজা প্রয়োজন— এ দেশে কর্মসংস্থানহীনতার কারণ কি বিনিয়োগের অভাব, না কি সার্বিক ভাবে চাহিদা হ্রাস? গত এক দশকে সরকারের প্রকাশ করা এবং চেপে যাওয়া বিবিধ পরিসংখ্যান বারে বারেই সার্বিক চাহিদার অভাবের দিকে নির্দেশ করেছে। ক্রমবর্ধমান অসাম্যও দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষের ক্রয়ক্ষমতাকে সীমিত করেছে। এই পরিস্থিতিতে সুদের হার কমালেই কর্মসংস্থান বাড়বে কি না, ভেবে দেখা জরুরি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy