—প্রতীকী চিত্র।
এক বছর খুব কম সময় নয়। দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের পরিস্থিতি যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তবে এই এক বছরে তা সামাল দেওয়ার প্রশাসনিক প্রচেষ্টাটি কঠিন ছিল না। এবং তা প্রয়োজন ছিল ‘অখণ্ড ভারত’-এর স্বার্থেই। কিন্তু মণিপুরে তা ঘটেনি। এক বছরেরও বেশি ক্রমাগত আগুনে পুড়েছে রাজ্যটি, ঘরছাড়া হয়েছেন অন্তত ষাট হাজার, প্রাণহানি দু’শোর অধিক। কিন্তু পরিস্থিতি সামলাতে রাজ্য সরকারের অপদার্থতার পাশাপাশি যে বিষয়টি আলোচনায় উঠে এসেছে, তা হল মণিপুর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীর আশ্চর্য নীরবতা। অবশেষে সেই মৌন ভঙ্গ হল রাজ্যসভার সাম্প্রতিক অধিবেশনে। যদিও স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সে প্রসঙ্গ উঠে আসেনি। বিরোধীদের লাগাতার আক্রমণের মুখে প্রধানমন্ত্রী জবাবি ভাষণ দিয়েছেন মাত্র। এবং প্রথম মুখ খুলে তিনি স্বভাবোচিত ঢঙেই বিরোধীদের দিকে বল ঠেলে দিয়েছেন। জানিয়েছেন, মণিপুর নিয়ে যাঁরা আগুনে ঘৃতাহুতি দিচ্ছেন, মণিপুরই এক দিন তাঁদের প্রত্যাখ্যান করবে।
মণিপুর আগামী দিনে কাদের প্রত্যাখ্যান করবে, নজর থাকবে অবশ্যই। কিন্তু সদ্যপ্রকাশিত লোকসভা ভোটের ফল বলছে, আপাতত সে রাজ্যে বিজেপিই প্রবল ভাবে প্রত্যাখ্যাত। মূল কারণ, রাজ্যের অগ্নিগর্ভ অবস্থার প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের মর্মান্তিক উপেক্ষা এবং অরাজকতায় প্রশ্রয় দান। নির্বাচন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে বেড়ালেও গত এক বছরে একটি বারের জন্য মণিপুরে পা রাখেননি। অথচ, শুধুমাত্র ভোটপ্রার্থী হিসাবে নয়, দেশের শাসক হিসাবেও হিংসাদীর্ণ এই অঞ্চলে আসা তাঁর প্রয়োজন ছিল। তেমনটা হয়নি। উল্টে মণিপুর নিয়ে আগাগোড়া তিনি মুখে কুলুপ এঁটেছেন। গত বছর একই রকম অবহেলা দেখিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও। সেই উপেক্ষার সম্মিলিত পরিণতিই দেখা গিয়েছে ভোটবাক্সে। এমতাবস্থায় মণিপুরের আগুনে কারা ঘৃতাহুতি দিচ্ছে, তা খুঁজে বার করা প্রয়োজন নিশ্চয়ই। কিন্তু যাঁরা নীরব, নিশ্চেষ্ট থেকে সেই আগুনকে বৎসরাধিক কাল জ্বালিয়ে রেখেছেন, তাঁদের ভূমিকাটিও প্রকাশ্যে আসা সমান জরুরি।
প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার মিলে মণিপুরে পরিস্থিতি শোধরানোর নিরন্তর চেষ্টা করছে। সেখানে স্বাভাবিকত্ব ফিরছে। কথাগুলির মধ্যে দায় ঝেড়ে ফেলা এবং নির্বাচনোত্তর ভাবমূর্তি উদ্ধারের চেষ্টা আছে, কিন্তু বাস্তবের ছোঁয়া কম। হিংসার তীব্রতা এক বছর পূর্বের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে ঠিকই, কিন্তু তাকে ‘স্বাভাবিক অবস্থা’ বলা চলে না। সম্প্রতি লোকসভা নির্বাচনেও সেখানে সন্ত্রাস, বুথ দখলের ছবি দেখা গিয়েছে। উপরন্তু কুকিদের থেকে মেইতেইদের রক্ষার অজুহাতে মেইতেই যুবকরা ‘আরাম্বাই টেঙ্গল’ নামে জঙ্গি বাহিনী গড়ে তুলে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে সরকারি প্রশ্রয়ে কার্যত সমান্তরাল সরকার চালাচ্ছে। গণতান্ত্রিক একটি দেশে এমন ছবি কি ‘স্বাভাবিক’? নিঃসন্দেহে মণিপুরের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ইতিহাস রয়েছে। কিন্তু তার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সুযোগ ও সামাজিক সুরক্ষার দাবিও অনুঘটকের ভূমিকা নিয়েছে। সেই আলোচনায় কতটা সদর্থক থেকেছে মণিপুরের ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকার? শুধুমাত্র গ্রেফতারির খতিয়ান দিলে আর বিরোধীদের কাঠগড়ায় তুললেই কোনও রাজ্যের দীর্ঘকালীন সমস্যার মোকাবিলা করা যায় না। প্রয়োজন হয় যথার্থ প্রশাসকোচিত ভূমিকার। প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় তার ইঙ্গিত মিলল না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy