Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
PM Modi

সফর-দর্শন

চাপান-উতোরের পরিসর থেকে একটু বেরিয়ে গিয়ে অবশ্য মোদী-জনসন বৈঠককে একটি ভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ বলা যেতে পারে।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২২ ০৫:০৮
Share: Save:

গেলাস কি অর্ধেক ভর্তি, না কি অর্ধেক খালি? একই বাস্তব এক-এক দিক থেকে এক-এক রকম। এই মুহূর্তে ব্রিটেন এবং ভারতের সরকার-সমর্থক ও সরকার-বিরোধী সংবাদমাধ্যমে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ভারত সফরের প্রতিক্রিয়ার তুমুল বৈপরীত্য বলে দেয়, একই ঘটনাকে কত আলাদা ভাবে দেখা সম্ভব। সহাস্য দ্বিপাক্ষিক আদানপ্রদান ও সন্তোষ-বিনিময়ের পর ব্রিটিশ সরকার-পক্ষ যখন প্রসন্ন, তখন সে দেশের সমাজেরই একাংশ মনে করছে, প্রধানমন্ত্রী জনসন— যাঁর অভ্যন্তরীণ স্থিতি ও স্বীকৃতি এমনিতেই টলোমলো, ভারতের প্রতি তাঁর বার্তা মোটেই নৈতিক কিংবা কূটনৈতিক দিক দিয়ে সমর্থনযোগ্য নয়। যে ভারত ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার বিরুদ্ধতা করেনি, বরং তাকে অর্থনৈতিক আদানপ্রদানের খিড়কি দিয়ে সমর্থনই জানিয়েছে, তাকে ব্রিটেনের পক্ষ থেকে কিছু কড়া বার্তা দেওয়া দরকার ছিল। মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন ছিল যে, কখনও কখনও মানবাধিকারের কথাটা ভাবাও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। ইউক্রেনের ভয়াবহ সঙ্কটে মানবাধিকার যে ভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে, যে অপরিসীম ক্ষয়ক্ষতি সে দেশের সাধারণ মানুষকে সহ্য করতে হয়েছে রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদী ধ্বংস-অভিযানের কারণে— তাতে ভারতের রাশিয়া-অবস্থান ব্রিটিশ সরকারের কাছে স্বীকৃতিযোগ্য হতে পারে না।

এ দিকে, ভারতের মূলধারার সংবাদমাধ্যম মনে করছে, প্রধানমন্ত্রী মোদীর মহার্ঘ উষ্ণীষে আরও একটি পালক জুড়ল। জনসন-সফরের সাফল্য বুঝিয়ে দিল, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার প্রকাশ্য বিরোধিতা না করে তাকে কেবল সতর্ক করার যে কূটনীতি, তা একশো শতাংশ সফল। আমেরিকা ও ব্রিটেনের মতো দেশের মিত্রতায় এর জন্য টোল পড়েনি। বরং বিশ্বমঞ্চে ভারতের গুরুত্বই স্বীকৃত হয়েছে। স্বভাবতই, ঠিক এর বিপরীত কথাটি বেরিয়ে আসছে মোদী-সমালোচকদের কাছ থেকে। তাঁরা বলছেন, রাশিয়ার অন্যায় আক্রমণের বিরোধিতা না করে যে ‘ভুল’ ভারত করেছে, তার জন্য ক্রমে বড় দাম দিতে হবে অন্যান্য দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে— আজ নিজের দেশে রাজনৈতিক ভাবে বিপন্ন হয়ে পড়া প্রধানমন্ত্রী জনসন যে বার্তাই দিন না কেন।

এই চাপান-উতোরের পরিসর থেকে একটু বেরিয়ে গিয়ে অবশ্য মোদী-জনসন বৈঠককে একটি ভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ বলা যেতে পারে। বর্তমান যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম বড় মাপের সরকারি সফরে এসে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী সত্যিই বুঝিয়ে গেলেন, ভারত এখনও যথেষ্ট ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বের অধিকারী। এই গুরুত্বের প্রধান কারণ— চিন। ব্রিটেন বা আমেরিকার মতো দেশ চিনের বিরাট উত্থানের কারণে খামোকা ভারতকে চটিয়ে দেওয়ার পক্ষপাতী নয়, বিশেষত এশিয়ার রাজনীতি ও কূটনীতি মাথায় রাখলে। দক্ষিণ চিন সাগরই হোক, কিংবা পশ্চিম এশিয়াই হোক, ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশের মিত্রতা চিনা বলয়ের সঙ্গে মোকাবিলার জন্য অতীব জরুরি। তবে এ কথাও ঠিক যে, রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের পুরনো মৈত্রীর ইতিহাসটিও পশ্চিম দুনিয়ায় স্বীকৃত সত্য। সুতরাং, মানবাধিকারের সঙ্গে জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নটিকে সামনে রাখার বিষয়ে ব্রিটেন, আমেরিকা, ফ্রান্স, জার্মানির উপর্যুপরি নব-জাতীয়তাবাদে প্রস্ফুটিত রাজনৈতিক সমাজের আপত্তি নেই। কেন নরেন্দ্র মোদীর মতো এক জন ‘অগণতান্ত্রিক’ নেতাকে এত গুরুত্ব দিলেন বরিস জনসন, কেন তিনি বললেন যে ভারতকে গণতন্ত্র বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার স্থানে অন্য কোনও দেশ নেই— এই সব প্রশ্নের উত্তরও সহজেই অনুমেয়। বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতির পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চোখে এখন ভারতের গণতন্ত্রের অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জের থেকে চিনের আধিপত্যতন্ত্র বৃহত্তর সঙ্কট। সব মিলিয়ে, মোদীর রাশিয়া নীতি যথেষ্ট সফল, প্রমাণ করে গেলেন প্রধানমন্ত্রী জনসন একাই।

অন্য বিষয়গুলি:

PM Modi Boris Johnson
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy