অতিমারির ধাক্কায় গত দু’বছর ‘শহিদ দিবস’-এর সমাবেশ হয়নি। গত বছর বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের জয়লাভের পরও এই প্রথম শহিদ দিবসের সমাবেশ। এ দিকে, পঞ্চায়েত নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়তে আরম্ভ করেছে। অতএব অনুমান, আগামী ২১ জুলাই গোটা রাজ্য থেকে কর্মী-সমর্থকদের ঢল নামবে কলকাতায়। সেই উপলক্ষে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকে তৈরি থাকতে বলল। আগাম সতর্কতা বস্তুটি এমনই বিরল যে, রাজ্য প্রশাসনের এই তৎপরতার প্রশংসা করতেই ইচ্ছা হয়। কিন্তু, সেই ইচ্ছায় বাধা হয়ে দাঁড়ায় দু’টি প্রশ্ন। এক, প্রশাসন আর শাসক দলের মধ্যে কি আর লোক-দেখানো ফারাকটুকুও রাখার প্রয়োজন রইল না? শাসক দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি উপলক্ষে প্রশাসনের এ-হেন তৎপরতা দেখে মনে হয়, কর্মসূচিটি বুঝি সরকারি। বিরোধী দলগুলি প্রশ্ন করতে পারে যে, তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচির ক্ষেত্রেও প্রশাসন এতখানিই তৎপর এবং সহায়ক হবে কি? কিন্তু, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল, শাসক দল ও প্রশাসনের মধ্যে যে ফারাক রয়েছে, আমলা ও সরকারি আধিকারিকদের সেই বিস্মরণটি তাঁদের অন্যান্য সিদ্ধান্তকেও কতখানি প্রভাবিত করবে? প্রশাসনিক নিষ্পক্ষতার রাজধর্ম বজায় রাখার প্রধানতম দায়িত্বটি যে তাঁদের স্কন্ধে ন্যস্ত, এবং সেই নিষ্পক্ষতাকে যে কবচকুণ্ডলের মতো ধারণ করতে হয়, রাজকর্মচারীরা ইদানীং এই কথাটি বড় সহজে বিস্মৃত হন। শহিদ দিবসকে ঘিরে প্রশাসনিক অত্যুৎসাহ সেই বিপদটির দিকে আরও এক বার অঙ্গুলিনির্দেশ করল।
দ্বিতীয় প্রশ্ন হল, সমাবেশের দিন এমন কী বা ঘটতে পারে, যার জন্য এত আগাম সতর্কতা প্রয়োজন? রাজ্য রাজনীতির সাম্প্রতিক চালিকাশক্তির নাম হিংসা। কেউ আশঙ্কা করতে পারেন যে, দু’বছর পর পূর্ণশক্তিতে সমাবেশ উপলক্ষে সেই চালিকাশক্তির প্রাবল্য প্রত্যক্ষ করতে হতে পারে। আশা করা যায়, প্রশাসনিক তৎপরতা শুধুমাত্র হাসপাতালগুলিকে তৈরি রাখাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না; পুলিশও তৈরি থাকবে— অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আগেই তা থামানোর চেষ্টা হবে। কিন্তু, আরও একটি বিপদ বিলক্ষণ রয়েছে, যা ঠেকানো পুলিশের সাধ্যাতীত। সেই বিপদের নাম কোভিড-১৯ অতিমারি। পশ্চিমবঙ্গে সংক্রমণ প্রতি দিন বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন যে, ভয়ের কারণ বিলক্ষণ রয়েছে। কিন্তু, তাতে সাধারণ মানুষের তেমন হেলদোল নেই। মাস্ক বা সামাজিক দূরত্ব এখন ক্ষীণ স্মৃতিতে পরিণত হয়েছে। যাঁরা দল বেঁধে রাজনৈতিক সমাবেশে যোগ দিতে আসবেন, তাঁরা প্রবল ব্যতিক্রমী হয়ে যাবতীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে দিনটি কাটাবেন, ততখানি ভরসা হয় না। ফলে, ২১ তারিখের সমাবেশ একটি ‘সুপারস্প্রেডার ইভেন্ট’ হয়ে উঠতে পারে, সেই আশঙ্কা প্রবল। সরকারি কর্তারা যদি সেই কারণেও হাসপাতালগুলিকে তৈরি থাকতে বলেন, তবে ২১ তারিখে তৈরি থাকলেই চলবে না— বিপদ টের পেতে আরও দিনকয়েক সময় লাগবে। কেউ প্রশ্ন করতে পারেন যে, কোভিডের চতুর্থ তরঙ্গের মারাত্মক হয়ে ওঠার আশঙ্কা যখন স্পষ্ট এবং প্রবল, সেই পরিস্থিতিতে সমাবেশের আয়োজন করা কি খুব জরুরি ছিল? আরও কিছু দিন কি অপেক্ষা করা যেত না? রাজনীতির মাপকাঠিতে এই প্রশ্ন সম্ভবত গুরুত্বহীন। ফলে, যে বিপদ এড়ানো যেত, তার আশঙ্কায় কাঁটা হয়ে থাকাই রাজ্যবাসীর ভবিতব্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy