Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
COP27 Conference Egypt

অধরা প্রতিশ্রুতি

বস্তুত জলবায়ু প্রশ্নে উন্নত বিশ্ব বা গ্লোবাল নর্থ এবং উন্নয়নশীল বিশ্ব বা গ্লোবাল সাউথ-এর মধ্যের এ-হেন দর কষাকষির কারণে মূল সঙ্কটের প্রশ্নটি সবিশেষ উপেক্ষিত।

শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২২ ০৭:৪২
Share: Save:

কথা ছিল, প্রতি বছর উন্নত দেশগুলি ১০০ বিলিয়ন অর্থসাহায্য করবে উন্নয়নশীল দেশগুলিকে, জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলার উদ্দেশ্যে। ২০০৯ সালের সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। অথচ, গত ১৩ বছরে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ক্রমশ তীব্রতর হয়েছে। সুতরাং, এই বছরের সিওপি ২৭-এর মঞ্চে দাবি উঠেছে, উন্নত দেশগুলির কাছ থেকে প্রস্তাবিত পরিমাণের অন্তত ৬ থেকে ১১ গুণ অধিক অর্থসাহায্যের। এবং এ ক্ষেত্রে নেতৃত্বের ভূমিকায় ভারত। দরকষাকষির প্রথম সপ্তাহেই ভারত দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়েছে, প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী, রাষ্ট্রপুঞ্জের কাছে উন্নয়নশীল দেশগুলি কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের যে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে, তার বাস্তবায়ন করতে উন্নত দেশগুলির পক্ষ থেকে আর্থিক, প্রযুক্তিগত এবং সক্ষমতা নির্মাণ সংক্রান্ত ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান একান্ত কাম্য। প্রসঙ্গত, ‘অর্গানাইজ়েশন ফর ইকনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট’ (ওইসিডি) প্রদত্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ধনী দেশগুলি ২০১৩ সালে ৫২.৫ বিলিয়ন অর্থ জোগাড় করেছিল, ২০১৫ সাল নাগাদ সেই পরিমাণ নামে ৪৪.৬ বিলিয়নে। ২০২০ সালে অবশ্য তার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৩.৩ বিলিয়ন। তবে, কোনও বছরই তা প্রস্তাবিত ১০০ বিলিয়নের ধারেকাছে পৌঁছতে পারেনি। সুতরাং, অবিলম্বে এই ফাঁক পূরণ করা প্রয়োজন, এবং ভবিষ্যতে বাৎসরিক অর্থসাহায্যের পরিমাণ কী দাঁড়াতে পারে, তা পুনর্বিবেচনা করা উচিত। প্রশ্ন অন্যত্রও। অর্থ সংগ্রহের ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলি অত্যধিক মাত্রায় বেসরকারি ক্ষেত্রগুলির উপর নির্ভর করেছে। অথচ, প্রতিশ্রুতি ছিল বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহের কাজটি করা হবে। বিশেষত এই ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্য জলবায়ু পরিবর্তন রোখার কাজে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিপন্ন হতে পারত। ভারতের বক্তব্যেও উন্নত বিশ্বের দ্বিচারিতার বিষয়টি স্পষ্ট।

বস্তুত জলবায়ু প্রশ্নে উন্নত বিশ্ব বা গ্লোবাল নর্থ এবং উন্নয়নশীল বিশ্ব বা গ্লোবাল সাউথ-এর মধ্যের এ-হেন দর কষাকষির কারণে মূল সঙ্কটের প্রশ্নটি সবিশেষ উপেক্ষিত। অনস্বীকার্য যে, গ্লোবাল নর্থের মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ অবশিষ্ট বিশ্বের দেশগুলির তুলনায় ঢের বেশি। অথচ, এত দিন অবধি জলবায়ু পরিবর্তনে নিজেদের ঐতিহাসিক দায় ক্রমাগত অস্বীকার করে পরিবেশ দূষণের জন্য গ্লোবাল সাউথ-এর অতিমাত্রায় জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভরতাকে দায়ী করেছে উন্নত বিশ্ব। বিশেষত ভারতের কয়লা-নির্ভরতা বহু সমালোচিত। উন্নয়ন বনাম পরিবেশের এই দ্বন্দ্ব চিরকালীন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সিওপি ২৬-এ ভারত স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছিল, উন্নয়নের স্বার্থে জীবাশ্ম জ্বালানিকে সম্পূর্ণ পরিহার সম্ভব নয়। তাই তারা ধাপে ধাপে ব্যবহার কমানোর পক্ষপাতী। সেই একই সুর বজায় রেখে সম্প্রতি জি-২০ বৈঠকেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সওয়াল করেছেন, বিশ্বের সর্বাপেক্ষা দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাওয়া দেশ হিসাবে ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তা অব্যাহত রাখার পক্ষে। একই সঙ্গে পরিবেশ রক্ষার্থে সিওপি ২৭-এ ভারতের প্রস্তাব, শুধুমাত্র কয়লা নয়, সমস্ত জীবাশ্ম জ্বালানির ক্ষেত্রেই ধাপে ধাপে ব্যবহার কমানো। এবং উন্নয়নশীল বিশ্বে পরিবেশ বিপর্যয়ের প্রভাব মোকাবিলা করার পরিকাঠামো গড়ে তুলতে উন্নত বিশ্বকে আরও চাপ দেওয়া। অর্থাৎ, জলবায়ু রাজনীতির চাকা ঘুরছে, খাদের মুখে দাঁড়িয়ে এটুকুই আশা।

অন্য বিষয়গুলি:

COP27 Conference Egypt Climate Change
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy