Advertisement
E-Paper

কৃষি সঙ্কট

রাজ্যের অনুরোধে ডিভিসি সম্প্রতি জল ছাড়লেও, নালার শুকনো জমিই তা শুষে নিয়েছে, চাষির খেতে সেচের জল পৌঁছয়নি।

শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২২ ০৪:৫৭
Share
Save

বর্ষার কার্পণ্যে পশ্চিমবঙ্গে কৃষি সঙ্কট তীব্র হয়ে দেখা দিয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে বৃষ্টি হয়েছে ছেচল্লিশ শতাংশ কম, উত্তরবঙ্গে মালদহ এবং দুই দিনাজপুরও তীব্র জলাভাবে ধুঁকছে, অন্য জেলাগুলিও ঘাটতির মুখে। আষাঢ় বয়ে গেলেও বহু চাষি ধান রোপণ করতে পারেননি, অনেকের বীজতলা শুকিয়ে নষ্ট হয়েছে। ফলে ঝুঁকির এক শৃঙ্খলের সূচনা হয়েছে— আমন ধান পাকতে দেরি হলে পিছিয়ে যাবে আলু বসানো। আলু ওঠার আগেই গরম পড়ে গেলে ফলন কমবে, ক্ষতি বাড়বে। আষাঢ়ে বৃষ্টির অভাব যদি বা শ্রাবণে কিছুটা পূরণ হয়, এই বিলম্ব এড়ানো যাবে না। জলের অভাবে পাট পচানো যাচ্ছে না, মাঠেই নষ্ট হচ্ছে পাট। গত বছরের চাইতে বেশি জমিতে পাট চাষ হয়েছে, তবু বাজারে কাঁচা পাটের জোগান কম, তাই সঙ্কটে চটকলগুলিও। রাজ্যের অনুরোধে ডিভিসি সম্প্রতি জল ছাড়লেও, নালার শুকনো জমিই তা শুষে নিয়েছে, চাষির খেতে সেচের জল পৌঁছয়নি। ধান, পাট ও আলু, পশ্চিমবঙ্গের তিনটি প্রধান ফসলের চক্র ব্যাহত হলে গ্রামীণ অর্থনীতিই বেসামাল হয়ে পড়ে। ধানের চাষ কমায় চাল-সহ সব ফসলের দাম বাড়ার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। তার উপর রয়েছে পরিবেশের সঙ্কট— ভূগর্ভের জলের ক্ষয়। বৃষ্টি যত কম হবে, সেচের জন্য ভূগর্ভের জল ব্যবহার করার প্রবণতা বাড়বে। ‘সুস্থায়ী চাষ’, ‘পরিবেশ-বান্ধব চাষ’, এ কথাগুলি কেবল সরকারি আধিকারিকদের ভাষণেই রয়ে যাচ্ছে। কার্যক্ষেত্রে তার রূপায়ণ কারা করবে, কত দিনে করবে, তার কোনও লক্ষ্য নির্দিষ্ট হয়নি। ফলে, চাষির জীবিকা অর্জনের তাগিদ আর পরিবেশের সুরক্ষার দায় বার বার পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দেখা দিচ্ছে। অথচ, ডিজ়েলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভূগর্ভের জল উত্তোলনের খরচ সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। ফলে চাষ আরও অলাভজনক হয়ে পড়ছে।

এই সঙ্কটের মূলে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কৃষিনীতির অভাব। জলবায়ু পরিবর্তন আর সম্ভাবনামাত্র নয়, তার প্রভাব হাড়ে-মজ্জায় অনুভব করছেন বাংলার চাষিরা। তীব্র দাবদাহ, দীর্ঘস্থায়ী গ্রীষ্ম, বর্ষার আগমনে বিলম্ব, কখনও সামান্য, কখনও অতিরিক্ত বৃষ্টি, সর্বোপরি ঘনঘন প্রবল দুর্যোগ— এ সবই কৃষির পরিচিত ছন্দ ও রীতিকে নষ্ট করে দিয়েছে, চাষকে আরও অনিশ্চিত, ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। কিন্তু নতুন সময়ের উপযোগী চাষের পদ্ধতির প্রসার হয়নি। ঊষর এলাকার সেচ, স্বল্প জলের চাষের প্রযুক্তি কতটুকু ছড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গে? সরকারি অধিকর্তাদের মতে, মোট চাষের দশ-পনেরো শতাংশের বেশি ‘মাইক্রো ইরিগেশন’-এর পদ্ধতিতে হয় না। চাষিরা তাঁদের অভ্যস্ত রীতিতে, অর্থাৎ চাষের জমির সবটাই জলে ভাসিয়ে চাষ করে চলেছেন এখনও।

অথচ, জলের সঙ্কট এখন সব জেলায়। অতীতে জলসমৃদ্ধ জেলাগুলিতেও এখন ‘সঙ্কটগ্রস্ত’ ব্লকের সংখ্যা বাড়ছে। অতএব বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার মতো জেলার ‘ঊষরমুক্তি’ প্রকল্পের পদ্ধতিগুলি সর্বত্র প্রসারিত করা প্রয়োজন। বৃষ্টির জলের সংরক্ষণ, এবং ভূতলের ও ভূগর্ভের জলের বিজ্ঞানসম্মত ব্যবহারে এখনই প্রশিক্ষিত করার প্রয়োজন সব চাষিকে। প্রশ্ন হল, জলবায়ু পরিবর্তনের উপযোগী প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি জোগানোর দায় কার? কৃষি বিকাশ কেন্দ্র অথবা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে অতি অল্প চাষির। জেলার কৃষি আধিকারিক এবং পঞ্চায়েত স্তরের কর্মীরা অনুদান বিলিবণ্টন করতে ব্যস্ত। কৃষি প্রশিক্ষণ ক্রমশ সরে যাচ্ছে বেসরকারি ক্ষেত্রে— সার-কীটনাশকের ডিলার, অসরকারি সংস্থা বা ফসলের ক্রয়কারী সংস্থাগুলি সে দায়িত্ব বহন করছে। এ ভাবে কি রাজ্যের বাহাত্তর লক্ষ চাষির কাছে প্রশিক্ষণ পৌঁছনো সম্ভব? সেই লক্ষ্যে এগোতে যে কর্মসূচি প্রয়োজন, এখনও অবধি তার উপযুক্ত পরিকল্পনা হয়নি।

Farming West Bengal agriculture

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।