Advertisement
২১ নভেম্বর ২০২৪
Government Projects

অচলায়তন

নাগরিকের দৃষ্টিতে দেখলে অবশ্য প্রশ্নটা এই নয় যে, জনকল্যাণমূলক প্রকল্প বন্ধ হওয়ার জন্য দায়ী কে? প্রশ্ন হল, নাগরিকের অধিকারের সুরক্ষায় কেন্দ্র ও রাজ্য, দু’পক্ষই ব্যর্থ হচ্ছে কেন?

শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪ ০৭:১১
Share: Save:

কেন্দ্রের যে প্রকল্পগুলির গতি থমকে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গে, সেগুলিকে ফের চালু করার উদ্যোগ করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে কেন্দ্র ও রাজ্য, দুই সরকারই সমাধান বার করার চেষ্টা করছে। এমন সংবাদে আশ্বস্ত হওয়ারই কথা ছিল। পরিবর্তে যদি রাজ্যবাসীর মুখে বিদ্রুপ-বঙ্কিম হাসি ফুটে ওঠে, তা হলে দোষ দেওয়া যায় কি? প্রকল্পগুলি স্থগিত হওয়ার পরে পার হয়ে গিয়েছে দু’বছর। এখনও অবধি হাতে রয়েছে কেবল দোষারোপ আর প্রতিশ্রুতি। মহাত্মা গান্ধী গ্রামীণ রোজগার নিশ্চয়তা প্রকল্প, দরিদ্র মানুষের কাছে যার গুরুত্ব অপরিসীম, বন্ধ রয়েছে মার্চ, ২০২২ সাল থেকে। রাজ্যের প্রাপ্য ৭৫০০ কোটি টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র, যার মধ্যে ২৭৪৪ কোটি টাকা বকেয়া মজুরি। অর্থাৎ কয়েক লক্ষ দরিদ্র, শ্রমজীবী মানুষ সরকারের কাছ থেকে তাঁদের প্রাপ্য মজুরিটুকুও পাননি, নতুন কাজ পাওয়া তো দূরের কথা। কেন্দ্রের অভিযোগ, রাজ্য সরকার হিসাবে গরমিল করেছে, প্রকল্পের ‘গাইডলাইন’ মেনে চলেনি। যেমন, একশো দিনের কাজের প্রকল্পের সামাজিক অডিট হয়নি, আবাস প্রকল্পের নাম বদলেছে, তালিকায় গরমিল রয়েছে। বার বার সতর্ক করার পরেও রাজ্য কেন্দ্রের বার্তা গ্রাহ্য করেনি, সংশোধনও করেনি। তাই কেন্দ্র টাকা বন্ধ করেছে। অপর দিকে, রাজ্য সরকার বার বার দাবি করেছে যে, সব হিসাব দাখিল করা সত্ত্বেও রাজনৈতিক বিরোধিতার জন্য কেন্দ্র বরাদ্দ বন্ধ করেছে। পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং লোকসভা নির্বাচনে এ নিয়ে বিস্তর কথা হয়েছে, কিন্তু সমাধান হয়নি।

নাগরিকের দৃষ্টিতে দেখলে অবশ্য প্রশ্নটা এই নয় যে, জনকল্যাণমূলক প্রকল্প বন্ধ হওয়ার জন্য দায়ী কে? প্রশ্ন হল, নাগরিকের অধিকারের সুরক্ষায় কেন্দ্র ও রাজ্য, দু’পক্ষই ব্যর্থ হচ্ছে কেন? রাষ্ট্র আইন করেছিল যে, গ্রামীণ এলাকায় যে নাগরিক কাজের আবেদন করবেন, তিনিই কাজ পাবেন। নাগরিকের অধিকারের সুরক্ষাই সরকারের কাজ। অথচ, বিজেপি-শাসিত কেন্দ্র এবং তৃণমূল-শাসিত রাজ্য, দু’টি সরকারই সে কাজে ব্যর্থ। তাদের প্রশাসনিক ত্রুটি এবং রাজনৈতিক তরজার জন্য কয়েক লক্ষ মানুষ তাঁদের ন্যায্য রোজগার হারাচ্ছেন। রাজ্য কেন নিয়ম মানল না, আর কেন্দ্রই বা কেন দু’বছরের মধ্যে অনিয়ম সংশোধন করে প্রকল্প চালু করার উপায় বার করতে পারল না, তার উত্তর মিলছে না। দীর্ঘ দু’বছরের এই অচলাবস্থা কেন্দ্র ও রাজ্য, উভয়েরই প্রশাসনিক ক্ষমতা এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রতি সন্দেহ উদ্রেক করতে বাধ্য। দোষ যারই হোক, শাস্তি পাচ্ছেন দরিদ্র, শ্রমজীবী মানুষ। তাঁরা রোজগার হারাচ্ছেন দু’ভাবে— এক, একশো দিনের কাজের প্রকল্পের মজুরি হারাচ্ছেন। এবং দুই, ওই সরকারি প্রকল্প যে গ্রামীণ এলাকায় মজুরি বাড়ানোয় সহায়তা করেছিল, অতীতে তা সর্বত্র দেখা গিয়েছে। কোভিড অতিমারি, কর্মহীনতা বৃদ্ধি এবং এনআরইজিএ স্থগিত হওয়া, পশ্চিমবঙ্গে গ্রামীণ মজুরির উপর এগুলির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, তার যথেষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে।

একশো দিনের কাজের প্রকল্প, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, এগুলি দীর্ঘ কাল স্থগিত থাকার ক্ষতির হিসাব কেবল টাকার অঙ্কে করা চলে না। এর পরিমাপ করতে হবে দারিদ্র নিরসনের সম্ভাবনা, উন্নত জীবনের আশা হারানোয়, যার একক এক-একটি জীবন। পরিবারের দারিদ্রের জন্য যে ছাত্রকে স্কুল-কলেজ ছেড়ে পরিযায়ী শ্রমিক হতে হল, পাকা বাড়ি তৈরি করতে না পারায় যে পরিবারকে ঝড়ে-বন্যায় গৃহহীন হতে হল, গ্রামে পুকুর তৈরি না হওয়ায় যত চাষির জমি দো-ফসলি হল না, তাদের ক্ষতি কে হিসাব করতে পারে? ভারত প্রজাতান্ত্রিক দেশ, তার সরকারের লক্ষ্য উন্নয়ন ও জনকল্যাণ। কিন্তু কেন্দ্রীয় প্রকল্প ঘিরে কেন্দ্র ও রাজ্যের মনোভাব তার বিপরীত সাক্ষ্যই দিচ্ছে। অসার দোষারোপের খেলা সাঙ্গ করে এ বার সংবিধান-নির্দিষ্ট কাজে উদ্যোগী হোক উভয় সরকার।

অন্য বিষয়গুলি:

PMAY
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy