Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Coaching Centres

চক্র

২০২০-২১’এ জাতীয় শিক্ষানীতি চালু হওয়ার বছরে কোচিং সেন্টারগুলির ব্যবসা ছিল ১২,৩০৭ কোটি টাকার, চার বছরে তা বেড়ে হয়েছে ৩০,৬৫৩ কোটি টাকা। পাশাপাশি উল্লেখ করার, এ বছর বাজেটে উচ্চশিক্ষা খাতে বরাদ্দ অর্থ ৪৭,৬২০ কোটি।

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২৪ ০৪:৪৪
Share: Save:

জাতীয় শিক্ষানীতি যখন চালু হল, একপ্রস্ত কথা উঠেছিল দেশ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা লক্ষ লক্ষ কোচিং সেন্টারগুলি নিয়ে। সেই সব কোচিং সেন্টার, ভারতের লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রী যেখানে পড়তে আসেন স্বপ্ন নিয়ে: ডাক্তারি এঞ্জিনিয়ারিং-সহ প্রতিযোগিতামূলক উচ্চশিক্ষায় সুযোগ পাওয়ার স্বপ্ন, দেশের নামীদামি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন। বলা হয়েছিল, জাতীয় শিক্ষানীতি এই কোচিং সেন্টারগুলির পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে না। কাঁটা যে সত্যিই হয়নি, বরং কোচিং সেন্টারগুলির ছেলেমেয়েদের থেকে নেওয়া অর্থের ভাগীদার হচ্ছে সরকার, তার পরিমাণও বাড়ছে বছর বছর— প্রমাণ পাওয়া গেল সংসদে। কোচিং সেন্টারগুলি ছাত্রছাত্রীদের থেকে যে টাকা নেয়, তার উপর ১৮% জিএসটি পায় সরকার। কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কোচিং সেন্টারগুলি থেকে পাওয়া মোট জিএসটি-র সরকারি খতিয়ান দিলেন, সেই সূত্রে এই তথ্যও জানা গেল: ২০২০-২১’এ জাতীয় শিক্ষানীতি চালু হওয়ার বছরে কোচিং সেন্টারগুলির ব্যবসা ছিল ১২,৩০৭ কোটি টাকার, চার বছরে তা বেড়ে হয়েছে ৩০,৬৫৩ কোটি টাকা। পাশাপাশি উল্লেখ করার, এ বছর বাজেটে উচ্চশিক্ষা খাতে বরাদ্দ অর্থ ৪৭,৬২০ কোটি। অর্থাৎ কোচিং সেন্টারে পড়ুয়ারা ব্যয় করছেন বাজেট বরাদ্দের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের সমান অর্থ!

যে শিক্ষানীতিতে বুক বাজিয়ে বলা হয়েছিল স্কুল স্তর থেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পঠনপাঠনে আসবে ‘ভিতর থেকে’ পরিবর্তন, পরীক্ষা ও মূল্যায়ন ব্যবস্থা হবে এমন যাতে দায়সারা যাচাই নয়, বিষয়ের স্পষ্ট ধারণা ও সার্বিক জ্ঞান লাভ হল কি না বোঝা যায়— এই কি তার পরিণাম? কোচিং সেন্টারের ক্রমবর্ধমান রমরমা কি উল্টো কথা বলছে না? সর্বভারতীয় স্তরের ভর্তি তথা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলি একে তো কেন্দ্রের হাতে, আবার তার একটা বড় অংশ ‘এমসিকিউ’ পদ্ধতিনির্ভর। কোচিং সেন্টারগুলি বিপুল অর্থের বিনিময়ে, বজ্রকঠিন নিয়মের শিকলে পড়ুয়াদের বেঁধে সেই পদ্ধতি গিলিয়ে ছাড়ে। ছাত্রছাত্রীরাও জানে তাদের কাছে ওটুকুই প্রত্যাশিত, এবং এ কাজ করাতে পারে শুধু কোচিং সেন্টারগুলিই। তাই পরিবারের যাবতীয় সঞ্চয়টুকু নিয়ে তারা হাজির হয়, ঘর বা হস্টেল ভাড়া করে থাকে, এক অমানুষিক চাপ ও প্রত্যাশার জাঁতাকলে নিজেদের সঁপে দেয়। তার পরিণতি আজ চোখের সামনে: কোটায় অগণন আত্মহত্যা, দিল্লিতে কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টে বন্যার জল ঢুকে শিক্ষার্থীর মৃত্যু।

কোচিং সেন্টারের এই ‘শিক্ষা’চিত্র জাতীয় শিক্ষানীতির চরম ব্যর্থতার প্রমাণ। তা বুঝিয়ে দেয়, ভারতীয় ও বিশ্বশিক্ষা নিয়ে কেন্দ্র গত চার বছর ধরে যে বড় বড় কথা বলে আসছে তা কেবল কথার কথা, কার্যক্ষেত্রে কোচিং সেন্টারগুলি থেকে আসা ক্রমবর্ধমান জিএসটি-প্রাপ্তিযোগেই সে সন্তুষ্ট। আর কোনও অঘটন বা দুর্ঘটনা ঘটলেও দায় তার নয়, আইন-শৃঙ্খলা নজরদারির দায়িত্ব তো রাজ্য সরকারের। কেন্দ্রের জাতীয় শিক্ষানীতি আসলে সেই যবনিকা, যার সামনে বসে থাকা দেশবাসী ভাবছেন না জানি কোন ভারতীয় ও বিশ্বশিক্ষার সুদূরপ্রসারী উদ্‌যাপন শুরু হবে চোখের সামনে। পর্দার আড়ালে তখন চলছে রাজনীতির কারবারি আর শিক্ষার পাটোয়ারিদের মধ্যে এক অসুস্থ আঁতাঁত, আর্থিক দেওয়া-নেওয়ার যোগসাজশ। শিক্ষা ও শিক্ষার্থী, দুই-ই এই ‘চক্রে’ ঘুরে মরছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy