Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Exit Poll

তুকতাক?

এ দফায় সব ক’টি বুথ-ফেরত সমীক্ষা ভুল পূর্বাভাস করেছে, তা বড় কথা নয়। ভুল হতেই পারে, বিশেষত যদি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনও বিশেষ দলের ‘তরঙ্গ’ না থাকে।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র। Sourced by the ABP

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২৪ ০৯:০০
Share: Save:

এক্সিট পোল বা বুথ-ফেরত সমীক্ষা বস্তুটির আদৌ প্রয়োজন আছে? ভোটদান পর্ব শেষ হওয়া ও ফলাফল ঘোষণার মধ্যে ব্যবধান অল্প কয়েক দিনের— সেই সময়টুকুতে বাজার গরম রাখা কতখানি জরুরি যে, বুথ-ফেরত সমীক্ষার পিছনে প্রতি বার এমন বিপুল অর্থব্যয় করা হয়? এই প্রশ্নের বহুবিধ উত্তর সম্ভব। প্রথম, যে-হেতু রাশিবিজ্ঞানের নিয়ম মেনে এমন সমীক্ষা করা যায়, এবং নির্বাচনের ফলাফলের পূর্বাভাস দেওয়া যায়, শুধু সেই অ্যাকাডেমিক সক্ষমতার প্রকাশ হিসাবেই বুথ-ফেরত সমীক্ষা হয়। কথাটি শুনতে চমৎকার, তবে বিশ্বাসযোগ্য নয়। দ্বিতীয় উত্তর, দেশের মানুষের কাছে এমন পূর্বাভাসের চাহিদা আছে, এই জাতীয় অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হলে বিজ্ঞাপন আসে, তাই বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমগুলি এই সমীক্ষা করায়। তুলনায় বিশ্বাসযোগ্য উত্তর, তবে সম্ভবত অসম্পূর্ণ। রাহুল গান্ধীর সাংবাদিক সম্মেলনে এই প্রশ্নের আর একটি উত্তর রয়েছে। রাহুল দাবি করেছেন, বুথ-ফেরত সমীক্ষার ফলাফল বিকৃত করা হয়েছিল শেয়ার বাজারকে অস্বাভাবিক ভাবে চাঙ্গা করার জন্য— যাঁরা আগে থেকে জানতেন যে, এ ভাবে বাজার চড়বে, তাঁরা যাতে এক দিনে অনেক লাভ করতে পারেন। অভিযোগটির সত্যাসত্য প্রমাণসাপেক্ষ। আশা করা যায়, যৌথ সংসদীয় কমিটির দ্বারা তদন্ত করার যে দাবি রাহুল গান্ধী করেছেন, সরকার গঠিত হলে তা পূরণ করা হবে। কী ভাবে অমিত শাহ বলে দিয়েছিলেন যে, ৩ জুন শেয়ার বাজার অভূতপূর্ব উচ্চতায় পৌঁছবে, সে প্রশ্নের উত্তরও চাই।

এ দফায় সব ক’টি বুথ-ফেরত সমীক্ষা ভুল পূর্বাভাস করেছে, তা বড় কথা নয়। ভুল হতেই পারে, বিশেষত যদি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনও বিশেষ দলের ‘তরঙ্গ’ না থাকে। রাহুল গান্ধীর সংশয়টিকে যদি আদৌ গুরুত্ব দিতে হয়, তবে তার কারণ সন্ধান করতে হবে। ফলাফল ভুল হওয়া সংশয়ের কারণ নয়— সব সমীক্ষার ফলে এক রকম ভুল নিয়ে সংশয়। যে নির্বাচনে ৬৪ কোটির বেশি মানুষ ভোট দিয়েছেন, সেখানে সমীক্ষাগুলির জন্য তোলা নমুনার সংখ্যা অতি সামান্য— একটি সংস্থা জানিয়েছে, তাদের ‘স্যাম্পল সাইজ়’ ছিল সাড়ে চার লক্ষের কাছাকাছি। এবং, একই নমুনা সংখ্যাতত্ত্বগত ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ হারে একাধিক সমীক্ষার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, সে সম্ভাবনা কার্যত শূন্য। এই কারণেই আশঙ্কা হতে পারে যে, সমীক্ষার এই ভ্রান্তি সৎ নয়, তার পিছনে অন্য নকশা রয়েছে। মনে রাখা ভাল যে, সমীক্ষার ফলাফল বড় রকম ভুল হলে তা সমীক্ষক সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে। কাজেই, কোনও সংস্থা পূর্বনির্দিষ্ট নকশা মেনে সমীক্ষার ফল ইচ্ছাকৃত ভাবে বিকৃত করলে সেই নকশার বাহুবল নিয়ে বিচলিত হওয়া প্রয়োজন।

পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, কোনও সমীক্ষকই বিজেপির সম্ভাব্য আসনসংখ্যা কম দেখাতে সাহস করেননি। অর্থাৎ, এই ভ্রান্তি ভীতিজনিত। অন্য দিকে, রাহুল গান্ধীর অভিযোগের সুরটিকে গুরুত্ব দিলে বলতে হয় যে, সংস্থাগুলি কারও নির্দেশ অনুসারে এই ফলাফলে উপনীত হয়েছে। সে অভিযোগ সত্য কি না, তা বিচারসাপেক্ষ— কিন্তু, সত্য হলে, এই ভ্রান্তি একই সঙ্গে ভীতি এবং লোভজনিত। কারণ যা-ই হোক, এ কথা সম্ভবত বলা যায় যে, বুথ-ফেরত সমীক্ষাগুলি শুধুমাত্র বিজ্ঞাননির্ভর নয়— তার ফলাফল পাল্টে নেওয়া যায়। অথবা, এর পিছনে আদৌ বিজ্ঞান নেই, আছে শুধু তুকতাক। কোন সম্ভাবনাটি সত্য, তা জানতে গেলে এই সমীক্ষার গবেষণাপদ্ধতি প্রকাশিত হওয়া প্রয়োজন, নিরপেক্ষ বিশ্লেষকদের দ্বারা তার যাথার্থ্য যাচাই করা প্রয়োজন। বিজ্ঞান-গবেষণার যে কোনও ক্ষেত্রেই তা মান্য রীতি। ভারতে বুথ-ফেরত সমীক্ষার গবেষণাপদ্ধতি জানাতে কোনও সংস্থা আইনত বাধ্য নয়, ফলে তা জানাও যায় না। যে সমীক্ষার ফলাফল বাজারকে এতখানি প্রভাবিত করতে পারে, তার পদ্ধতি কেন অন্ধকারে থাকবে, কেন তা নিরপেক্ষ পরীক্ষার সম্মুখীন হবে না, এই প্রশ্নটিকে এড়িয়ে যাওয়ার আর কোনও উপায় নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 Post Editorial
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE