Advertisement
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Quick Commerce

এ বার ছোট শহরে

কিউ-কমার্সের বৃদ্ধি এবং বিস্তৃতি ভারতীয় অর্থব্যবস্থার সুষম বৃদ্ধির একটি মাপকাঠি হিসাবে গণ্য হতে পারে। ব্যক্তি-স্তরে অসাম্য হ্রাসের হিসাব তাতে না মিললেও আঞ্চলিক অসাম্যের একটা আন্দাজ পাওয়া সম্ভব হবে।

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:৩৮
Share: Save:

আগামী পাঁচ বছর ভারতে কুইক কমার্স (বা, চলতি ভাষায় কিউ-কমার্স) ক্ষেত্রটির বার্ষিক গড় বৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ৭০ শতাংশের কাছাকাছি। একটি বহুজাতিক সংস্থার গবেষণায় উঠে আসা এই তথ্যটিকে যদি কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের মতো কেউ সাবেক মুদিখানা তথা ‘ভারতীয় সংস্কৃতি’র বিপন্নতার সূচক বলে মনে করেন, তাঁকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া যেতে পারে যে, বার্ষিক ৭০ শতাংশ হারে বেড়ে পাঁচ বছর পরে এই ক্ষেত্রটি ভারতের খুচরো বিপণনের বাজারের পাঁচ শতাংশ দখল করবে। কারণ, এই মুহূর্তে ক্ষেত্রটির দখলে আছে মোট খুচরো বাজারের মাত্র ০.২%। এ তথ্যটিকে অবশ্য দু’ভাবে দেখা যায়— কেউ বলতে পারেন যে, ‘মাত্র দশ মিনিট’-এ বাড়িতে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার এই বাণিজ্যিক মডেলটি এখনও ভারতীয় বাজারে দাঁত ফোটাতেই পারেনি; কেউ আবার বলতে পারেন, এই ক্ষেত্রটির সামনে জয় করার জন্য পড়ে আছে বিপুল বাজার। সংস্থাগুলি যে ‘হাইপারলোকাল’ মডেলে ব্যবসা করে, তাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সাবেক মুদিখানার চেয়ে কম, সে কথা ভাবার কোনও কারণ নেই। বরং, এই ক্ষেত্রটির হাত ধরে ‘মুদিখানায় কর্মসংস্থান’ নামক পেশাটি সংগঠিত হয়ে উঠতে পারে— তার জন্য অবশ্য রাজনৈতিক কল্পনাশক্তির প্রয়োজন হবে। এই মডেলে কর্মসংস্থানের চরিত্রে লিঙ্গবৈষম্যও তুলনায় কম হওয়ারই কথা— পাড়ার মুদিখানায় সহজে মহিলা-কর্মীর দেখা মেলে কি? অতএব, কিউ-কমার্সের উল্কাগতিতে উত্থানকে সন্দেহের চোখে দেখার কারণ নেই। অর্থনীতিও নদীর মতো, তার বেগ আটকানো কঠিন। বরং ভাবা প্রয়োজন, এই প্রবাহকে সমাজের পক্ষে সবচেয়ে লাভজনক ভাবে কোন পথে ব্যবহার করা সম্ভব।

কিউ-কমার্সের ব্যবসায়িক মডেল দাঁড়িয়ে আছে ‘ডার্ক স্টোর’ নামক একটি ধারণাকে কেন্দ্র করে। প্রতি দুই থেকে তিন কিলোমিটার ব্যাসার্ধের কেন্দ্রে রয়েছে এক-একটি ডার্ক স্টোর, যেখানে মজুত থাকে সব ধরনের পণ্য— ওই দু’তিন কিলোমিটার ব্যাসার্ধ থেকে যত অর্ডার আসে, তা পূরণ করা হয় সেই ডার্ক স্টোর থেকে। সে কারণেই অর্ডার দেওয়ার পর অতি অল্প সময়ে ক্রেতার কাছে পণ্য পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়। অন্য দিকে, ডার্ক স্টোরের জন্য এমন লোকালয় প্রয়োজন, যার দু’তিন কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে থেকেই যথেষ্ট অর্ডার আসতে পারে— একটি ন্যূনতম পরিমাণ অর্ডার না এলে ডার্ক স্টোর তৈরি করা লাভজনক হয় না। সে কারণেই এখনও কিউ-কমার্সের ব্যবসা মূলত বড় শহরগুলির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। এই শহরগুলিতে এখনও যত চাহিদা এবং ক্রয়ক্ষমতা রয়েছে, তা কিউ-কমার্সের আগামী কয়েক বছরের বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট। কিন্তু, সংস্থাগুলিও জানে যে, সেই বৃদ্ধির একটি সীমা রয়েছে— তাকে অতিক্রম করতে হলে বড় শহরের গণ্ডি ছাড়িয়ে পৌঁছতে হবে মাঝারি ও ছোট শহরে। সে পরিকল্পনা নিশ্চয়ই রয়েছে, কিন্তু তা রূপায়ণের জন্য সেইশহরাঞ্চলগুলিতে ক্রয়ক্ষমতার সার্বিক বৃদ্ধি প্রয়োজন। তার জন্য প্রয়োজন সুষম আর্থিক বৃদ্ধি। এই দিক থেকে দেখলে, কিউ-কমার্সের বৃদ্ধি এবং বিস্তৃতি ভারতীয় অর্থব্যবস্থার সুষম বৃদ্ধির একটি মাপকাঠি হিসাবে গণ্য হতে পারে। ব্যক্তি-স্তরে অসাম্য হ্রাসের হিসাব তাতে না মিললেও আঞ্চলিক অসাম্যের একটা আন্দাজ পাওয়া সম্ভব হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Quick Commerce E Commerce
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE