Advertisement
২৪ অক্টোবর ২০২৪
Employment Sectors

অবহেলিত

সারা বিশ্বে যেখানে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পর থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছাত্রছাত্রী বৃত্তিমূলক শিক্ষায় যোগ দেয়: চিনে ৪২%, ইন্দোনেশিয়ায় ৪৪%, জাপানে ২২%— সেখানে ভারতে হিসাবটা মাত্র ৬ শতাংশের। এর কারণ বহুবিধ।

শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২৪ ০৪:৩০
Share: Save:

দেশে কর্মসংস্থানের চিত্রটি যে আশাব্যঞ্জক নয়, গত লোকসভা নির্বাচনে ধাক্কা খেয়ে তা বুঝতে বাধ্য হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাই এ বারের বাজেটে জোর দেওয়া হয়েছে কর্মসংস্থান ও দক্ষতা বৃদ্ধির উপরে। এক নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরে ২০ লক্ষ যুবক-যুবতীর দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি, ১০০০টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (আইটিআই)-কে উন্নত করার কথা ঘোষিত হয়েছে বাজেটে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির ক্ষেত্রে যেমন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশনাল র‌্যাঙ্কিং ফ্রেমওয়ার্ক (এনআইআরএফ)-এর মতো র‌্যাঙ্কিং প্রক্রিয়ার ব্যবস্থা আছে, তেমনই দেশের ১৫,০০০ আইটিআই-এর ক্ষেত্রেও একই ধরনের পদ্ধতি শীঘ্রই চালু হবে বলে জানিয়েছে দক্ষতা উন্নয়ন ও উদ্যোগ বিষয়ক মন্ত্রক (এমএসডিই)। এতে আইটিআইগুলির প্রশিক্ষণের গুণমান বিচার করতে সুবিধা হবে ছাত্রছাত্রীদের। বার্ষিক র‌্যাঙ্কিং প্রক্রিয়াটি নির্ধারিত হবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা ব্যবস্থা, পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার শতাংশ, ছাত্রী ও শিক্ষক সংখ্যার মতো নানা বিষয় বিবেচনায়। কোন আইটিআইগুলি অনুদান পাবে, তা বাছাইয়েও কাজে দেবে।

উদ্যোগটি সাধু, তবে এ-হেন ভাবনা নতুন নয়। সরকারি পোর্টালে অন্তর্ভুক্তি, বা বিশ্ব ব্যাঙ্কের সাহায্যপ্রাপ্ত ‘স্কিল স্ট্রেনদেনিং ফর ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভ্যালু এনহান্সমেন্ট’ প্রকল্পের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তার জন্য ২০১৭-তেই আইটিআইগুলির র‌্যাঙ্কিং প্রক্রিয়া চালু করেছিল ডাইরেক্টরেট জেনারেল অব ট্রেনিং। তার পরেও এদের গুণমানে কোনও লক্ষণীয় পরিবর্তন ঘটেনি। সারা বিশ্বে যেখানে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পর থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছাত্রছাত্রী বৃত্তিমূলক শিক্ষায় যোগ দেয়: চিনে ৪২%, ইন্দোনেশিয়ায় ৪৪%, জাপানে ২২%— সেখানে ভারতে হিসাবটা মাত্র ৬ শতাংশের। এর কারণ বহুবিধ। বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিও অনুকূল নয়। ডাক্তারি, এঞ্জিনিয়ারিং-এর মতো উচ্চ সামাজিক মূল্যের পড়াশোনা বা জীবিকার পাশে কম গুরুত্ব পায় বৃত্তিমূলক শিক্ষা। ফলে আইটিআইগুলিতে বছরের পর বছর প্রায় অর্ধেক আসন খালি পড়ে থাকে, চাহিদা না থাকায় নজর দেয় না সরকারও। বিনিয়োগের অভাবে ধুঁকতে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলিতে শিক্ষক ঘাটতি নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে, অর্থনীতির চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে পারে না এখানকার পাঠক্রম ও প্রশিক্ষণ। পাশাপাশি, এই ক্ষেত্রের দক্ষ ও সফল মানুষদের সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের সংযোগ বা ভাবনা বিনিময়ের সুযোগ না থাকায়, শিল্পক্ষেত্র ও প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে থেকে যায় দুস্তর দূরত্ব।

এত প্রতিবন্ধকতার পরেও এটাই সত্য— শিল্প-বাণিজ্যের নানা ক্ষেত্রের কার্যধারা চলমান ও অব্যাহত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এই বৃত্তিমূলক শিক্ষায় প্রশিক্ষিত ছাত্রছাত্রীদেরই। প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত উৎপাদন থেকে শুরু করে সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনের মতো নানা ক্ষেত্রে ভারত এই মুহূর্তে নিজেকে গড়ে তুলতে চাইছে ‘ম্যানুফ্যাকচারিং পাওয়ারহাউস’ হিসেবে। এই প্রেক্ষাপটে আইটিআই-ভিত্তিক বৃত্তিমূলক শিক্ষার গুরুত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই। দেশে কর্মসংস্থান বাড়ানোর লক্ষ্যে এখন আইটিআইগুলির দিকে চোখ পড়েছে কেন্দ্রের, আগে দরকার এই প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতি দীর্ঘ দিনের পরিকাঠামোগত অবহেলা মোচন। দায়টা সরকারের, তাকেই তা যথাযথ ভাবে পালন করতে হবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE