জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ সম্পর্কে নেচার পত্রিকা জানাইয়াছে, উহা এখন দূরবিন। যে উদ্দেশ্যে উহা মহাকাশে প্রেরিত হইয়াছিল গত বৎসর বড়দিনে, সেই উদ্দেশ্য অদ্যাবধি সফল। দূরবিনটির এক একটি টেনিস কোর্টের সমান আয়নাযুক্ত পাঁচটি পর্দা। রাতের বেলা ফুল যেমন পাপড়ি মেলিয়া বিকশিত হয়, তেমনই দূরবিনের আঠারোটি আয়নার শেষটিও বিকশিত হইয়াছে। অর্থাৎ, জেমস ওয়েব মহাশূন্য দূরবিন এক্ষণে আলোক সংগ্রহ করিতে পারে। তাহার মূল কাজ মহাশূন্যের আলোক সংগ্রহ— তাহাতে দূরবিনটি আপাতত সক্ষম। পর্দা খাটানো এবং আঠারোটি আয়না খাটানো লইয়া চিন্তিত ছিলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। কারণ পর্দা না খাটাইলে সূর্যের তাপ হইতে দূরবিনটিকে রক্ষা করা যাইত না। আঠারোটি ষড়ভুজ আয়না পাশাপাশি বিকশিত না হইলে প্রতিবিম্ব তৈরি হইয়া মহাশূন্যের আলোক সংগৃহীত হইত না। তাহা হইলে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ মহাশূন্যে পাঠানো বিফলে যাইত।
যাহার উত্তরসূরি হিসাবে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ গণ্য, সেই হাবল স্পেস টেলিস্কোপ মহাশূন্যে পাঠানো হইয়াছিল ১৯৯০ সালে। কয়েক সপ্তাহ পরেই উক্ত টেলিস্কোপ যখন মহাশূন্যের ছবি পৃথিবীতে প্রেরণ করে, তাহা দেখিয়া জ্যোতির্বিজ্ঞানীগণ বুঝিতে পারেন যে, উক্ত টেলিস্কোপের ক্যামেরা মহাশূন্যের ছবি তোলায় গন্ডগোল করিতেছে। ছবি তোলা ব্যতীত ওই দূরবিনের আর কাজ ছিল না। তাই হাবল স্পেস টেলিস্কোপকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করিবার উপক্রম হয়। অবশেষে ১৯৯৩ সালে স্পেস শাটল এনডেভার-এর নভশ্চরগণ মহাশূন্যে গিয়া হাবল স্পেস টেলিস্কোপের ক্যামেরার ত্রুটি সংশোধন করেন। উক্ত টেলিস্কোপটি ছিল পৃথিবী হইতে মাত্র ৬২৫ কিলোমিটার দূরে, ফলে উহার ক্যামেরার ত্রুটি সংশোধন করিতে পারা সম্ভব হইল। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ যাইবে পৃথিবী হইতে ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে, অতএব দূর-যোগাযোগই ভরসা। কোনও কারণে কলকব্জা বিকল হইলে দূরবিনটিকে সচল করিবার কোনও পথ নাই। হাবল স্পেস টেলিস্কোপের ন্যায় স্পেস শাটল-এর নভশ্চরেরা অত দূরে গিয়া বিকল্প কলকব্জা মেরামত করিতে পারিবেন না। আর, দূরবিনটি কাজ না করিলে হাজার কোটি ডলার জলে যাইবে।
এই দূরবিনের পৃথিবী হইতে অত দূরে গন্তব্যের কারণ কী? দূরবিনটিকে এমন দূরত্বে স্থাপন করা প্রয়োজন, যাহাতে উহা স্থাণুবৎ দাঁড়াইয়া থাকিতে পারে। মহাশূন্যে যে যে স্থানে সূর্যের আকর্ষণবল পৃথিবীর আকর্ষণবলকে ব্যালান্স করিতেছে, সেই সেই স্থানে উহা সম্ভব। ওই সব স্থানকে লাগ্রাঞ্জ পয়েন্ট বলে, কেননা ফরাসি গণিতজ্ঞ জোসেফ লুই লাগ্রাঞ্জ ১৭৭২ সালে ওই স্থান আবিষ্কার করেন। লাগ্রাঞ্জ পয়েন্ট পাঁচটি। দ্বিতীয় লাগ্রাঞ্জ পয়েন্ট যাহা পৃথিবী হইতে ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে, তাহাতেই স্থিত থাকিবে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। সূর্য এবং পৃথিবীর মাঝখানে নক্ষত্র বা গ্রহ কাহারও আকর্ষণ নাই বলিয়া কাহাকেও আবর্তন করিবে না, স্থাণুবৎ এক স্থানে স্থির থাকিবে। যতখানি সম্ভব নিখুঁত অবস্থায় জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপকে মহাশূন্যে পাঠাইতে গিয়া বারংবার নির্ঘণ্ট পাল্টাইতে হইয়াছে। ১৯৯৭ সালে জানানো হয়, উক্ত দূরবিন পাঠানো হইবে ২০০৭ সালে। পরবর্তী কালে নানা সময়ে সংশোধিত যাত্রাকাল নির্ধারিত হয়। অবশেষে তিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা যাহারা ওই দূরবিন পাঠাইয়াছে, সেই নাসা, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি এবং কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সি একযোগে ২০১৯ সালে জানায়, দূরবিনটি মহাশূন্যে পাঠানো হইবে ২০২১ সালে। শেক্সপিয়র লিখিয়াছিলেন, যাহার শেষ ভাল তাহার সব ভাল। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ শেষ পর্যন্ত তাহার নির্ধারিত কার্য করিতে পারিবে কি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy