Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Leap Second

পুরাতনকে বিদায়

মাপন প্রক্রিয়া মানব সমাজের এক স্বাভাবিক প্রবণতা। ছ’হাজার বছর আগে মেসোপটেমিয়ার সভ্যতায় মাপন প্রক্রিয়ার চিহ্ন পাওয়া যায়। বলা হয়, বিজ্ঞান নাকি মাপন ছাড়া কিছুই নয়।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ ০৫:৩০
Share: Save:

লিপ সেকেন্ড ২০৩৫ সাল থেকে— অথবা তার আগে থেকেই— উঠে যাচ্ছে, এই হল সিদ্ধান্ত। ১৯৭২ সাল থেকে চালু এই লিপ সেকেন্ড। লিপ ইয়ারে যেমন প্রতি চার বছর অন্তর বছর ৩৬৫ দিনে শেষ না হয়ে, ৩৬৬ দিনে শেষ হয়, লিপ সেকেন্ড সে রকম প্রতি দেড় বছর অন্তর সময় মাপার সঙ্গে যোগ করা হয়। ২৪ ঘণ্টার বদলে প্রতি দিন শেষ হয় ২৪ ঘণ্টা ০.০০২ সেকেন্ডে। প্রতি দেড় বছরে ওই বাড়তি ০.০০২ সেকেন্ড পরিমাণে দাঁড়ায় ১ সেকেন্ড। তখন ওই ১ সেকেন্ড যোগ করা হয় দিনের সঙ্গে। যে-হেতু পৃথিবীর আহ্নিক গতি স্থির নয়, সে জন্য লিপ ইয়ারের মতো লিপ সেকেন্ড বছরের নির্দিষ্ট মাসে যোগ করা হয় না। কোনও বছর জুন মাসের শেষ দিনে যোগ করা হয়, আবার কোনও বছর ডিসেম্বর মাসের শেষ দিনে যোগ করা হয়। ১৯৭২ সালে শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত ২৭ বার লিপ সেকেন্ড যোগ হয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জেনারেল কনফারেন্স অন ওয়েটস অ্যান্ড মেজারস (জিসিডব্লিউএম) এক সভায় ওই লিপ সেকেন্ড তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

মাপন প্রক্রিয়া মানব সমাজের এক স্বাভাবিক প্রবণতা। আজ থেকে ছ’হাজার বছর আগে মেসোপটেমিয়ার সভ্যতায় মাপন প্রক্রিয়ার চিহ্ন পাওয়া যায়। বলা হয়, বিজ্ঞান নাকি মাপন ছাড়া কিছুই নয়। ফরাসি বিপ্লবের আগে ফ্রান্সে আড়াই লক্ষ মাপের পদ্ধতি চালু ছিল। এক শহরে মদের পাঁইট এক-এক রকম হত। সে জন্য ব্যবসার ক্ষতি হত। ওই ক্ষতি রুখতে মেট্রিক পদ্ধতি চালু হয় বিপ্লবের পরে। মেট্রিক পদ্ধতিতে একক হল দৈর্ঘ্যের একক মিটার। তা ফুট-গজের বদলে চালু হয়। ফরাসি বিজ্ঞানীরা ঠিক করেন, পৃথিবী হোক সব মাপের কেন্দ্রবিন্দু। সেই মতো বিষুবরেখা থেকে উত্তর মেরু পর্যন্ত দৈর্ঘ্যের এক কোটি ভাগের এক ভাগ দৈর্ঘ্য হল এক মিটার। এই মাপ নির্ণয়ে দু’জন জ্যোতির্বিজ্ঞানীকে পাঠানো হয় জরিপ করার জন্য। ফুট-পাউন্ড একককে বলে এফপিএস পদ্ধতি, সেন্টিমিটার-গ্রাম একককে বলে সিজিএস পদ্ধতি। ‘এস’ দুই ক্ষেত্রেই সেকেন্ড। এফপিএস পদ্ধতির চেয়ে সিজিএস শ্রেয়, কেননা মেট্রিক পদ্ধতিতে বড় একক ছোট এককের স্রেফ দশ গুণ।

মেট্রিক পদ্ধতির প্রশস্তি করে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট একদা বলেছিলেন, রাজা আসবে যাবে, কিন্তু মেট্রিক পদ্ধতি রয়ে যাবে। ঠিক তাই। আমেরিকা, মায়ানমার ও লাইবেরিয়া ছাড়া পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই এখন মেট্রিক পদ্ধতি চালু। তবে কেবল সেকেন্ডের ব্যাপারে কিন্তু এখনও পুরনো পদ্ধতি চালু। সময় মাপতে এখনও সেক্সাজেসিমাল (৬০) পদ্ধতিই ভরসা। এক ঘণ্টায় ৬০ মিনিট, এক মিনিটে ৬০ সেকেন্ড। যে দেশে মেট্রিক পদ্ধতি প্রথম চালু হয়, সেই ফ্রান্সে সময় মাপার ক্ষেত্রেও মেট্রিক পদ্ধতি চালু হয়েছিল। এক সপ্তাহে ১০ দিন, এক ঘণ্টায় ১০০ মিনিট, এক মিনিটে ১০০ সেকেন্ড। জনগণ পছন্দ না করায় ঘণ্টা-মিনিট-সেকেন্ডের পুরনো হিসাব ফেরত এসেছে। আমেরিকার পক্ষে মেট্রিক পদ্ধতি চালু না করাটা সুখকর হয়নি। ১৯৯৯ সালে মার্স ক্লাইমেট অরবিটার মঙ্গলের মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে, কেননা এক দল বিজ্ঞানী কাজ করছিলেন সিজিএস পদ্ধতিতে, আর এক দল, এফপিএস-এ। এখনও পর্যন্ত এক সেকেন্ড সময়টা মাপা হয় পারমাণবিক কম্পাঙ্কে। ওই পদ্ধতিতে সেকেন্ড মাপার জন্যই পৃথিবীর আহ্নিক গতিনির্ভর লিপ সেকেন্ড বাতিল করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Leap Second Science Time
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy