E-Paper

অশান্ত পশ্চিম

বলা বাহুল্য, তেহরানে হানিয়ে-কে হত্যা করে ইজ়রায়েল দেখিয়ে দিয়েছে যে, শত্রুপক্ষের ডেরায় ঢুকে সফল অভিযান সম্পন্ন করার ক্ষমতা রয়েছে তাদের।

শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০২৪ ১১:০০
Share
Save

তপ্ত হয়ে উঠেছে পশ্চিম এশিয়ার ভূরাজনৈতিক আবহ। জুলাইয়ের শেষে বেরুটে হিজ়বুল্লা নেতা ফৌদ শুক্‌র এবং তেহরানে হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়ে-র মৃত্যুতে পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধের সমীকরণ বদলে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। শুক্‌র-এর মৃত্যুর দায় ইজ়রায়েল নিলেও, হানিয়ে-র ক্ষেত্রে তেমন কোনও দাবি করেনি তারা। কিন্তু তাদের দিকেই আঙুল তুলেছে ইরান। হুমকিও দিয়েছে প্রত্যুত্তরের। এপ্রিলের গোড়ায় দামাস্কাসের দূতাবাস চত্বরে ইজ়রায়েলের বোমার হামলার প্রত্যুত্তর ইরান দিয়েছিল প্রায় তিনশো ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে। সে যাত্রা তেল আভিভ রক্ষা পায় নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি আমেরিকা ও অন্যান্য মিত্র দেশের সাহায্যের ফলে। দূতাবাস চত্বরে হামলার উত্তরে যেখানে ওই মাপের প্রত্যাঘাত করেছিল ইরান, সেখানে খাস তেহরানের মাটিতে তাদের এক সহযোগীর হত্যার প্রত্যুত্তর নিয়ে গোটা দুনিয়া আশঙ্কায়। এমনিতেই পশ্চিম এশিয়ার একাধিক দেশে হামাস, হিজ়বুল্লা এবং হুথিদের মতো ‘ছদ্ম প্রতিনিধি’ ছড়িয়ে থাকায়, বিভিন্ন মাত্রায় এবং একাধিক দিক থেকে হামলা চালানোর সুযোগ রয়েছে তেহরানের কাছে। পশ্চিম এশিয়ার কূটনৈতিক প্রেক্ষাপটে ওয়াশিংটনের অন্যতম বিশ্বস্ত সঙ্গী ইজ়রায়েল। মিত্র রাষ্ট্রের উপরে হামলার আশঙ্কায় তাই এই অঞ্চলে ইতিমধ্যেই সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে আমেরিকাও।

বলা বাহুল্য, তেহরানে হানিয়ে-কে হত্যা করে ইজ়রায়েল দেখিয়ে দিয়েছে যে, শত্রুপক্ষের ডেরায় ঢুকে সফল অভিযান সম্পন্ন করার ক্ষমতা রয়েছে তাদের। একই সঙ্গে তারা উন্মুক্ত করে দিয়েছে ইরানের নিরাপত্তা এবং গোয়েন্দা বিভাগের দুর্বলতাকেও। গত অক্টোবরে ইজ়রায়েলের উপর সন্ত্রাসবাদী হামলার পরে তাদের কোনও নেতাই যে আর নিরাপদ নয়, হামাসকে এ বার্তা দিয়েছে তেল আভিভ। তবে, প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু-র এ-হেন লাগামছাড়া সামরিকবাদের নীতি ইজ়রায়েলের পক্ষে বিপত্তি ডেকে আনতে পারে। হানিয়ে-র হত্যা সেই সময়েই ঘটে, যখন গাজ়ায় যুদ্ধবিরতি এবং পণবন্দি মুক্তি নিয়ে আলোচনায় কিছুটা অগ্রগতি হয়েছিল ইজ়রায়েল এবং হামাসের মধ্যে। হামাসের মধ্যে হানিয়ে-ই ছিলেন তুলনামূলক ভাবে মধ্যপন্থী, যিনি যুদ্ধবিরতির পক্ষেই সওয়াল করে এসেছেন। ফলে প্রশ্ন উঠছে, তেহরানে তাঁকেই হত্যা করে নেতানিয়াহু কি স্পষ্ট ইঙ্গিত দিলেন যে, তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চান? একই সঙ্গে তেহরানে হামলাটি চালিয়ে ইরানকেও কি কার্যত তাদের উপরে হামলা করার জন্য প্ররোচিত করলেন না তিনি? ইরান ও ইজ়রায়েল যদি এর মাঝে সম্মুখ সমরে লিপ্ত হয়, তবে আমেরিকা-সহ অন্যান্য দেশেরও এই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। এপ্রিলের ঘটনার পরে ইজ়রায়েলের উপরে রাশ টেনে দুই দেশের মধ্যে সংঘাত কোনও ক্রমে আটকাতে সক্ষম হয়েছিল বাইডেন সরকার। কিন্তু ইজ়রায়েলে সাম্প্রতিক হামলা পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতিকে আরও খাদের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ইরানের প্রত্যাঘাতের আশঙ্কার মাঝে মধ্যস্থতাকারী দেশগুলি ইতিমধ্যেই দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে গাজ়ায় যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে উঠেপড়ে লেগেছে, কিন্তু প্রশ্ন হল, অতঃপর আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এতে কী ভূমিকা পালন করবে? পশ্চিমের উত্তাপ কমবে না দাবানলে পরিণত হবে, তার উপর বিশ্বশান্তি নির্ভর করছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Iran-Israel Conflict Israel-Hamas Conflict Israel-Palestine Conflict Israel-Hezbollah Conflict Ismail Haniyeh Iran Hezbollah

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy