অর্থনৈতিক সমীক্ষায় ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে আয়বৃদ্ধির যে পূর্বাভাস করা হইয়াছিল, দিনকয়েকের মধ্যেই জানা গেল, আয়বৃদ্ধির হার তাহার তুলনায় কিঞ্চিৎ কম হইতে পারে। উৎপাদন কমিয়া যাওয়া সংক্রান্ত কোনও দুঃসংবাদ হঠাৎ মিলে নাই— বৃদ্ধির হারের পূর্বাভাসে কাটছাঁটের কারণ, অর্থমন্ত্রী জানাইয়াছেন, আগামী অর্থবর্ষে জিডিপি ডিফ্লেটর তিন হইতে সাড়ে তিন শতাংশের মধ্যে থাকিবে। এই জিডিপি ডিফ্লেটর বস্তুটি কী, এক বাক্যে তাহা বলিলে উত্তর হইবে— উহা অর্থমূল্যে এবং প্রকৃত মূল্যে জিডিপির অঙ্কের ফারাক। জিডিপির হিসাব সচরাচর পেশ করা হয় চলতি বৎসরের মূল্যস্তরের নিরিখে। অর্থাৎ, অর্থব্যবস্থায় মোট যত পণ্য ও পরিষেবা উৎপাদিত হইতেছে, বর্তমান মূল্যস্তর অনুসারে তাহার মোট মূল্য কত, তাহাই নমিনাল জিডিপি বা অর্থমূল্যে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের হিসাব। গত বৎসরের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের তুলনায় তাহা কত শতাংশ বেশি বা কম, তাহাই অর্থমূল্যে জিডিপির বৃদ্ধি বা সঙ্কোচনের হার। কিন্তু, গত বৎসরের তুলনায় কেবল উৎপাদনের পরিমাণই বাড়ে বা কমে না— উৎপাদিত পণ্যের দামও পাল্টায়। ফলে, টাকার অঙ্কে এই বৎসরের মোট উৎপাদন বৃদ্ধির একটি অংশ উৎপাদন বৃদ্ধির, অন্য অংশটি মূল্যবৃদ্ধির। কিন্তু, অর্থব্যবস্থার মূল বিবেচ্য হইল, প্রকৃত উৎপাদন কতখানি বাড়িল, তাহা। বর্তমান বৎসরের মূল্যস্তরে মোট উৎপন্ন পণ্যের মূল্য, এবং পূর্বনির্দিষ্ট বেস ইয়ার-এর মূল্যস্তরে বর্তমান বৎসরে উৎপাদিত পণ্যের মূল্যের ব্যবধানই হইল জিডিপি ডিফ্লেটর। অর্থমূল্যে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের হার হইতে এই ডিফ্লেটরের হার বাদ দিলে যাহা পড়িয়া থাকে, তাহাই প্রকৃত উৎপাদন বৃদ্ধি। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে নমিনাল জিডিপি বৃদ্ধির হার ১১.১ শতাংশ, এবং ডিফ্লেটর ৩-৩.৫ শতাংশ, অতএব প্রকৃত বৃদ্ধির হার ৭.৬ শতাংশ হইতে ৮.১ শতাংশের মধ্যে থাকিবে।
প্রশ্ন হইল, মূল্যস্তর নির্ধারণের তো আরও পন্থা আছে— পাইকারি মূল্যসূচক, এবং খুচরা মূল্যসূচকের নিরিখে মূল্যবৃদ্ধির হার নির্ধারণ অতি পরিচিত পদ্ধতি। তাহা হইলে জিডিপি ডিফ্লেটরের প্রয়োজন হয় কেন? এই প্রশ্নের উত্তর রহিয়াছে মূল্যসূচকগুলির গঠনে। প্রতিটি মূল্যসূচকই গঠিত হয় কিছু পূর্বনির্দিষ্ট পণ্য ও পরিষেবার ভিত্তিতে। এক একটি মূল্যসূচকের পণ্য ও পরিষেবার চয়ন এক এক রকম, তাহাদের আপেক্ষিক গুরুত্বও সূচক-নির্দিষ্ট। ফলে, কোনও একটি সূচকের অন্তর্গত পণ্য ও পরিষেবার মূল্যস্তরে কী পরিবর্তন ঘটিতেছে, তাহা সেই পণ্য ও পরিষেবার আপেক্ষিক গুরুত্ব অনুসারে মূল্যসূচকটিকে প্রভাবিত করিবে। অর্থাৎ, যে পণ্য বা পরিষেবা এই মূল্যসূচকে নাই, তাহার মূল্যস্তরের পরিবর্তন এই সূচকে প্রতিফলিত হইবে না। জিডিপি ডিফ্লেটরের ক্ষেত্রে এই সমস্যা নাই। অর্থব্যবস্থায় উৎপাদিত যাবতীয় পণ্য ও পরিষেবার মূল্যস্তরে পরিবর্তন ইহাতে স্ব-গুরুত্বে প্রতিফলিত। ফলে, খুচরা বা পাইকারি মূল্যসূচকের নিরিখে নির্ধারিত মূল্যস্ফীতির হারের তুলনায় জিডিপি ডিফ্লেটরে মূল্যস্ফীতির নিখুঁততর প্রতিফলন ঘটে। তবে, স্মরণে রাখা প্রয়োজন যে, অতি বিরল ও অতি ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি ব্যতিরেকে মূল্যসূচকের নিরিখে নির্ধারিত মূল্যস্ফীতির হার ও জিডিপি ডিফ্লেটর সমগামী। মূল্যস্ফীতির আঁচে অর্থব্যবস্থা ত্রস্ত হইলে তাহার প্রতিফলন দুই ক্ষেত্রেই ঘটিবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy