Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

সংবাদ নাই

কাশ্মীরে কি সেই নীতি অনুসরণ করা হইল? নাকি কার্ফু জারি, যানবাহন চলাচল বন্ধ, অজস্র সেনা মোতায়েন করিবার মতো, সংযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন এবং সংবাদ অবরুদ্ধ করিবার ব্যবস্থাটিও কেবল অশান্তির আশঙ্কায় করা হইল?

ছবি রয়টার্স।

ছবি রয়টার্স।

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

নজির সৃষ্টি করিল ভারত। একাদিক্রমে দশ দিন কাশ্মীর সংযোগবিচ্ছিন্ন। টেলিফোন, টেলিভিশন, ইন্টারনেট পরিষেবা, সকলই অচল। সংবাদমাধ্যম স্তব্ধ। কাশ্মীর হইতে একশো আশিটি দৈনিক প্রকাশিত হয়। দশ দিন হইল, চার-পাঁচটি ব্যতীত সবগুলি বন্ধ। ভারত সরকার ৩৭০ ধারা খারিজ করিয়া কাশ্মীরকে ভারতের অঙ্গ করিতে চাহে, অথচ সূচনাতেই বিচ্ছিন্ন করিল কাশ্মীরিদের। সংবিধানের ১৯ নম্বর ধারা কি কাশ্মীরবাসীর জন্য প্রযোজ্য নহে? কোন আপৎকালীন পরিস্থিতি, কোন শত্রু আক্রমণ, কোন ভয়ানক অন্তর্ঘাত ঘটিয়াছিল কাশ্মীরে, যাহার জন্য সকল সংবাদপত্র, টিভি চ্যানেল, ওয়েবসাইটকে নির্বিচারে স্তব্ধ করিতে হইল? ইহার পূর্বে কাশ্মীর-সহ ভারতের নানা রাজ্যে বহু বার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করা হইয়াছে, কিন্তু ৮ জুলাই সাধারণ দূরভাষও (ল্যান্ডলাইন) বন্ধ করা হইয়াছে। এমন ব্যাপক বিচ্ছিন্নতা অভূতপূর্ব। কোনও দেশে যুদ্ধ কিংবা অন্তর্ঘাতের সময়েও এ ভাবে এত বড় একটি অঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করা হইয়াছে, ইহার উদাহরণ বিশ্বে খুব বেশি নাই। রাষ্ট্রপুঞ্জের আশঙ্কা, ভারতের উদাহরণ হয়তো অন্যান্য দেশেও পালিত হইবে। সংবাদ জানিবার ও জানাইবার অধিকার বাক্‌স্বাধীনতার অবিচ্ছেদ্য অংশ, তাহা বস্তুত গণতন্ত্রের প্রাণস্বরূপ। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ ব্যতীত রাষ্ট্র নাগরিকের সেই অধিকার কাড়িতে পারে না। সমাজমাধ্যমে দ্রুত উত্তেজনা ছড়াইয়া পড়ে। সেই কারণে অশান্তি দেখা দিলে উপদ্রুত অঞ্চলগুলি নিয়ন্ত্রণে রাখিতে নানা দেশের সরকার সাময়িক ভাবে ইন্টারনেট পরিষেবা রুদ্ধ করিয়াছে। কিন্তু তাহা হিংসা রুখিবার, শৃঙ্খলা ফিরাইবার শেষ উপায় হিসাবে। নচেৎ অবরোধ সমর্থনযোগ্য নহে।

কাশ্মীরে কি সেই নীতি অনুসরণ করা হইল? নাকি কার্ফু জারি, যানবাহন চলাচল বন্ধ, অজস্র সেনা মোতায়েন করিবার মতো, সংযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন এবং সংবাদ অবরুদ্ধ করিবার ব্যবস্থাটিও কেবল অশান্তির আশঙ্কায় করা হইল? ইতিমধ্যেই কাশ্মীরের এক বরিষ্ঠ সাংবাদিক সুপ্রিম কোর্টে সংবাদের মুক্তি চাহিয়া আবেদন করিয়াছেন। তাঁহার বক্তব্য, দিল্লিতে কাশ্মীর সম্পর্কে অতি গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হইতেছে, অথচ সংবাদমাধ্যম অবরুদ্ধ হইবার ফলে কাশ্মীরবাসী তাহার কিছুই জানিতে পারিতেছেন না। ইহাতে তাঁহাদের অধিকারভঙ্গ হইতেছে, এবং এই সংবাদবিচ্ছিন্নতা কাশ্মীরিদের মধ্যে উদ্বেগ এবং আতঙ্ক সৃষ্টি করিয়াছে। যানবাহনে এবং নাগরিকদের চলাচলে কঠোর নিয়ন্ত্রণ, এবং টেলিপরিষেবা বন্ধ থাকিবার ফলে কাশ্মীরের সাংবাদিকেরা সংবাদ সংগ্রহ করিতে অক্ষম। অবিলম্বে সংবাদ সংগ্রহের অনুকূল পরিস্থিতি ফিরাইবার আবেদনটি সুপ্রিম কোর্ট মঙ্গলবার গ্রহণ করিয়াছে। সম্পাদকদের সংগঠন ‘এডিটর্স গিল্ড’-ও কাশ্মীরে সংবাদপত্রের উপর এই আক্রমণে উদ্বেগ প্রকাশ করিয়াছে। উপদ্রুত অঞ্চল হইতে সংবাদ সংগ্রহ সাংবাদিকদের নিকট নূতন নহে। সুরক্ষার যথাযথ নিয়ম মানিয়া কাজ করিবার প্রশিক্ষণ তাঁহাদের আছে। তাহা হইলে কেন সংবাদ সংগ্রহ বন্ধ করিবে সরকার?

সম্ভবত এই সকল প্রশ্ন বাহুল্য মাত্র। কাশ্মীরবাসীর একটি বড় অংশ যে নরেন্দ্র মোদী সরকারের সিদ্ধান্তকে দু’হাত তুলিয়া স্বাগত জানায় নাই, প্রতিবাদ হইতেছে, সংঘর্ষ ঘটিতেছে, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে তাহা প্রকাশ পাইয়াছে। আশঙ্কা হয়, দেশের নিকট তাহা ঢাকিবার জন্যই টেলিসংযোগ ও সংবাদের উপর এই অবরোধ চলিতেছে। ইহা গণতন্ত্রের একান্ত বিরোধী, সংবিধানের অবমাননা, এবং মানবাধিকারের পরিপন্থী। কঠোর সিদ্ধান্ত লইবার অধিকার নির্বাচিত সরকারের আছে, কিন্তু তাহার পরিণাম কী হইল, তাহা লুকাইবার অধিকার নাই। সরকার নিজেকে বাঁচাইতে সংবাদ গোপন করিতে পারে না।

অন্য বিষয়গুলি:

Jammu and Kashmir Article 370 Internet Mobile Network
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy