Advertisement
১৭ অক্টোবর ২০২৪
Medicines

প্রাণসঙ্কট

অথচ, ভারতকে বিশ্বের ফার্মেসি বলা হয়, কারণ বিশ্বের কুড়ি শতাংশ জেনেরিক ওষুধ ভারত থেকে রফতানি হয় নানা দেশে। জেনেরিক ওষুধের মান নিয়ে ভারতের চিকিৎসকরা বার বার প্রশ্ন তুলেছেন।

শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৪ ০৬:১৭
Share: Save:

ভারতে উৎপাদিত ওষুধের মান নিয়ে আশঙ্কা বারবারই দেখা দিয়েছে, সম্প্রতি তা ফের গাঢ় হল। ওষুধের মান পরীক্ষার জন্য নির্দিষ্ট কেন্দ্রীয় সংস্থা ‘সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজ়েশন’ (সিডিএসসিও) অতি পরিচিত এবং বহু ব্যবহৃত বেশ কিছু ওষুধের নমুনা পরীক্ষা করে জানিয়েছে, অন্তত পঞ্চাশটি ওষুধ মান উত্তীর্ণ নয়। উৎপাদক সংস্থাগুলির কয়েকটির দাবি যে, পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ ওষুধগুলি তাদের তৈরি নয়, জাল ওষুধ। প্রকৃত ঘটনা কী, জানা প্রয়োজন। যদি ওই ওষুধগুলি ভেজাল হয়, তা হলে এত জাল ওষুধ কোন পথে আসছে বাজারে, তা নির্ণয় করা চাই। ওষুধের দোকান, অবৈধ প্রস্তুতকারক ও সরবরাহকারী, সব পক্ষের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার। পাশাপাশি, ভারতে ওষুধ তৈরির সংস্থাগুলির আইন এড়ানোর অভ্যাস নিয়ে অভিযোগও কম নয়। সিডিএসসিও-র শিথিলতার সুযোগ নিয়ে ভারতের কিছু সুপরিচিত সংস্থাও নিম্ন মানের ওষুধ উৎপাদন ও রফতানি করে চলেছে: ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল এবং লান্সেট-এর মতো পত্রিকায় একাধিক গবেষণাপত্রে তা প্রকাশিত। আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) ওষুধের মান পরীক্ষার পরে ভারতের যে সংস্থাগুলিকে বিপুল টাকা জরিমানা করেছে, ওষুধ বাতিল করেছে অথবা সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে, সেগুলির অধিকাংশই সিডিএসসিও-র নজর এড়িয়ে গিয়েছে।

অথচ, ভারতকে বিশ্বের ফার্মেসি বলা হয়, কারণ বিশ্বের কুড়ি শতাংশ জেনেরিক ওষুধ ভারত থেকে রফতানি হয় নানা দেশে। জেনেরিক ওষুধের মান নিয়ে ভারতের চিকিৎসকরা বার বার প্রশ্ন তুলেছেন। এখন দেখা যাচ্ছে, ব্র্যান্ড নাম-সম্বলিত ওষুধও নিরাপদ নয়। ২০২২ সালে ভারতে তৈরি কাফ সিরাপ খেয়ে আফ্রিকার গাম্বিয়ায় ঊনসত্তর জন শিশুর কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ বিষয়ে ভারতকে সতর্ক করলে সিডিএসসিও ধারাবাহিক তদন্তে বিভিন্ন ফার্মা সংস্থার নানা ত্রুটি আবিষ্কার করে। ভারত সরকার নিয়ম করে, পরীক্ষা না করে কোনও কাফ সিরাপ রফতানি হবে না। এর পরেও ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সিডিএসসিও-র পরীক্ষায় চুয়ান্নটি সংস্থার তৈরি কাফ সিরাপ বাতিল হয়েছিল। অর্থাৎ সরকারি সতর্কতা সত্ত্বেও মানের সুরক্ষা সম্ভব হয়নি। সেপ্টেম্বরে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে স্যালাইন চালানোয় রোগীদের কাঁপুনি শুরু হয়। ওই ব্যাচের স্যালাইন পরীক্ষার জন্য সংগৃহীত হয়েছে। ওই হাসপাতালে এমন সঙ্কট গত বছরও দেখা গিয়েছিল।

অর্থাৎ নিম্নমানের ওষুধ বা জাল ওষুধ ব্যতিক্রমী নয়, বিচ্ছিন্নও নয়। বার বার সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা প্রকাশ্যে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে, স্যালাইন কিংবা ওষুধের মানে সমস্যা রয়েছে। সেগুলি হয় কাজ করছে না, নয়তো রোগীর বিপদ ঘটাচ্ছে। কিন্তু প্রায় কোনও ক্ষেত্রেই দেখা যায়নি যে, ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাকে দোষী সাব্যস্ত করে কঠোর শাস্তি দিয়েছে সরকার। সম্প্রতি আর জি কর হাসপাতালে সিল-করা প্যাকেটের ভিতর থেকে রক্তের ছোপ-ধরা গ্লাভস পাওয়ার সংবাদও রাজ্যবাসীকে বিপর্যস্ত করেছে। দুর্নীতি, অবহেলার এই চক্র কত প্রাণ অকালে কেড়ে নিচ্ছে, ওষুধের প্রতি প্রতিরোধ তৈরি করে জনস্বাস্থ্যকে কতখানি বিপন্ন করছে, তার আন্দাজ করতেও ভয় হয়। এখনই এই বিপদের নিরসন প্রয়োজন।

অন্য বিষয়গুলি:

medicines Manufacturers India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE