Advertisement
E-Paper

নামের ফাঁদে

দেরিতে হলেও রাজ্য সরকারের এই বোধোদয়কে স্বাগত জানাতে হয়। প্রকল্পের নাম বদল, এবং তার জেরে রাজ্য-কেন্দ্র সংঘাতে কেন্দ্রের অনুদান স্থগিত হওয়া— এমন গত কয়েক বছরে বার বার ঘটেছে।

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৫ ০৬:২২
Share
Save

অবশেষে রফা হল নামকরণ নিয়ে। পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ স্বাস্থ্য কেন্দ্র, এত দিন যার নাম ছিল ‘সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র,’ এ বার তার নাম হবে ‘আয়ুষ্মান আরোগ্য কেন্দ্র’। যদি কেউ প্রশ্ন করেন, নামে কী আসে যায়, তার উত্তর— এসে যায় বছরে আঠারোশো কোটি টাকা। যা গত বছর পায়নি রাজ্য, কেবল কেন্দ্রের নির্দেশমতো স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলির নামকরণ করেনি বলে। ফলে গর্ভবতী মহিলা ও শিশুদের স্বাস্থ্য পরিষেবা, পরিবার পরিকল্পনায় সহায়তা, যক্ষ্মা-সহ নানা সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, স্বাস্থ্য-কর্মীদের ভাতা প্রদান, এ সবের খরচ রাজ্য একাই বহন করছিল। তাতে কাজ ব্যাহত হয়েছিল, তার সম্ভাবনা যথেষ্ট। এখন অর্থসঙ্কটের জন্যই হোক, বা কেন্দ্রের সঙ্গে সমন্বয় বাড়াতেই হোক, রাজ্য সরকার সমঝোতার পথ নিয়েছে। দেরিতে হলেও রাজ্য সরকারের এই বোধোদয়কে স্বাগত জানাতে হয়। প্রকল্পের নাম বদল, এবং তার জেরে রাজ্য-কেন্দ্র সংঘাতে কেন্দ্রের অনুদান স্থগিত হওয়া— এমন গত কয়েক বছরে বার বার ঘটেছে। ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’-র নাম পশ্চিমবঙ্গে হয়েছে ‘বাংলা আবাস যোজনা’। ‘প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা’-র নাম হয়েছে ‘বাংলা গ্রাম সড়ক যোজনা’। এ ছাড়াও ‘প্রধানমন্ত্রী জল যোজনা মিশন’-এর নাম রাজ্যে হয়েছে ‘জলস্বপ্ন,’ কেন্দ্রের ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’, ‘ওয়াটার শেড ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম’ এবং ‘ন্যাশনাল রুরাল লাইভলিহুড মিশন’-কে পশ্চিমবঙ্গে ‘নির্মল বাংলা’,‘জল ধরো-জল ভরো’ এবং ‘আনন্দধারা’ নাম দেওয়া হয়েছে। প্রতিটির ক্ষেত্রেই কেন্দ্র আপত্তি করেছে, কখনও বা কেন্দ্রীয় অনুদানে ছেদ পড়েছে, ফলে রাজ্যের উপর বাড়তি বোঝা চেপেছে। বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ মন্থর, এমনকি স্থগিত হয়েছে।

তবে কিনা, পানীয় জল, জনস্বাস্থ্য, জীবিকার মতো জরুরি প্রকল্পে জনস্বার্থের চাইতে প্রকল্পের ‘ব্র্যান্ডিং’-কে গুরুত্ব দেওয়া যদি অযৌক্তিক, দায়িত্বহীন কাজ হয়, তবে তাতে কেন্দ্র ও রাজ্য সমান দায়ী। কেন্দ্রের দাবি, সারা দেশে যে নামে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের রূপায়ণ হচ্ছে, কোনও একটি রাজ্যে তার ব্যতিক্রম হতে পারে না। কেন্দ্রের প্রকল্প গ্রহণ করার শর্তগুলির মধ্যে রয়েছে প্রকল্পের নামের গ্রহণ। তৃণমূল সরকারের বক্তব্য, ওই প্রকল্পগুলি কেন্দ্রের একার নয়, কেন্দ্রীয় অনুদানের পাশাপাশি রাজ্যেরও টাকা থাকে। কেন্দ্র প্রকল্পের কাজের হিসাব নিক, নামের দিকে তাকাবে কেন? এই মতান্তর দলীয় রাজনীতির— সরকারি প্রকল্প থেকে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে চায় দু’পক্ষই। এর শেষও হয়েছে রাজনৈতিক দরদস্তুরে। দু’তরফই কিছু জমি ছেড়েছে পরস্পরকে। ২০১৮ সালে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের অধীনে কেন্দ্র ‘আয়ুষ্মান ভারত— হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার’ শুরু করে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার সে নাম গ্রহণ করেনি, নাম দিয়েছিল ‘সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র’। ২০২৩ সালে কেন্দ্রীয় সরকার নতুন নামকরণ করে, ‘আয়ুষ্মান আরোগ্য মন্দির’। এ বারও রাজ্য তা গ্রহণ করেনি, আগের নামই বহাল রেখেছিল। ফলে ২০২৪ সালে টাকা বন্ধ করে দেয় কেন্দ্র। শেষ অবধি রফা হয়েছে, কেন্দ্রের ‘আয়ুষ্মান আরোগ্য মন্দির’ নামের ‘মন্দির’ না গ্রহণ করে নাম হবে ‘আয়ুষ্মান আরোগ্য কেন্দ্র’। ভবনগুলির রং কেন্দ্র-নির্দিষ্ট হলুদের পরিবর্তে হবে রাজ্য-নির্দিষ্ট নীল-সাদা।

যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোয় স্বাস্থ্য, জীবিকা সংক্রান্ত প্রকল্পে রাজ্যের স্বাধিকারের পক্ষে যু্ক্তি থাকতে পারে। কিন্তু একই কারণে প্রকল্পের রূপায়ণে রাজ্যেরই দায়বদ্ধতা বেশি। নানা রাজ্যে বিরোধী সরকারগুলি কেন্দ্রের বিভিন্ন নীতিকে সমালোচনা করছে, নানা প্রকল্প প্রত্যাখ্যানও করছে। যদি রাজ্যের মনে হয় যে কেন্দ্রের নীতি জনস্বার্থের বিরোধী, কেন্দ্রীয় প্রকল্প অকারণ অপচয়ী, তা হলে রাজ্য সরকার তা প্রত্যাখ্যান করতে পারে। কিন্তু কেবল ‘ব্র্যান্ডিং’ নিয়ে মতভেদের জন্য পরিকাঠামো নির্মাণ ও নিয়মিত পরিষেবা ব্যাহত হতে দেওয়া অপরিণত রাজনৈতিক বোধের লক্ষণ। কেবল টাকার অঙ্কে নয়, ক্ষতির পরিমাপ করতে হবে মানবসম্পদের অপচয়ে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Central Schemes Bangla Awas Yojana Pradhan Mantri Awas Yojana

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}