শীতকালে গ্রীষ্মের কথা বললে বিরক্তি জাগা স্বাভাবিক। বিশ্ব ব্যাঙ্ক তবু সে কাজটাই করেছে, সম্প্রতি এক রিপোর্টে মনে করিয়ে দিয়েছে, ভারত অদূর ভবিষ্যতে এমন তাপপ্রবাহে ভুগবে যা মানুষের সহ্যক্ষমতার বাইরে। পরের কথা পরে বলে উড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপার এ নয়, কারণ দেশের মানুষ বুঝতেই পারছেন না, যে গ্রীষ্ম তাঁরা কাটিয়ে এলেন সেটি ছিল অস্বাভাবিক চড়া তাপমাত্রার, ঋতুটি এসেছে আগে আগে, থেকেছে তুলনায় দীর্ঘ সময়। গত কয়েক দশকের তথ্যে দেখা যাচ্ছে গরমে তাপপ্রবাহের ঘটনা এখন বিপজ্জনক ভাবে নিয়মিত, এমন চললে অচিরে তা মানবশরীরের সহনমাত্রা ছাড়াবে। এ বছর এপ্রিলে দিল্লির তাপমাত্রা ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছিল, বসন্ত-শেষের মার্চেও ছিল রেকর্ড গরম। সন্দেহ নেই, দক্ষিণ এশিয়া নিয়ে জলবায়ু বিজ্ঞানীদের সাবধানবাণী, গত বছর অগস্টে আইপিসিসি-র রিপোর্ট এবং জি-২০ ক্লাইমেট রিস্ক অ্যাটলাস-এ এই দশক জুড়ে ভারতীয় উপমহাদেশের ক্রমাগত তাপপ্রবাহে দগ্ধ হওয়ার চেতাবনি সত্যি হতে চলেছে।
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বিশ্বের দেশগুলো একত্র হয়েছে, কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে নিয়েছে, সে লক্ষ্যে কাজও চলেছে। তবু এমন সাবধানবাণীতে আশঙ্কা জাগতে বাধ্য। সাধারণ মানুষের কাছে এ একই সঙ্গে দুশ্চিন্তা ও বিভ্রান্তির, কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় ঘোষিত নীতি বা কৃত পদক্ষেপে নাগরিকের ভূমিকা নেই বললেই চলে, সরকার বা রাষ্ট্র মনে করে এ নিতান্তই তাদের ব্যাপার, তাদের কাজ। অথচ তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাব সরাসরি আঘাত করে নাগরিকের জীবনেও— বিশ্ব ব্যাঙ্কের রিপোর্টে সমান জোর দিয়ে বলা আছে সে কথা। দেশের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় শ্রম দেন ভারতের কোটি কোটি নাগরিক; বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের শ্রমশক্তির প্রায় ৭৫ শতাংশই কাজ করে থাকেন অতি উচ্চ তাপমাত্রাযুক্ত কাজের পরিবেশে, যে পরিস্থিতি প্রাণও কেড়ে নিতে পারে। বলা হচ্ছে, ‘হিট স্ট্রেস’-এর জেরে আগামী আট বছরের মধ্যে সারা বিশ্বে কাজ হারাবেন আট কোটি মানুষ, তার মধ্যে ৩ কোটি ৪০ লক্ষই ভারতীয়! বিশ্বস্তরের এক ম্যানেজমেন্ট সংস্থা হিসাব কষে দেখেছে, ক্রমশ বেড়ে চলা তাপমাত্রা আর আর্দ্রতার কারণে নষ্ট হওয়া শ্রমশক্তির জেরে চলতি দশকের শেষে ভারতের জিডিপির ৪.৫ শতাংশ পর্যন্ত ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। তাপপ্রবাহ, তাপমাত্রা বৃদ্ধি ইত্যাদি যে দেশের অর্থনীতিকেও পর্যুদস্ত করতে পারে, এই সব তথ্য-পরিসংখ্যানই তার প্রমাণ।
মনে রাখা দরকার, নানা খাদ্যসামগ্রী এবং বিশেষত জীবনদায়ী ফার্মাসিউটিক্যাল সামগ্রীর রক্ষণ ও পরিবহণের ক্ষেত্রে তাপমাত্রা অতি জরুরি একটি বিষয়। দেশ জুড়ে ‘কোল্ড চেন নেটওয়ার্ক’ ঠিক থাকলে এরাও ঠিক থাকবে, আর যে কোনও ধাপে সামান্যতম প্রাকৃতিক পরিবর্তনে হতে পারে বিপুল ক্ষতি, যার ধাক্কা এসে পড়বে অর্থনীতি, জনস্বাস্থ্য ও জনজীবনের উপরেও। আর এই কারণেই জলবায়ু পরিবর্তন, উষ্ণায়ন ইত্যাদি বিষয়কে আর রাজনীতিক বা বিজ্ঞানীদের মাথাব্যথা বলে মনে করা যাচ্ছে না। নাগরিকদের বুঝতে হবে, গ্রীষ্মের তাপপ্রবাহ আর স্রেফ বিজ্ঞানবইয়ের বিষয় নেই, তা হয়ে উঠেছে জনজীবন ও জীবিকারও নিয়ামক। রাষ্ট্র তা বুঝেও না বুঝলে বুঝিয়ে দিতে হবে নাগরিককেই— নিজে সচেতন হয়ে, প্রয়োজনে পথে নেমেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy