E-Paper

আগুন নিয়ে খেলা

পশ্চিমবঙ্গের সংহতির প্রতি রাজ্য বিজেপির নেতাদের নৈতিক দায়িত্ববোধের অভাব অতি উদ্বেগজনক হয়ে ওঠে— বিশেষত ভারতীয় ইতিহাসে কোনও একটি দলের সর্বভারতীয় ও প্রাদেশিক নেতৃত্বের রাজনৈতিক লক্ষ্য ও পন্থার বিরোধের বিষয়টি যখন বহুপরিচিত।

শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২৪ ০৭:৩৪
Share
Save

পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতাদের ঠিক করতে হবে, তাঁরা দলের বিভেদ সৃষ্টির রাজনীতিকে কত দূর অবধি নিয়ে যেতে দেবেন। মেরুকরণ নামক হাতিয়ারটি দিয়ে শেষ অবধি রাজ্যকে ভাগ করার পথে পা বাড়াতেও কি তাঁদের আপত্তি নেই? উত্তরবঙ্গের জন্য স্বতন্ত্র ব্যবস্থার দাবি করে প্রথমে দলের রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং পরে একাধিক বিধায়ক ও সাংসদ গত কিছু দিন যাবৎ যে শোরগোল তুলেছেন এবং দলের বঙ্গীয় নেতৃকুল যে ভাবে ওই স্বাতন্ত্র্যবাদীদের কঠোর তিরস্কার ও প্রয়োজনে শাস্তিবিধানের বদলে ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ নীতি অনুসরণ করে কার্যত তাঁদের প্রশ্রয় দিয়ে চলেছেন, তার পরে এই সংশয় কেবল স্বাভাবিক নয়, অবধারিত। বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় নামক বুড়ি ছুঁয়ে রেখে ‘আমরা অখণ্ড পশ্চিমবঙ্গই চাই’ বলে বিধিবদ্ধ ভাষণ দিলে এবং রাজ্য সভাপতি নিজের বক্তব্যের ‘প্রকৃত অর্থ’ ব্যাখ্যা করে সাফাই গাইলেই তাঁদের কর্তব্য সম্পন্ন হতে পারে না। দলের ভিতর থেকে এই ধরনের বিপজ্জনক বিচ্ছিন্নতাবাদের জিগির সম্পূর্ণ বন্ধ করার দায়িত্বও তাঁদের উপর বর্তায়। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্বও এ ক্ষেত্রে কম নয়। বাস্তবিক, তাঁরা পশ্চিমবঙ্গের অখণ্ডতা, স্বাস্থ্য ও সুস্থিতি নিয়ে ভাবিত— এমন কথা বলা অসম্ভব, বরং উত্তরবঙ্গের ঘোলা জলে মাছ ধরার বাসনাই সম্ভবত তাঁদের মন কী বাত। এমনকি দলীয় সাংসদ-বিধায়করা কেউ কেউ সরাসরি উত্তরবঙ্গের একাংশে কেন্দ্রীয় শাসনের আবদার জানানোর পরেও তাঁরা নিশ্চুপ। এই পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের সংহতির প্রতি রাজ্য বিজেপির নেতাদের নৈতিক দায়িত্ববোধের অভাব অতি উদ্বেগজনক হয়ে ওঠে— বিশেষত ভারতীয় ইতিহাসে কোনও একটি দলের সর্বভারতীয় ও প্রাদেশিক নেতৃত্বের রাজনৈতিক লক্ষ্য ও পন্থার বিরোধের বিষয়টি যখন বহুপরিচিত।

রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের নেতারা যুক্তি দিয়েছেন যে, তাঁরা উত্তরবঙ্গকে ‘পশ্চিমবঙ্গের অংশ হিসাবে’ কেন্দ্রীয় সরকারের উত্তর-পূর্ব অঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রকের শরিক করতে চেয়েছেন, যাতে ওই অংশের জন্য বিশেষ কেন্দ্রীয় সাহায্য পাওয়া যায়। বিচিত্র যুক্তি! অর্থনীতির প্রাথমিক সূত্র জানিয়ে দেয় যে, উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হলে তা সমগ্র রাজ্যের পক্ষেই মঙ্গলজনক। উত্তরবঙ্গের জন্য কেন্দ্রের বাড়তি সহযোগিতা অবশ্যই স্বাগত। বস্তুত, বিভিন্ন দিক থেকেই উত্তরবঙ্গের জেলাগুলি দক্ষিণের তুলনায় আয়, বিনিয়োগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি অর্থনৈতিক ও সামাজিক মাপকাঠিতে পশ্চাৎপদ, সুতরাং তাদের জন্য বিশেষ সহযোগিতারও যথেষ্ট যুক্তি আছে। দক্ষিণবঙ্গের তুলনায় উত্তরবঙ্গে বিজেপির নির্বাচনী সাফল্য বেশি, সুতরাং তারা সেই বিশেষ সহযোগিতার জন্য বাড়তি আগ্রহ দেখালেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু তার জন্য পশ্চিমবঙ্গের একটি অঞ্চলকে উত্তর-পূর্ব ভারতের ‘অংশীদার’ হতে হবে, এমন উদ্ভট চিন্তা কোথা থেকে আসে?

এই রহস্যের সমাধানসূত্রটি বিজেপি নেতাদের কারও কারও কথাতেই ফাঁস হয়ে গিয়েছে। তার নাম মেরুকরণ। তাঁরা জানিয়েছেন, উত্তরবঙ্গে ‘অনুপ্রবেশ’ আটকাতেই বিশেষ ব্যবস্থা দরকার। তাঁরা সাম্প্রদায়িকতার জুজু দেখিয়ে ‘হিন্দু ভোট’ এককাট্টা করতে তৎপর। উত্তরবঙ্গ তার পরীক্ষাগার। সমস্যার গুরুত্ব বোঝাতে তাঁরা এমনকি আন্তর্জাতিক সীমান্ত এবং জাতীয় নিরাপত্তার প্রসঙ্গ টেনে আনতেও ছাড়েননি। এই সব সমস্যাকে অস্বীকার করা যায় না, কিন্তু তার মোকাবিলার জন্য কেন্দ্রীয় শাসন কেন জরুরি হয়ে পড়ল? স্পষ্টতই, বিরোধী দলনেতারা আগুন নিয়ে খেলছেন। পশ্চিমবঙ্গের সুস্থিতি ও সংহতির স্বার্থেই তাঁদের এই বিপজ্জনক খেলাকে প্রতিহত করা জরুরি। গণতন্ত্রে বিরোধী দলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঙ্কীর্ণতম দলীয় স্বার্থের তাড়নায় রাজ্যের স্বার্থকে বিসর্জন দিতে চাইলে সেই ভূমিকাকে কলুষিত করা হয়, এই বোধটুকুও কি বেবাক অন্তর্হিত হয়েছে?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Union Territory West Bengal BJP BJP MLA BJP Leaders

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।