Advertisement
২৫ অক্টোবর ২০২৪
Dilapidated House

বাড়ির বিপদ

এই বর্ষাতেই বাগুইআটিতে বাড়ি ভেঙে এক কিশোরের মৃত্যুর পরেও হুঁশ ফেরেনি। পরিসংখ্যানে প্রকাশ, শহরে প্রায় চার হাজারের কাছাকাছি বিপজ্জনক বাড়ি রয়েছে।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:৪৯
Share: Save:

আবেগ বড় বিষম বস্তু। ক্ষেত্রবিশেষে বাস্তববুদ্ধিকে গুলিয়ে দিয়ে তা বড় বিপদ ডেকে আনতে সক্ষম। কলকাতার জীর্ণ পুরাতন বাড়িগুলির বাসিন্দাদের মধ্যে অবশ্য শুধুমাত্র আবেগ নয়, তাঁদের বিপজ্জনক বাসস্থানটিকে ঘিরে নানাবিধ কুযুক্তিও যথেষ্ট কাজ করে। কখনও সীমাহীন উদাসীনতায় সম্ভাব্য বিপদকে তাঁরা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করেন, কখনও বলেন এক বার বাড়ি ছাড়লে সে বাড়ি দখল হয়ে যাবে। অগত্যা, প্রতি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে এই বাড়ির বাসিন্দা এবং পথচলতি মানুষদের নিরাপত্তা বিষয়ে আশঙ্কায় ভুগতে হয় পুরপ্রশাসনকে। সাম্প্রতিক ডেনা নামক ঘূর্ণিঝড়টির আগমনের প্রাক্কালে একই উদ্বেগ অনুভূত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় শেষ পর্যন্ত কত দূর ক্ষতি সাধন করবে, তা সময়ই বলবে। কিন্তু অন্য সময়ও কালবৈশাখী, অতি বৃষ্টি, অথবা অকস্মাৎ বাড়ির অংশবিশেষ ভেঙে আহত হওয়ার, এমনকি মৃত্যুর নানা ঘটনা ঘটেছে। অঘটনের হাত থেকে পথচলতি মানুষও রেহাই পাননি।

এই বর্ষাতেই বাগুইআটিতে বাড়ি ভেঙে এক কিশোরের মৃত্যুর পরেও হুঁশ ফেরেনি। পরিসংখ্যানে প্রকাশ, শহরে প্রায় চার হাজারের কাছাকাছি বিপজ্জনক বাড়ি রয়েছে। ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস পাওয়ামাত্র সেখানকার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া পুরপ্রশাসনের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। যে অনিচ্ছায় বাসিন্দাদের একাংশ বাসস্থানটি সারানোর কোনও উদ্যোগ করেন না, সেই একই অনিচ্ছা প্রদর্শিত হয় আপৎকালীন পরিস্থিতিতে বাড়ি ছাড়ার প্রয়োজন হলে। অনেকেই যুক্তি দেন, এক বার বাড়ি ছাড়লে সেখানে ফিরে আসার রাস্তাটি বন্ধ হবে। এ বিষয়ে পুরপ্রশাসনের আশ্বাসেও তাঁরা নিশ্চিন্ত হন না। একই যুক্তি দেখানো হয় সংস্কার প্রসঙ্গেও। তাঁদের অধিকাংশই দীর্ঘ কাল ধরে যৎসামান্য ভাড়ায় সেখানে বসবাস করছেন। সেই সুবিধাটি, প্রাণের বিনিময়েও, তাঁরা ছাড়তে নারাজ। তদুপরি, বহু বাড়ি নিয়ে মামলা চলছে। বাড়িভাড়ার সামান্য টাকাটিও জমা পড়ে রেন্ট কন্ট্রোলে। এমতাবস্থায় বাড়ি সংস্কারে আগ্রহ দেখান না বাড়ির মালিক। যাবতীয় দায়িত্ব মালিকের উপর চাপিয়ে নিশ্চিন্ত থাকেন বাসিন্দারাও। ফলে, খসে পড়া ইট, গজিয়ে ওঠা গাছেদের নিয়ে আতঙ্কের প্রহর গোনে বাড়িগুলি।

অথচ, এই বিষয়ে নির্দিষ্ট আইন রয়েছে পুরসভার। বিপজ্জনক বাড়ির ক্ষেত্রে পুর আইন ৪১১(১) ধারায় বাড়ি খালি করে সংস্কারের কথা বলা হয়। তাতে কাজ না হলে কড়া পদক্ষেপের নোটিস দেওয়া হয়। পরবর্তী পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট বাড়ির মালিককে মিউনিসিপ্যাল ট্রাইবুনালে ডাকা হয়। বাড়ি ভেঙে নতুন করে বানানো হলে পুরসভার পক্ষ থেকে বেশ কিছু ছাড় দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। সর্বোপরি, কেউ-ই সংস্কারে আগ্রহ না দেখালে পুরসভাই সংস্থা লাগিয়ে কাজ করবে, এমন ব্যবস্থাও রয়েছে, যার খরচ অবশ্য মালিকপক্ষকেই বহন করতে হবে। কিন্তু আইন বা সুবিধা প্রদান সত্ত্বেও যে এমন বাড়ির বিপদ কমেনি, জরাজীর্ণ বাড়ির পরিসংখ্যানেই তা স্পষ্ট। কিছু দিন পূর্বে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী বিপজ্জনক বাড়ি প্রসঙ্গে তাঁর উদ্বেগের কথা ব্যক্ত করেছিলেন। সেই উদ্বেগ প্রশাসনিক স্তরকে কতটা স্পর্শ করেছে? গণতান্ত্রিক দেশে নাগরিকের সদিচ্ছার উপর আস্থা রাখা যুক্তিযুক্ত। কিন্তু যার সঙ্গে অনেকের প্রাণের প্রশ্নটি জড়িত, সেখানে কেন প্রশাসন গোড়া থেকেই কঠোর হবে না, সে প্রশ্ন থেকেই গেল।

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Dana Cyclone KMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE