১২৫ জন স্থানীয় উদ্ধারকারী ও ২৯টি সামাজিক সংগঠনকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। —ফাইল চিত্র।
চার মাস আগে ওড়িশার ভয়ঙ্কর রেল-দুর্ঘটনার স্মৃতি মুছে দিতে পারেনি উৎসবের মরসুমও, তারই মধ্যে ফের রেল-দুর্ঘটনা ঘটল, এ বার অন্ধ্রপ্রদেশে। ওড়িশায় লুপ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মালবাহী ট্রেনকে এসে ধাক্কা দিয়েছিল দ্রুতগতির এক এক্সপ্রেস ট্রেন, তার ছিটকে যাওয়া কামরা আবার পাশের লাইনে এসে পড়ে উল্টো দিক থেকে আসা সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসে ধাক্কা দেওয়ায় পরিণাম হয়েছিল মারাত্মক। আর দু’দিন আগে অন্ধ্রপ্রদেশের দুর্ঘটনাটি ঘটেছে দু’টি প্যাসেঞ্জার ট্রেনের সংঘর্ষে। ওড়িশার দুর্ঘটনার কারণ হিসাবে উঠে এসেছিল লাইনের পয়েন্টের ত্রুটি ও সিগন্যালিং ব্যবস্থার সমস্যা; অন্ধ্রপ্রদেশের ক্ষেত্রে জানা যাচ্ছে একটি যাত্রিবাহী ট্রেনের চালক সিগন্যাল উপেক্ষা করে এগোনোতেই ভয়ঙ্কর কাণ্ডটি ঘটেছে।
ভয়াবহ ও করুণ এই দুর্ঘটনার সমান্তরালেই আর একটি ‘অঘটন’কে রাখা যেতে পারে, সেটি কেরলের। পাঁচ বছর আগে সেখানকার এক রেলযাত্রী এর্নাকুলাম থেকে চেন্নাই আসার একটি এক্সপ্রেস ট্রেন তেরো ঘণ্টা দেরি করায় তিনি জেলার ‘কনজিউমার ডিসপিউটস কমিশন’-এ অভিযোগ করেছিলেন, এই বিলম্বের জন্য তাঁর অফিসের অতি জরুরি মিটিং পণ্ড হয়েছে, তার জেরে বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, এবং সর্বোপরি যাত্রীটির মানসিক উদ্বেগ, স্ট্রেস ও শারীরিক অস্বাচ্ছন্দ্য ঘটেছে যারপরনাই। সব বিবেচনা করে গত ২৭ অক্টোবর কমিশন ভারতীয় রেলওয়ে-কে ৬০,০০০ টাকা জরিমানা করেছে। এই ঘটনাটিকে ‘অঘটন’ বলার কারণ সহজেই অনুমেয়— সাধারণ মানুষ তথা রেলযাত্রীরা রেলের তাবৎ অস্বাচ্ছন্দ্য অব্যবস্থা এমনকি দুর্ঘটনাকেও নিয়তির মতো জীবনে গ্রহণ করে নিয়েছেন; রেল-দুর্ঘটনায় তিন জন বা তিনশো জন প্রাণ হারালেও জনপরিসরে আক্ষেপ-ক্ষোভের উপস্থিতি থাকে নিতান্ত সাময়িক, ভারতীয় রেল কর্তৃপক্ষও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রেলচালক-কর্মী প্রমুখকে বরখাস্ত আর পরে পোশাকি তদন্তটুকু ছাড়া ঠিক কোন সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ যে করে থাকেন তা দেবা ন জানন্তি। কিছু দিন পর পর এক-একটি দুর্ঘটনা আর বছরভর যাত্রিবাহী থেকে দূরপাল্লার ট্রেনের নানাবিধ অসঙ্গতি— যাত্রাপথে দেরি, ট্রেনে খাবার ও শৌচালয়ের অব্যবস্থা, অবাঞ্ছিত যাত্রী-উৎপাতকে ভারতীয় রেলযাত্রীরা শুধু সহ্যই করেননি, ধরেই নিয়েছেন যে, এই সবই সংশোধনের ঊর্ধ্বে।
শীতকাল সমাগত, দেশময় বিপুল পণ্য ও লক্ষ লক্ষ মানুষকে নিয়ে ছুটে চলা পণ্যবাহী ও যাত্রিবাহী ট্রেনগুলি এই সময় কুয়াশা ও ধোঁয়াশার জেরে এমনিতেই সময়ের সমস্যায় ভোগে। তদুপরি রেলের সিগন্যালিং-সহ অন্যান্য মনুষ্যসৃষ্ট ভুলের বাড়বাড়ন্তে যে দুর্ঘটনাগুলি ঘটে চলেছে, আসন্ন শীতে তা কোথায় পৌঁছবে ভাবতেও আতঙ্ক জাগে। হয়তো এই সবই সিঁদুরে মেঘ দেখে ডরানোর ভাবনা। কিন্তু আসল কথাটি হল: ভারতীয় রেলের মতো বিপুল রোজগেরে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটির দিকে আঙুল তোলার, যাত্রী-অস্বাচ্ছন্দ্য ও দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ‘দায়বদ্ধ’ করে তোলার কাজটি আজও জোরকদমে শুরু হয়নি। সেই কারণেই যাত্রী-অভিযোগের জেরে রেলকে অর্থদণ্ডের নির্দেশের খবর সাধারণ্যে বিরল ব্যতিক্রমী বোধ হয়; জাপানের মতো দেশে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের বিলম্বে রেল কর্তৃপক্ষের দুঃখপ্রকাশ করার ঘটনা ‘খবর’ হয়। ভারতীয় রেলের যাত্রী-দায়বদ্ধতা আর কবে, কোন শতাব্দীতে আসবে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy