—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
এর পর চানাচুর কিনতে খরচ সামান্য হলেও কমবে, হেলিকপ্টারের সিটের ভাড়াও— গত সপ্তাহে জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকের সারসংক্ষেপ হিসাবে এই কথাটি বললে ভুল হবে না। বৈঠকে একই সঙ্গে গৃহীত হল গুরুত্বপূর্ণ ও অকিঞ্চিৎকর সিদ্ধান্ত, এবং স্থগিত রইল একাধিক গুরুতর সিদ্ধান্ত। স্থির হয়েছে, ক্যানসারের চিকিৎসায় অতিপ্রয়োজনীয় একাধিক ওষুধের উপরে জিএসটির হার কমিয়ে পাঁচ শতাংশ করা হবে। গবেষণার ক্ষেত্রেও সরকারি এবং বেসরকারি, উভয় গোত্রের ব্যয়কেই করমুক্ত করা হল। দু’টি সিদ্ধান্তই অতি স্বাগত। বস্তুত, ক্যানসারের ওষুধকেও করমুক্ত করা যেত কি না, সে কথাও ভেবে দেখা যায়। অন্য দিকে, গোটা হেলিকপ্টার ভাড়া করলে তাতে করের হার অপরিবর্তিত থাকছে, কিন্তু শেয়ারে গেলে কর কমছে— এই সিদ্ধান্তটির অভিমুখ মূলত তীর্থযাত্রীদের দিকে। অমরনাথ থেকে বৈষ্ণোদেবী, ইদানীং বহু হিন্দু তীর্থস্থানেই চালু হয়েছে হেলিকপ্টার পরিষেবা। তার খরচ কমলে ভোটে সুবিধা মিলতে পারে।
যে দু’টি সিদ্ধান্ত বকেয়া থাকল, তার প্রথমটি জীবনবিমা ও স্বাস্থ্যবিমার উপরে প্রযোজ্য কর বিষয়ে। এই মুহূর্তে দুই গোত্রের বিমার উপরেই ১৮ শতাংশ হারে জিএসটি আদায় করা হয়। দীর্ঘ দিন ধরেই দাবি উঠছে যে, এই হার হ্রাস করা হোক। প্রত্যাশিত ছিল, গত সপ্তাহের বৈঠকে সেই সিদ্ধান্ত হবে। তার পরিবর্তে বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধরির নেতৃত্বে একটি কমিটি তৈরি হয়েছে, যা এই ক্ষেত্রে কর হ্রাসের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখবে। ভারতে বিমা করানোর প্রবণতা এমনিতেই কম— উন্নত দুনিয়ার সঙ্গে তুলনায় তো বটেই, এমনকি দ্রুত উন্নয়নশীল বিশ্বের মাপকাঠিতেও ভারতের অবস্থা খুব উজ্জ্বল নয়। কিন্তু, বিশেষত স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ব্যয় এমনই ঊর্ধ্বমুখী যে, বিমা কার্যত অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। এই অবস্থায় সরকারের কর্তব্য ছিল বিমায় প্রণোদনা দেওয়া। তার সহজ পন্থা বিমার উপরে করের হার হ্রাস করা, এবং তার যথেষ্ট বিজ্ঞাপন। দ্বিতীয় কাজটিতে যে-হেতু কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ পারদর্শিতা আছেই, ফলে বিমার প্রণোদনা তৈরি করার কাজটি অর্ধেক হয়েই আছে। এ ক্ষেত্রে প্রবীণ নাগরিক বা নারীদের ক্ষেত্রে কর সম্পূর্ণ মকুব করা যায় কি না, সে কথাও ভাবা প্রয়োজন। দ্বিতীয় বকেয়া সিদ্ধান্তটি হল, জিএসটির উপরে কমপেনসেশন সেস আদায় করা বন্ধ হবে কি না। ২০১৭ সালে যখন জিএসটি প্রবর্তিত হয়, তখন স্থির হয়েছিল, এর ফলে রাজ্যগুলির যে রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে, তা পরবর্তী পাঁচ বছর সেস আদায় করে পুষিয়ে দেওয়া হবে। সেই মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে ২০২২ সালে। কিন্তু সেসটি চলছে— কোভিডকালে যে ধার হয়েছিল, তা পরিশোধ করার জন্য সেস তোলা হচ্ছে। এখন জিএসটি আদায়ের হার ভাল, ফলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে, ঘোষিত মেয়াদের আগেই এই সেসের মাধ্যমে ঋণ পরিশোধের টাকা উঠে আসবে। তার পর সেস আদায় বন্ধ করা হবে, না কি তা ফের নতুন কোনও কাজে ব্যবহার করা হবে, সেই সিদ্ধান্তটি করা প্রয়োজন।
জিএসটি প্রবর্তনের সময় কেন্দ্রীয় সরকার একটি কথা জোর দিয়ে বলেছিল— ভারতে পরোক্ষ কর ব্যবস্থায় যে জটিলতাগুলি ছিল, জিএসটি-তে তা থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী এর নামই দিয়েছিলেন ‘গুড অ্যান্ড সিম্পল ট্যাক্স’। কিন্তু, পরবর্তী সাত বছরে দেখা গেল, জটিলতা কমা যে সাধনার ফল, জিএসটি কাউন্সিলে তাতে আগ্রহ নেই। করের ধাপের সংখ্যা কমিয়ে আনা, পণ্যের বৃহত্তর শ্রেণি অনুসারে কর আরোপ ইত্যাদি যে নীতিগুলি ‘গ্লোবাল বেস্ট প্র্যাকটিস’-এর অন্তর্গত, ভারত সে পথে এখনও হাঁটেনি। অর্থনৈতিক যুক্তরাষ্ট্রীয়তা যোগ করেছে আরও এক ধাপ জটিলতা। কী ভাবে এই করব্যবস্থাকে সরল এবং স্বচ্ছতর করে তোলা যায়, কাউন্সিলকে সে কথা ভাবতে হবে। ব্যবস্থাটি প্রবর্তনের পরে সাত বছর কেটে গেল, অথচ এই জটিলতাগুলির সমাধান হল না, এটি জিএসটি প্রশাসনের কুশলতা বিষয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত দেয় না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy