Advertisement
E-Paper

আত্মসর্বস্ব

এই অন্যায় অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার। সম্প্রতি ভারতে, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে দাবি-দাওয়া আদায়ের ক্ষেত্রে অবরোধের পথ বাছিয়া লইবার প্রবণতাটি অত্যধিক বৃদ্ধি পাইয়াছে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২১ ০৬:১৫
Share
Save

এই বঙ্গে ঐতিহ্যের দাবি কি একটি শিশুর প্রাণের চাহিয়া অধিক গুরুত্বপূর্ণ? নয়তো অবরুদ্ধ রাস্তায় সাত বৎসরের সাকিবুলের প্রাণবায়ু বাহির হইতেছে দেখিয়াও তাহার অ্যাম্বুল্যান্সটিকে রাস্তা করিয়া দেওয়া গেল না কোন যুক্তিতে? যে দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় সড়কের ন্যায় একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা রাতারাতি বন্ধ করা হইয়াছিল, তাহার উপর পূর্বেই কলিকাতা হাই কোর্ট নিষেধাজ্ঞা আরোপ করিয়াছিল। করোনাকালে বিসর্জনের শোভাযাত্রায় হাজার হাজার মানুষের জমায়েত বিপদ ডাকিয়া আনিতে পারে— ইহা অজানা নহে। নিষেধাজ্ঞা সেই কারণেই। তৎসত্ত্বেও প্রথা বজায় রাখিবার দাবিতে অবরুদ্ধ হইল জাতীয় সড়ক। এবং এই ক্ষেত্রে অত্যাশ্চর্য হইতে হয় প্রশাসনের ভূমিকায়। অঘটন ঘটিতে পারে জানিয়া এবং দেখিয়াও তাহারা কার্যত নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করিল। বেআইনি অবরোধ ঠেকাইবার নির্দিষ্ট আইন আছে। সেই কথা কি পুলিশের সেই মুহূর্তে মনে পড়ে নাই?

এই অন্যায় অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার। সম্প্রতি ভারতে, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে দাবি-দাওয়া আদায়ের ক্ষেত্রে অবরোধের পথ বাছিয়া লইবার প্রবণতাটি অত্যধিক বৃদ্ধি পাইয়াছে। এক শ্রেণির মানুষ ধরিয়াই লইয়াছেন, তুচ্ছ বিষয় লইয়াও দৃষ্টি আকর্ষণ করিতে হইলে পথ, রেল অবরোধই সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা। ফলত, হয়রানির শিকার হইতেছেন অগণিত সাধারণ মানুষ। অবশ্যই ইহার পশ্চাতে রাজনৈতিক উস্কানি একটি বড় কারণ। তবে উস্কানি যে দলেরই হউক, দাবির ক্ষেত্রটি রাজনৈতিক হউক, অথবা সামাজিক, অন্যের অসুবিধা সৃষ্টি করিয়া যে কোনও ধরনের অবরোধ, জমায়েতকে কড়া হাতে নিয়ন্ত্রণ করিবার সময় আসিয়াছে। এবং এই ক্ষেত্রে দলীয় পরিচিতির বাহিরে গিয়া সর্বসাধারণের প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করিতে হইবে। জনগণের সুবিধা-অসুবিধার দিকটি দেখা কোনও দলের নহে, নির্বাচিত সরকারের প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পালন করিবার সময় দল এবং সরকারের মধ্যে একটি সুস্পষ্ট বিভেদরেখা থাকা প্রয়োজন। মনে রাখিতে হইবে, অবরোধের রাজনীতি শুধুমাত্র বিরোধীরাই করিয়া থাকেন না, শাসক দলের নেতা-কর্মীরাও প্রায়শই তাহাতে শামিল হন। সুতরাং, কোনও রাজনৈতিক রং না দেখিয়া সরকারকে নিশ্চিত করিতে হইবে যোগাযোগব্যবস্থা সচল রাখিবার পরিকাঠামো যাহাতে দাবিদাওয়ার চক্রে পড়িয়া ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সাকিবুলের পরিণতি যেন অন্য কাহারও না হয়।

এবং এই ক্ষেত্রে শুধুমাত্র যোগাযোগব্যবস্থা নহে, সামাজিক অবক্ষয়ের প্রশ্নটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। সহ-নাগরিকের প্রতি সমানুভূতির অভাবের যে নিদর্শন প্রতিনিয়ত দেখা যাইতেছে, তাহা স্বস্তি দেয় না। এই ভয়ঙ্কর অবক্ষয় রোধ করিতেই হইবে। চোর সন্দেহে যুবকের বুকে পা তুলিয়া দেওয়া, মৃতপ্রায় বৃদ্ধকে ফুটপাতে দেখিয়া মুখ ঘুরাইয়া চলিয়া যাওয়া, মহিলাকে লাঞ্ছিত হইতে দেখিয়াও সহযাত্রীর নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করা— এই সকলই, আসলে এক সূত্রে বাঁধা। ইহাতে এক ধরনের আত্মসর্বস্বতা আছে, সহমর্মিতার লেশমাত্র নাই। এই দৃষ্টিকোণ হইতে দেখিলে সাকিবুলের মৃত্যু হয়তো অস্বাভাবিক ঠেকিবে না। এই বধির, আত্মসর্বস্ব, উদাসীন সমাজ ভয়ঙ্কর। আগামী প্রজন্ম কি এই সমাজই উপহার পাইতে চলিয়াছে?

jagadhatri puja procession

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।