ছিল বর্জ্য, হইয়া গেল শিল্প। দূষণের কারণে যাহা পরিবেশবিদদের আতঙ্কিত করিয়া তুলিয়াছিল, তাহাই হয়তো ভবিষ্যতে মন ভরাইবে শিল্প-অনুরাগীদের। ভাবনাটি প্রতিবেশী দেশ নেপালের। অবশ্য, ভাবনাটির কেন্দ্রবিন্দু দৈনন্দিনের সাধারণ বর্জ্য নহে। ইহা পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের যাত্রাপথে সঞ্চিত বর্জ্য। বৎসরের পর বৎসর অভিযাত্রীদের ব্যবহৃত নানাবিধ দ্রব্য জমিয়া দূষিত করিতেছে সেখানকার বাতাস, মাটি। পর্বতশৃঙ্গটিকে বাঁচাইতে আসরে নামিয়াছে বিভিন্ন পরিবেশ সংগঠন। করা হইতেছে নানাবিধ পদক্ষেপ। বর্জ্য হইতে শিল্প তৈরির ভাবনাটি তাহাদেরই একটি অংশ। বর্জ্য হইতে শিল্পকীর্তি নির্মাণ করিয়া এভারেস্টের ৩,৭৮০ মিটার উচ্চতায় একটি সংগ্রহশালা নির্মাণ করা হইবে।
সাধু উদ্যোগ। বস্তুত, দীর্ঘ দিন ধরিয়াই এভারেস্টের দূষণ এবং পর্বতশৃঙ্গটির উপর বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব পরিবেশবিদদের শিরঃপীড়ার কারণ। এভারেস্টের শীর্ষদেশে মানুষের প্রথম পদার্পণ ঘটিয়াছিল প্রায় ৬৮ বৎসর পূর্বে। অতঃপর অভিযাত্রীদের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাইয়াছে। প্রতি বৎসরই বহু সংখ্যক অভিযাত্রী শীর্ষদেশ স্পর্শ করিবার বিরল কৃতিত্ব অর্জন করিয়া থাকেন। অবস্থা এমনই যে, শৃঙ্গজয়ের পথে অভিযাত্রীদের ‘জ্যাম’-এ আটকাইয়া প্রাণহানির ঘটনাও ঘটিয়াছে। এক সঙ্গে এত মানুষের পদার্পণ ঘটিলে যে পরিণতি হইবার কথা, তাহাই হইয়াছে। কলুষিত হইতেছে পরিবেশ। তুষারধবল যাত্রাপথে স্তূপীকৃত হইয়া পড়িয়া থাকিতেছে অক্সিজেনের বোতল, খাবারের কৌটো, প্লাস্টিকের ব্যাগ, তাঁবুর অংশ। ২০১৯ সালে সেনার সাহায্য লইয়া ‘স্বচ্ছ এভারেস্ট অভিযান’ শুরু করিয়াছিল নেপাল সরকার। এক মাসেরও কম সময়ে প্রায় পাঁচ হাজার কেজি বর্জ্যের সন্ধান পাওয়া গিয়াছিল। উদ্ধার হইয়াছিল শৃঙ্গজয়ের পথে মৃত অভিযাত্রীদের দেহও। পরিবেশের উপর ইহার সমষ্টিগত প্রভাব যে কী ভয়ঙ্কর, অনুমান করিতে কষ্ট হয় না। আবর্জনার পরিমাণ হ্রাস করিতে ‘ক্যারি মি ব্যাক’ নামে এক প্রকল্প লইয়াছে একটি পরিবেশ সংগঠন। ইহাতে প্রত্যেক অভিযাত্রীকে অন্তত এক কিলোগ্রাম করিয়া বর্জ্য ফেরত আনিবার অনুরোধ করা হইবে। আশা, ইহাতে পরিবেশ খানিক শুদ্ধ হইবে।
কিন্তু ইহা তো এভারেস্ট লইয়া ভাবনা। এভারেস্ট, আন্টার্কটিকা দূষিত হইলে সংবাদ শিরোনাম হয়। মানুষ নড়িয়া বসে। কিন্তু ঘরের পার্শ্বে আবর্জনা-পূর্ণ পুষ্করিণীটি নজর এড়াইয়া যায়। অথচ, দূষণ তাহাতে কিছু কম হয় না। দৈনন্দিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা লইয়াও বিস্তর শব্দ খরচ হইয়াছে। কিন্তু এখনও তাহা মসৃণ হইল কোথায়? কোভিড-কালে তাহার সহিত যুক্ত হইয়াছে চিকিৎসা বর্জ্য। ব্যবহৃত পিপিই, মাস্ক, গ্লাভস যত্রতত্র ছড়াইয়া থাকিতেছে। পরিবেশ দূষণের সঙ্গে দ্রুত সংক্রমণ ছড়াইবার আশঙ্কা বৃদ্ধি পাইতেছে বহু গুণ। সংবাদে প্রকাশ, এই মাস্ক, গ্লাভস জমা হইতেছে সমুদ্রতটেও, মিশিতেছে সমুদ্রের জলে। প্রাণসংশয় হইতেছে সামুদ্রিক প্রাণীর। ইহার যেন শেষ নাই। এভারেস্টকে বাঁচাইতেই হইবে। কিন্তু তাহার সঙ্গেই ভাবিতে হইবে, যে আবর্জনা মানুষ প্রতিনিয়ত জমা করিতেছে তাহার চারিপার্শ্বে, তাহার কী হইবে। সেই জঞ্জাল অবিলম্বে না সরাইলে পৃথিবী শীঘ্রই বসবাসের অযোগ্য হইয়া পড়িবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy