Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Punjab Assembly Election 2022

জটিল অঙ্ক

১১৭টি আসনের বিধানসভায় এই বারের নির্বাচনটি নানা দিক হইতে জটিল।

ছবি পিটিআই।

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৫:৪২
Share: Save:

ইতিহাস দেখিয়াই যদি পূর্বাভাস করা যাইত, তবে যথেষ্ট প্রত্যয়ের সহিত বলা চলিত যে, পঞ্জাবে রবিবারের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সাফল্যের আশা ক্ষীণ; তাহার কারণ, গত পঞ্চাশ বছরে এই রাজ্যে কোনও দল পর পর দুই বার ক্ষমতায় থাকিতে পারে নাই। আবার, এই একই সময়পর্বে পঞ্জাবের ভোটদাতারা প্রায় সমস্ত নির্বাচনে কোনও একটি দলকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়াছেন; এই ধারা বজায় থাকিলে পরবর্তী সরকার গড়িতে পারে শিরোমণি অকালি দল— অর্ধ শতাব্দীর অধিক কাল যাবৎ তাহারাই কংগ্রেসের সহিত পর্যায়ক্রমে জয়মাল্য লাভ করিয়া আসিতেছে। কিন্তু ২০২২ সালের নির্বাচন এই সরল পূর্বানুবৃত্তির অঙ্কটিকে অনায়াসে বানচাল করিয়া দিতে পারে। তাহার কারণ, ১১৭টি আসনের বিধানসভায় এই বারের নির্বাচনটি নানা দিক হইতে জটিল।

প্রথম কারণ, ভোটের ময়দানে খেলোয়াড়ের সংখ্যা অস্বাভাবিক বেশি। কংগ্রেস এবং ছোট শরিক বিএসপি-র সহিত অকালি দল— এই দুই পুরাতন প্রতিদ্বন্দ্বীর সহিত রহিয়াছে এক দিকে আপ এবং অন্য দিকে বিজেপি ও অমরিন্দর সিংহের নয়া জোট। শেষোক্ত জোটটিকে দুই উপগ্রহের সমবায় বলা চলে, কারণ বিজেপি পঞ্জাবে অকালি দলের অপ্রধান শরিক ছিল এবং অমরিন্দর ছিলেন কংগ্রেসের ‘ক্যাপ্টেন’। দুই চিরাচরিত প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে কংগ্রেসের প্রধান সমস্যা পাঁচ বছর সরকার চালাইবার দায়। রাজ্যের কৃষির কাঠামোগত সঙ্কট, দুর্নীতি, বেকারত্ব, মাদকের প্রাদুর্ভাব ইত্যাদি বহু কারণেই ক্ষমতাসীন দল প্রতি বার অভিযোগের নিশানা হয়, এই বারেও তাহার ব্যতিক্রম হইবার কারণ নাই। অন্য দিকে, অকালি দল কৃষক আন্দোলনের অভিঘাত সামলাইতে বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করিয়াছে, কেন্দ্রীয় সরকার হইতে তাহার মন্ত্রীরা পদত্যাগ করিয়াছেন, কিন্তু তাহাতে জনতার দৃষ্টিতে সঙ্গদোষ কত দূর কাটিয়াছে বলা কঠিন। তদুপরি, দলনেতাদের ভাবমূর্তি রীতিমতো তমসাচ্ছন্ন। এই পরিপ্রেক্ষিতেই নজর কাড়িয়াছে আপ। অরবিন্দ কেজরীওয়ালের দলটি এখনও পঞ্জাবে ‘বহিরাগত’ বটে, কিন্তু দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় কংগ্রেস এবং অকালি উভয়ের প্রতিই বহু নাগরিক বীতশ্রদ্ধ, সুতরাং তাঁহারা টুইডলডাম ও টুইডলডিকে বর্জন করিয়া নূতন দলকে সুযোগ দিতে পারেন— এই আশায় আপ বুক বাঁধিয়াছে এবং এই আশঙ্কায় পুরাতন দলগুলি উদ্বিগ্ন বোধ করিতেছে।

এই সমস্ত জটিলতার সহিত যুক্ত হইয়াছে কৃষক আন্দোলনের ইতিহাস। কৃষকদের সংগঠন সংযুক্ত সমাজ মোর্চার সমর্থিত ‘নির্দল’ প্রার্থীরা বেশ কিছু এলাকাতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলিতে পারেন। অন্য দিকে, এই নির্বাচনে পঞ্জাবে দলিত ভোটও নূতন তাৎপর্য অর্জন করিয়াছে। তাহার একটি কারণ কংগ্রেসের দলিত মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিংহ চন্নী, যিনি এই নির্বাচনেও কংগ্রেসের ‘মুখ’, কিন্তু দলিত ভোটের ক্ষেত্রে কৃষক আন্দোলনেরও পরোক্ষ ভূমিকা থাকিতে পারে, কারণ এই আন্দোলন দৃশ্যত কিছু কিছু অঞ্চলে দলিত খেতমজুরদের মধ্যে এক নূতন সংহতির বোধ জাগ্রত করিয়াছে। এই আবর্তে নরেন্দ্র মোদীর দলটি প্রত্যাশিত ভাবেই সীমান্তবর্তী রাজ্যে নিরাপত্তার প্রশ্নটিকে তুলিয়া ধরিবার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালাইতেছে, কিছু কাল আগে তাঁহার যাত্রাপথে ঈষৎ ব্যাঘাত ঘটিবার ঘটনাটিকে লইয়া দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এখনও ‘প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাহানি’ বিষয়ক ফাটা রেকর্ড বাজাইতেছেন, কিন্তু তাহাতে বিশেষ লাভ হইবে বলিয়া মনে হয় না। এই দলটি যে বিভাজনের রাজনীতিতে অভ্যস্ত, পঞ্জাবে তাহার সুযোগ কম, বরং সেই রাজনীতি বিজেপির পক্ষে আত্মঘাতী হইতে পারে, বিশেষত কৃষক আন্দোলনের প্রতি কেন্দ্রীয় শাসকদের নির্মম ঔদাসীন্যের অভিজ্ঞতার পরে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy