Advertisement
E-Paper

অকালবিবাহ

পরিসংখ্যান বলছে, কন্যাশ্রী, রূপশ্রীর মতো জনপ্রিয় প্রকল্প করেও মেয়েদের সুরক্ষার ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য এখনও অধরাই।

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০২২ ০৪:৫৬
Share
Save

কিছু দিন পূর্বে সংবাদে উঠে এসেছিল ঝাড়গ্রাম জেলার একটি নাবালিকা বিবাহের ঘটনা। নাবালিকা বিবাহের সংবাদ পেয়ে প্রশাসনিক তৎপরতা নতুন নয়। এই ক্ষেত্রেও তা দেখা গিয়েছে। কিন্তু ঘটনাটির গুরুত্ব নিহিত আছে মেয়েটির বাবার একটি উক্তির মধ্যে। ধরা পড়ার পর বিস্মিত তিনি জানিয়েছেন, এমন তো অনেকেই করে থাকেন। সামান্য কথাটির মধ্যে এক রূঢ় বাস্তব প্রতিফলিত। বাস্তব এটাই যে, সরকারি প্রচার সত্ত্বেও নাবালিকা বিবাহের মতো ঘৃণ্য অপরাধ এখনও এই রাজ্যে নিয়মিত ঘটে চলেছে, এবং সংখ্যাটিও যথেষ্ট উদ্বেগের। সম্প্রতি প্রকাশিত জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষা থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যানেও সেই দিকেই ইঙ্গিত। বলা হয়েছে, ভারতে ২৫ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায় ১৮ বছরের আগেই। এবং পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এই হার ৪২ শতাংশ। সমীক্ষা থেকে এও স্পষ্ট যে, নাবালিকা বিবাহের জাতীয় হার হ্রাস পেলেও পঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গ, মণিপুর, ত্রিপুরা, অসমে সেই হার ঊর্ধ্বমুখী।

পরিসংখ্যান বলছে, কন্যাশ্রী, রূপশ্রীর মতো জনপ্রিয় প্রকল্প করেও মেয়েদের সুরক্ষার ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য এখনও অধরাই। ২০১৩ সালে নাবালিকা বিবাহ এবং মেয়েদের শিক্ষাবঞ্চনা রুখতেই ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পের সূচনা। তা সত্ত্বেও রাজ্যের প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি কন্যাসন্তান মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পার করার আগেই ‘পাত্রস্থ’ হচ্ছে। প্রশাসনিক তৎপরতায় অনেক ক্ষেত্রে নাবালিকা বিবাহ আটকানো সম্ভব হয়েছে। কখনও পড়তে চাওয়া মেয়েরাই নিজের বিয়ে আটকেছে, কখনও সহমর্মী শিক্ষক-সহপাঠীরা এগিয়ে এসেছেন। কিন্তু ঘটনাগুলি সামগ্রিক অন্ধকারাচ্ছন্ন চিত্রের ভিতর ব্যতিক্রম হিসাবেই থেকে গিয়েছে। নাবালিকা বিবাহের সংবাদ পেলে প্রাথমিক ভাবে প্রশাসনিক তরফে অভিভাবকদের বোঝানো, আঠারো-উত্তীর্ণ না হলে মেয়ের বিবাহ দেওয়া যাবে না— এই মর্মে মুচলেকা লিখিয়ে নেওয়া, এমন পদক্ষেপ করা হয়। সেখানেও দেখা গিয়েছে, অভিভাবকরা বিবাহ বন্ধের প্রস্তাবে সম্মত হলেও পরবর্তী কালে মেয়েটিকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে গিয়ে গোপনে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই তথ্যগুলি সর্বদা প্রশাসনের গোচরে আসে না। গোপনে কত ফুল যে প্রতিনিয়ত হারিয়ে যাচ্ছে, তার হিসাব কে-ই বা রাখে।

অতিমারির ফলে এই সঙ্কট আরও ঘনীভূত। স্কুল খোলার পর দেখা গিয়েছে বহু আসন শূন্য। সেই ছাত্রীরা আর কোনও দিন স্কুলে পা রাখবে না, ধরে নেওয়া যায়। বহু ক্ষেত্রেই বিদ্যালয় বন্ধ এবং পরিবারের আর্থিক পরিস্থিতির অবনতির সুযোগে নাবালিকা কন্যার বিবাহ দিয়ে দায়মুক্ত হয়েছে পরিবার। অনেক ক্ষেত্রে পারিবারিক হিংসা থেকে পরিত্রাণ পেতে মেয়েরাও ঘর ছেড়েছে। এইখানে সরকারের একটি আত্মবিশ্লেষণ প্রয়োজন। সরকারি পর্যবেক্ষণ সত্ত্বেও কী ভাবে এমন ঘটনা নিয়মিত ঘটে চলেছে, সেই ফাঁকগুলি নির্দিষ্ট করে পূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধা সত্ত্বেও কেন আজও নাবালিকা কন্যাসন্তান দায় বলে চিহ্নিত হচ্ছে, সেই কারণগুলি চিহ্নিত করতে হবে। নিঃসন্দেহে কন্যাশ্রী, ঐক্যশ্রীর ন্যায় প্রকল্প মেয়েদের হাত শক্ত করার উদ্দেশ্যেই কাজ করছে। কিন্তু আত্মতুষ্টির জায়গা নেই। কী করা হয়েছে, সেই ঢাক না পিটিয়ে অবিলম্বে কী করা প্রয়োজন, সেই বিষয়ে আলোচনা চাই। কারা করবেন, কবে?

Child Marriage Pandemic

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}