Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Opposition Parties

চড়ুইভাতি নহে

সরকার তথা শাসক দলের বিরোধী মত জানাইবার স্বাধীনতাই অপহৃত, বিরোধীরা তাঁহাদের কাজ করিবেন কী করিয়া?

রাহুল গাঁধী।

রাহুল গাঁধী।

শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২০ ০০:১৩
Share: Save:

সংবাদমাধ্যম এবং (গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার) অন্য প্রধান প্রতিষ্ঠানগুলিকে স্বাধীন ভাবে কাজ করিতে দেওয়া হউক, এই সরকার বেশি দিন টিকিবে না।— মন্তব্য করিয়াছেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধী। এক সমালোচনার উত্তরে তাঁহার এই মন্তব্য। সমালোচনার প্রতিপাদ্য ছিল: ভারতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি দুর্বল বলিয়াই নরেন্দ্র মোদীর সরকার ক্রমাগত একতরফা সিদ্ধান্ত চাপাইয়া দিতে পারিতেছে। রাহুল গাঁধী এই বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন। তাঁহার মতে, বিরোধীরা দুর্বল নহে, এই সরকার বিরোধীদের কাজ করিবার সুযোগ হরণ করিয়াছে। একটি যথার্থ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও পরিসরের যে স্বাধীনতা থাকে, বিরোধী রাজনীতিকরাও তাহার মধ্যেই কাজ করিতে পারেন, সরকারের ভুলভ্রান্তির সমালোচনা এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করিয়া জনমত সংগঠন করেন এবং সরকারকে আত্মসংশোধনে বাধ্য করেন। সেই পরিসরটিই মোদীর ভারতে ভয়ানক ভাবে সঙ্কুচিত, সরকার তথা শাসক দলের বিরোধী মত জানাইবার স্বাধীনতাই অপহৃত, বিরোধীরা তাঁহাদের কাজ করিবেন কী করিয়া?

নরেন্দ্র মোদীর সরকার এবং বিভিন্ন বিজেপি শাসিত রাজ্যের প্রশাসন যে ভাবে কার্যত সমস্ত দিক হইতে সমস্ত পরিসরে গণতন্ত্রের পরিকাঠামো এবং পরিবেশ ধ্বংস করিবার কাজটি চালাইয়া যাইতেছে তাহা আজ আক্ষরিক অর্থেই পৃথিবীর কাহারও জানিতে বাকি নাই। এমনকি ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী অবধি পারিবারিক সূত্রে এই স্বৈরবাদী মানসিকতা ও আচরণের প্রত্যক্ষ পরিচয় পাইয়াছেন। এক দিকে সর্বত্র অনুগত ও বশংবদ লোকজনকে ক্ষমতার আসনে বসাইয়া দেওয়া এবং অন্য দিকে যে কোনও বিরোধী স্বরকে ছলে বলে কৌশলে দমন করিতে তৎপর হওয়া— দুই উপায়ই যথেচ্ছ অনুসরণ করিতেছেন এই শাসকরা, স্বাধীন চিন্তার ও ভিন্নমত প্রকাশের অবকাশ কমিতে কমিতে দ্রুত বিলুপ্তির পথে। বিরোধী রাজনীতিকদের দমন করিবার জন্য সিবিআই-সহ প্রশাসনিক অস্ত্রগুলিকে সর্বতো ভাবে ব্যবহার করিবার অভিযোগও গত ছয় বৎসরে কত বার কত উপলক্ষে উঠিয়াছে, তাহার ইয়ত্তা নাই। সুতরাং, বিরোধীদের কাজ করিবার পরিবেশ নাই— রাহুল গাঁধীর এই অভিযোগ অনস্বীকার্য।

কিন্তু স্বৈরবাদী শাসকের উপর সর্বতো ভাবে চাপ সৃষ্টি করিয়া গণতান্ত্রিক পরিবেশ আদায়ের সংগ্রামও বিরোধী রাজনীতির একটি বড় দায়। বস্তুত, বর্তমান শাসকগোষ্ঠী এতখানি অগণতান্ত্রিক বলিয়াই বিরোধীদের দায়িত্ব অনেক বেশি। সমালোচনার দায়িত্ব, জনসংযোগের দায়িত্ব, সংগঠনের দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব তাঁহারা অনেকেই যথেষ্ট পালন করিতেছেন না। বস্তুত, রাহুল গাঁধী নিজের সাম্প্রতিক তৎপরতাকেই একটি মাপকাঠি হিসাবে ব্যবহার করিতে পারেন। কৃষি বিল এবং হাথরস— দুইটি বিষয়কে কেন্দ্র করিয়া যে প্রতিবাদ দেখা গিয়াছে, তিনি তাহাতে প্রবল ভূমিকা পালন করিয়াছেন, তাঁহার দলের কর্মকাণ্ডেও সেই উদ্দীপনা কিছুটা সঞ্চারিত হইয়াছে। তুলনায় অনেক বিরোধী দলের ভূমিকাই নিতান্ত নিষ্প্রভ। বিশেষত হাথরসের অস্বাভাবিক ঘটনার পরেও উত্তরপ্রদেশের দুই প্রধান বিরোধী দলের নিষ্ক্রিয়তা কেবল লজ্জাকর নহে, গণতন্ত্রের পক্ষে গভীর উদ্বেগের কারণ। বিরোধী রাজনীতিকে কাজ করিতে না দিবার অপচেষ্টাকে ব্যর্থ করিয়া বিরোধী প্রতিস্পর্ধা কী ভাবে নিজেকে সংগঠিত করিতে পারে, তাহার বহু দৃষ্টান্ত ভারতবাসী দেখিয়াছে— কি জরুরি অবস্থার ভারতে, কি বামফ্রন্টের পশ্চিমবঙ্গে, কি অন্য বিবিধ পরিপ্রেক্ষিতে। নরেন্দ্র মোদী গণতান্ত্রিক বিরোধিতার পরিসর উপহার দিবেন না। জড়তা, ঔদাসীন্য এবং সর্বোপরি ভয়কে জয় করিয়া সেই পরিসর আদায় করিতে হইবে। তাহাই এখন বিরোধী রাজনীতিকদের প্রথম এবং প্রধান কাজ। বিরোধী রাজনীতি চড়ুইভাতি নহে।

অন্য বিষয়গুলি:

Opposition Parties Modi Government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy