Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Stan Swamy

কৃষ্ণগহ্বর

স্ট্যান স্বামীর মৃত্যুর খবর জানা গিয়াছে আদালতেই, তাঁহার জামিনের শুনানির দিনেই।

শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২১ ০৫:৪২
Share: Save:

জীবনে যাহা পান নাই, মরণোত্তর শুনানিতে তাহা মিলিয়াছে স্ট্যান স্বামীর। বিচারব্যবস্থার সম্মান ও শ্রদ্ধা। আক্ষেপের সুরও শোনা গিয়াছে— তাঁহার স্বাস্থ্যের যে এই হাল, বুঝিতে পারা যায় নাই। বুঝা গেলে কী হইত? জামিন মিলিত কি? অশীতিপর, হতবল, পারকিনসন্স রোগগ্রস্ত বৃদ্ধের আইনজীবী তাঁহার ক্রমক্ষীয়মাণ স্বাস্থ্যের কারণ দেখাইয়া বারংবার অন্তর্বর্তিকালীন জামিনের আবেদন করিয়াছেন। জামিন মেলে নাই। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) কঠোর বিরোধিতা করিয়াছে, সেই বিরোধিতার অর্থ তবু বুঝা যায়। ইউএপিএ-র ন্যায় কঠিন আইনে অভিযুক্ত হইলে জামিন সুদূরপরাহতই নহে, অসম্ভবপ্রায়— ভীমা কোরেগাঁও মামলার সকল অভিযুক্তের কারাজীবনই প্রমাণ; ভারাভারা রাওয়ের বিরল ব্যতিক্রমও আসলে মূল ‘নিয়ম’কেই বুঝাইয়া দেয়।

পুলিশ, কারা-প্রশাসন, এনআইএ হইতে যে আচরণ ‘প্রত্যাশিত’, বিচারব্যবস্থাতেও তাহার প্রতিকার না মিলিলে মানবাধিকারের আশ্রয় কোথায়? স্ট্যান স্বামীর মৃত্যু হইল, ভীমা কোরেগাঁও মামলায় অভিযুক্ত সোমা সেন, গৌতম নওলখা-সহ শিক্ষক-সমাজকর্মী বা উমর খালিদের ন্যায় ছাত্রনেতা এখনও কারান্তরালে, তাঁহাদের জামিনের আবেদনও প্রত্যাখ্যাত। আজিকার ভারতে অভিযুক্তের জামিনের অধিকার লঙ্ঘিত হইবার প্রবণতা ক্রমেই বাড়িতেছে। জামিনের অধিকার জীবনের ও ন্যায্য বিচারের অধিকারেরই অপরিহার্য অঙ্গ। ইউএপিএ আইনে অভিযুক্ত হইলেও অধিকারের পরিসর অচল হইয়া যায় কি না, সেই তর্কটি রাজনৈতিক পরিসরে হওয়া প্রয়োজন। যত ক্ষণ কেহ অভিযুক্ত প্রমাণিত ও সাব্যস্ত না হইতেছেন, তত ক্ষণ তাঁহার জামিন আটকাইয়া, জামিন আবেদনের শুনানির দিন পিছাইয়া, কারাবাস দীর্ঘায়িত করা আর যাহাই হউক, বিচার নহে। দেশবিরোধিতা, মাওবাদী ও ষড়যন্ত্রকারী-সংযোগের ন্যায় গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত স্ট্যান স্বামীকে গ্রেফতারের পর এনআইএ জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্ত করে নাই। অথচ, অপরাধের প্রমাণ সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলিবার কারণ দর্শাইয়া বরাবর তাঁহার জামিনের বিরোধিতা করিয়াছে। প্রমাণ যখন তত মিলিল না, আদালত তাঁহাকে গৃহবন্দি করিয়া রাখিবার নির্দেশ দিতে পারিত। তাহাও হয় নাই। হাসপাতালে প্রাণ গিয়াছে, জামিন অধরাই রহিয়া গিয়াছে।

স্ট্যান স্বামীর মৃত্যুর খবর জানা গিয়াছে আদালতেই, তাঁহার জামিনের শুনানির দিনেই। এক দিকে ইহা অদৃষ্টের পরিহাস, অন্য দিকে ভারতীয় বিচারব্যবস্থার কৃষ্ণগহ্বরটিকেও ব্যাদিত করিয়া দিয়াছে। সংবিধানে মানবাধিকার রক্ষণের কথাও থাকিবে, আবার ইউএপিএ আইনের জামিন-প্রতিরোধী ৪৫ডি (৩) ধারাও— এই নিদারুণ বৈষম্য শেষ বিচারে মানবাধিকারেরই কণ্ঠরোধ করিয়া ছাড়ে। মৃত্যুর দুই দিন আগে, ২ জুলাই তারিখে স্ট্যান স্বামীর জামিনের আবেদন শুনানির জন্য তালিকাবদ্ধ হইলেও আদালতের সময়াভাব হেতু চার দিন পিছাইয়া যায়। এই বিচারব্যবস্থাই আবার সম্প্রতি নির্দেশ দিয়াছে, কোনও অভিযুক্তের জামিন হইলে সেই নির্দেশ বৈদ্যুতিন ব্যবস্থায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করিতে। তাহা ভাল কথা, কিন্তু তাহারও পূর্বে অভিযুক্তের জামিনের অধিকার রক্ষা করিতে হইবে। আশঙ্কা, ইত্যবসরে আরও কত প্রাণ না কারান্তরালে ঝরিয়া যায়।

অন্য বিষয়গুলি:

Stan Swamy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy