Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
galaxy

খুঁজি খুঁজি নারি

দূরবর্তী গ্যালাক্সিতে ডার্ক ম্যাটারের অনুপস্থিতি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করিয়াছে।

শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২১ ০৫:১৩
Share: Save:

আমেরিকার ইয়েল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক পিটার ভ্যান ডোক্কাম এবং তাঁহার সহযোগীগণ লক্ষ করিয়াছেন যে, মহাবিশ্বের একটি গ্যালাক্সিতে ডার্ক ম্যাটার নাই। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা উক্ত গ্যালাক্সিটিকে এন জি সি ১০৫২-ডি এফ-২ নামে চেনেন। দূরবর্তী ওই গ্যালাক্সিতে ডার্ক ম্যাটারের অনুপস্থিতি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করিয়াছে। ডার্ক ম্যাটার হইল এমন বস্তু, যাহা পরিচিত কণাসমূহ (ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন ইত্যাদি) দ্বারা গঠিত নহে। গত শতাব্দীর তৃতীয় দশকে জ্যোতির্বিজ্ঞানীগণ লক্ষ করিয়াছিলেন, গ্যালাক্সিগুলির ঘূর্ণনবেগ মাত্রাতিরিক্ত। গ্যালাক্সিতে নক্ষত্রগুলি উহাদের কেন্দ্রের চারিপার্শ্বে এমন দ্রুতবেগে আবর্তিত হইতেছে যে, নক্ষত্রের ছিটকাইয়া পড়িবার কথা। অথচ, নক্ষত্রেরা দৃঢ় ভাবে আবদ্ধ। অর্থাৎ, গ্যালাক্সিগুলির আকর্ষণ বল প্রচণ্ড। আইজ়াক নিউটন-প্রবর্তিত নিয়মানুসারে আকর্ষণ বল ভর হইতে আসে। সুতরাং, গ্যালাক্সিগুলির আপাত ভর (যাহা গণনা করা যায় গ্যালাক্সিগুলি হইতে নির্গত আলো হইতে) অপেক্ষা প্রকৃত ভর বেশি। কত বেশি, তাহাই নির্দিষ্ট গ্যালাক্সিতে উপস্থিত ডার্ক ম্যাটারের পরিমাণ। অজ্ঞাতপরিচয় ওই পদার্থ বিজ্ঞানীদের কৌতূহলের উৎস।

বিজ্ঞানীগণ অবগত আছেন যে, পরিচিত পদার্থ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মাত্র ৪ শতাংশ অধিকার করিয়া আছে। বাকি ৯৬ শতাংশ পদার্থ বা এনার্জি মানুষ অদ্যাবধি চিনিতে পারে নাই। ডার্ক ম্যাটার বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে মোট পদার্থ বা এনার্জির ২৩ শতাংশ। বাকি ৭৩ শতাংশ ডার্ক এনার্জি, যাহার স্বরূপ এখনও পর্যন্ত চেনা যায় নাই। ডার্ক এনার্জি কী প্রকারে শনাক্ত হইল? এই প্রশ্নের উত্তরে বলিতে হয় আইনস্টাইনের কথা। যাঁহার আবিষ্কৃত জেনারেল রিলেটিভিটি তত্ত্বে প্রমাণ হয়, ব্রহ্মাণ্ড হয় সঙ্কুচিত, অথবা প্রসারিত হইতেছে। আইনস্টাইন স্বয়ং আবার স্থির ব্রহ্মাণ্ডে আস্থাশীল। পাছে ব্রহ্মাণ্ডে তাবৎ বস্তুর আকর্ষণজনিত সঙ্কোচন হয়, তাই আইনস্টাইন গোঁজামিল দিলেন জেনারেল রিলেটিভিটির ফর্মুলায়। কল্পনা করিলেন ব্রহ্মাণ্ডের সঙ্কোচনের বিরুদ্ধে ক্রিয়াশীল এক প্রসারণ বলের। ১৯২০-র দশকে জ্যোতির্বিজ্ঞানীগণ যখন আবিষ্কার করিলেন, ব্রহ্মাণ্ড আপনাআপনিই প্রসারিত হইতেছে, তখন আইনস্টাইন উক্ত গোঁজামিলকে কেরিয়ারের সর্বাপেক্ষা বড় ভুল আখ্যা দিলেন। ব্রহ্মাণ্ড প্রসারিত হইতেছে ঠিকই, কিন্তু তাহাতে অসংখ্য গ্যালাক্সি একে অন্যকে আকর্ষণ করিতেছে। তাহার প্রভাবে ব্রহ্মাণ্ডের প্রসারণের হার কমিবার কথা। প্রসারণের হার কী পরিমাণ কমিতেছে, তাহাই মাপিতে গিয়াছিলেন দুই দল জ্যোতির্বিজ্ঞানী। ১৯৯৮ সালে দুই দলের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হইলে বিজ্ঞান জগতে মহা শোরগোল পড়িয়া যায়। দেখা যায়, ব্রহ্মাণ্ডের প্রসারণ হার কমিবার পরিবর্তে বাড়িতেছে। উক্ত দুই দল জ্যোতির্বিজ্ঞানীর তিন জন ইতিমধ্যে নোবেল পুরস্কার পাইয়াছেন। দেখা গিয়াছে, জেনারেল রিলেটিভিটির ফর্মুলায় গোঁজামিল ঢুকাইয়া আইনস্টাইন ঠিক কাজই করিয়াছিলেন। যে এনার্জি ব্রহ্মাণ্ডের প্রসারণের হারকে বাড়াইতেছে, তাহাকেই জ্যোতির্বিজ্ঞানীগণ ডার্ক এনার্জি আখ্যা দিয়াছেন।

এন জি সি ১০৫২-ডি এফ-২ গ্যালাক্সিতে ডার্ক ম্যাটারের অনুপস্থিতি জ্যোতির্বিজ্ঞানীগণের শিরঃপীড়া ঘটাইয়াছে। যাহা সমস্ত গ্যালাক্সিতে বিদ্যমান, তাহা উক্ত গ্যালাক্সিতে নাই কেন? তবে কি পিটার ভ্যান ডোক্কাম এবং তাঁহার সহযোগীদের পরীক্ষায় কিছু ত্রুটি হইয়াছে? এমত সম্ভাবনা ভ্যান ডোক্কাম নস্যাৎ করিয়াছেন। সন্দেহের তির অতঃপর ধাবিত হইয়াছে নূতন তত্ত্ব, মডিফায়েড গ্র্যাভিটির দিকে। অর্থাৎ, আকর্ষণ বল সংশোধন। ডার্ক ম্যাটারের পরিবর্তে নিউটন আবিষ্কৃত মহাকর্ষ তত্ত্বের ফর্মুলায় রদবদল। ফর্মুলায় বদল ঘটাইলে যে ডার্ক ম্যাটার সমস্যা লাঘব হয়, তাহা সুবিদিত। কিন্তু নিউটন আবিষ্কৃত ফর্মুলা সবখানে সর্বস্তরে প্রযোজ্য হইলে, তাহার অন্যথা হইবার কথা নহে। এই কারণে মডিফায়েড গ্র্যাভিটি লইয়া বিজ্ঞানীরা বিশেষ উৎসাহী নহেন। ভ্যান ডোক্কাম আর একটি কারণে এন জি সি ১০৫২-ডি এফ-২ গ্যালাক্সির অভ্যন্তরে ডার্ক ম্যাটারের অনুপস্থিতি ব্যাখ্যা করিতে চাহেন— উক্ত গ্যালাক্সিটি তৈরির প্রক্রিয়া। ভ্যান ডোক্কামের মতে, সাধারণ গ্যালাক্সি যে ভাবে গঠিত হয়, উক্ত গ্যালাক্সিটির ক্ষেত্রে তাহা হয় নাই। গঠন প্রক্রিয়ার পার্থক্যের হেতু গ্যালাক্সিটিতে ডার্ক ম্যাটারের অনুপস্থিতি। কারণ যাহাই হউক, গ্যালাক্সিটিতে ডার্ক ম্যাটারের অনুপস্থিতি যে ওইরূপ পদার্থ সম্পর্কে আলোকপাত করিবে, তাহা হলফ করিয়া বলা যায়।

অন্য বিষয়গুলি:

galaxy Astronomy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE