E-Paper

নিঃশব্দ ঘাতক

মাত্র ক’দিন আগেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে ভারতকে বলা হয়েছে ‘বিশ্বের মধুমেহ রাজধানী’। মধুমেহ বা ডায়াবিটিস তো তবু চেনা, কিন্তু একেবারে যা অজানা তা হল এনএএফএলডি, নিঃশব্দ ঘাতকের মতো যে এগিয়ে আসছে ভারতে।

শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:৫০
Share
Save

যাকে রোগ বলে চিনি, তার চিকিৎসা বা প্রতিকার হয়। কিন্তু যাকে অসুখ বলে খবরই রাখে না কেউ, তার চিকিৎসা হবে কী করে? এই বিপদের মুখেই দাঁড়িয়ে ভারত। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক গত সেপ্টেম্বরের শেষে একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজ়িজ় (এনএএফএলডি) নিয়ে। যদিও তা জনগণের জন্য নয়, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য, তাঁরা যাতে আগে সচেতন ও সতর্ক হন সেই উদ্দেশ্যে— তবু ভারতের মতো বিরাট ও জনবহুল দেশের গণস্বাস্থ্যের স্বার্থেই এই বিষয়ে জেনে রাখা অতি জরুরি। মাত্র ক’দিন আগেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে ভারতকে বলা হয়েছে ‘বিশ্বের মধুমেহ রাজধানী’। মধুমেহ বা ডায়াবিটিস তো তবু চেনা, কিন্তু একেবারে যা অজানা তা হল এনএএফএলডি, নিঃশব্দ ঘাতকের মতো যে এগিয়ে আসছে ভারতে। নিঃশব্দ, কারণ তা আপাত-উপসর্গহীন। অথচ এই ‘ডিজ়অর্ডার’ই ক্রমে ঘনিয়ে তুলতে পারে সিরোসিস ও লিভার ক্যানসারের মতো ভয়ঙ্কর রোগের ঝুঁকি, প্রতি দশ জনের মধ্যে তিন জন ভারতীয়ের দেহে। বলা হচ্ছে, বয়স, লিঙ্গ, এলাকা ও আর্থ-সামাজিক অবস্থানভেদে এরই মধ্যে তার ব্যাপকতা ঘোরাফেরা করছে ৯ থেকে ৩২ শতাংশের মধ্যে।

এনএএফএলডি-র মূলে যা, সেই ফ্যাটি লিভার-এর সঙ্গে বাঙালি তথা ভারতীয়েরা অবশ্য অনেকেই পরিচিত। তাঁরা জানেন, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাঁদের জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসের অসংযম, শরীরচর্চার অভাব। গড় বিশ্ববাসী যে খাবার খান, তার তুলনায় ভারতীয় খাবারে তেল-মশলা-স্নেহপদার্থের গড় প্রয়োগ অনেক বেশি, তুলনায় ভারতীয়দের হজমশক্তি, ব্যায়ামের অভ্যাস থেকে শুরু করে দৈনন্দিন ও সামগ্রিক স্বাস্থ্য-সচেতনতা, সবই কম— বাঙালির আরও কম। এক দিকে ‘পেটরোগা’, অন্য দিকে ‘লম্বোদর’, এই দুই চরমের মধ্যে তাদের অসহায় ঘোরাফেরা, বললে ভুল হবে না। কিন্তু ‘পেট’ বলতে শুধু জঠরই নয়, শরীরের মধ্যে লিভারের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশটি যে এই চরম অনিয়ন্ত্রণের ফলে দিন দিন কমজোরি ও অসুস্থ হয়ে পড়ছে, বাড়ছে জীবনাশঙ্কাও, সেই অপ্রিয় সত্যটি বাঙালি তথা ভারতীয়দের কানের কাছে বারংবার বলার সময় এসেছে। বোঝার সময় এসেছে, শুধু অসংযত মদ্যপানই নয়, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনও এগিয়ে দিতে পারে সিরোসিস ও ক্যানসারের দিকে। নির্দেশিকা মতে, এনএএফএলডি গোড়ার দিকে শনাক্ত হলে তাকে সামলানো সম্ভব। দরকার ওজন কমানো, খাবারে ক্যালরি সীমিত রাখা, ফ্যাট কার্বোহাইড্রেট ও শর্করাযুক্ত খাবার কমিয়ে দেওয়া; অন্য দিকে নিয়ম করে শরীরচর্চা ও ব্যায়াম, অন্তত শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সঞ্চালনা হয় এমন কাজ ও অভ্যাসের মধ্যে থাকা।

নির্দেশিকাটি স্বাস্থ্যকর্মীদের উদ্দেশে, যাতে তাঁরা রোগীদের এ নিয়ে সতর্ক করতে পারেন। কিন্তু জনস্বাস্থ্যের গুরুত্বের কারণেই এনএএফএলডি নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির প্রচার অভিযানে নামা দরকার নয় কি— সাম্প্রতিক বা দূর অতীতে যেমন এডস, ডেঙ্গি বা কোভিডের ক্ষেত্রে হয়েছে? প্রযুক্তি ও সমাজমাধ্যমকেও এ কাজে ব্যবহার করা দরকার, দরকার এনএএফএলডি-র সচেতনতা-দূত হিসেবে সমাজের বিশিষ্টজনদের কাজে লাগানো। যে রোগের ‘ওষুধ’ দুর্মূল্য নয়, জীবনযাপনের মোড় বদলেই যার প্রতিকার সম্ভব, তা নিয়ে সচেতনতার দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Health care Health Care Tips Public awareness Fatty Liver Problem Fatty Liver Symptoms Fatty Liver

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।