লন্ডন ডায়েরি। —ফাইল চিত্র।
“খেতে বসলেই দেশের খাদ্যসমস্যার ভয়াবহ ছবি মনে পড়ে, বুকে মেঘ জমে ওঠে, শরীর পাক দেয়। খাবার ফেলে উঠে যেতে হয়।” ১৯৪৩-এর বাংলার মন্বন্তরের খবর পেয়ে লিখছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভারতীয় সৈনিক। “যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদি হলে কী হবে? ভাবতে পারো?” লিখছেন অন্য জন। এমন সব চিঠিতে ভরে উঠেছে ইস্ট লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস লাইব্রেরির আইডিয়া সেন্টার-এর সিঁড়ির ধাপ, দেওয়াল, সিলিং। সেখানে চলছে বাংলার মন্বন্তর নিয়ে প্রদর্শনী ‘হাঙ্গার বার্নস’ (ক্ষুধার জ্বালা)। দর্শক হাঁটছেন চিঠিতে সাজানো প্রদর্শনীস্থলের মধ্যে দিয়ে। বেশির ভাগ চিঠিই ভারতে পৌঁছয়নি, আটকে দিয়েছিল ব্রিটিশ প্রশাসন। নিষিদ্ধ ও বিস্মৃত কত কথা ও কাহিনি, স্মৃতি থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে তাদের। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বিষয়ে দিয়া গুপ্তের বই থেকে নেওয়া তথ্যে সাজানো প্রদর্শনীটি শিল্পসামগ্রী, সঙ্গীত, কবিতা ও চিঠির মাধ্যমে সেই ইতিহাস শুনিয়েছে। শিল্পী সুযাত্র ঘোষের সৃষ্ট পটচিত্রগুলিতে মহিলাদের রান্না করার ও খাওয়ার ছবি। প্রায়শই তা কাল্পনিক, কারণ অন্ন কোথায় তখন? পটচিত্রের মেজাজে সঙ্গত করছে পডকাস্ট-এ রিনা বাউলের লোকসঙ্গীত, খিদে নিয়ে লেখা ঈশিতা আজ়াদের বাংলা ও ইংরেজি কবিতা। লন্ডনের এই এলাকায় বহু বাংলাদেশির বসবাস। তাঁদের অনেকেরই পূর্বপুরুষের মনে এখনও জেগে আছে মন্বন্তরের স্মৃতি। ৩০ লক্ষ মানুষের প্রাণ নিয়েছিল দুর্ভিক্ষ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে শামিল হয়েছিলেন ২৫ লক্ষ ভারতীয় সৈন্য। ব্রিটেনে অনেকের কাছেই সেই ইতিহাস আজও ব্রাত্য।
পরাজিতের দলে
কাজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে ইভনিং স্ট্যান্ডার্ড কাগজখানা তুলে নিতেন লন্ডনবাসী। টিউব ট্রেনে, বাসে লোকে খবরের কাগজ পড়ছেন, শব্দছক মেলাচ্ছেন— এটাই ছিল দশকের পর দশক সন্ধ্যার লন্ডনের চেনা ছবি। কিন্তু, অতিমারির সময় দু’ছর ধরে নিত্যযাত্রী-সংখ্যায় ভাটা পড়ায় কাগজের বিক্রিও পড়ে যায়। তাই এই কাগজ আর ছাপা আকারে বেরোবে না। অনলাইনে পাওয়া যাবে, সপ্তাহে এক বার ছাপা হবে। লোকে এখন খবর পড়েন ফোনে। ভূগর্ভস্থ স্টেশনে, টানেলেও রয়েছে ওয়াইফাই পরিষেবা। ২০১১-তেও কাগজের গ্রাহক ছিল সাত লক্ষ, এখন তা ২.৭৫ লক্ষ, তবে অনলাইনে দেখেন ১.২ কোটি মানুষ। ২০০৯-এ ডেলি মেল-এর কাছ থেকে কাগজটি কেনেন রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবশালী রুশ ধনকুবের আলেকজ়ান্ডার লেবেদেভ, কাগজটিকে বিনামূল্যেরও করে দেন। কিন্তু, মানুষ এখন রাস্তায় ডাউনলোড করা গান শোনেন, হোয়াটসঅ্যাপ পড়েন। তাই, স্মার্টফোনের কাছে হেরে গেল আরও একটা প্রতিষ্ঠান।
দশ টাকার গুপ্তধন
১৯১৮ সাল। শোনা যাচ্ছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নির্ঘোষ। লন্ডন থেকে বম্বে পাড়ি দিয়েছিল এসএস শিরালা জাহাজ। ছিল অস্ত্র, হাতির দাঁত, হিরে, যানযন্ত্রাংশ, মদিরা, মার্মালেড, ভারতীয় নোটের বান্ডিল। ২ জুলাই আইরিশ তট ছেড়ে খানিক এগোতেই জার্মানির ডুবোজাহাজের টর্পেডো হানা, সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যায় এই জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ। নোটের বান্ডিলের কিছুটা ভেসে এসেছিল পাড়ে। বাংলা, হিন্দি-সহ ভারতীয় ভাষায় লেখা এক, পাঁচ, দশ টাকার নোটগুলিতে সই, সিলমোহরে কলকাতার উল্লেখ ছিল। তার কয়েকটি আজও ব্যক্তিগত সংগ্রাহকের কাছে দারুণ হালে রয়েছে, কারণ সেগুলি ছিল মোটা বান্ডিলের মাঝের নোট। এমনই দুটো ব্রিটিশ আমলের দশ টাকার নোট লন্ডনে নিলাম হল। দাম উঠল ৬৫০০ ও ৫৫০০ পাউন্ড! হোক অচল দশ টাকা, ১০০ বছর আগে সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে গিয়ে অমূল্যরতন হয়ে উঠেছে যে!
অর্থমনর্থম্!
প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক ট্রেনের রাস্তাটুকু যেতেও বিমানে চাপেন, জামা-জুতোয় তাঁর রুচি মহার্ঘ। তাই সমালোচিত হন। এ বার নিজেকে ‘সাধারণ’ প্রমাণ করতে লন্ডন থেকে রাতের ট্রেনে চেপেছিলেন। সকালে ব্যাকপ্যাক পিঠে অন্যান্য যাত্রীর মতোই লাফিয়ে নামলেন পেনজ়েন্স স্টেশনে। কিন্তু সাংবাদিকদের চোখে ধরা পড়ল ব্যাকপ্যাকটি অভিজাত ব্র্যান্ডের, তায় তাতে ঋষির আদ্যক্ষরের নকশা! অতএব, ৭০০-১৩০০ পাউন্ড দাম তো হবেই। ঋষি যা-ই করেন, চিঁড়ে ভেজে না। ও দিকে দ্য সানডে টাইমস-এর ধনী-তালিকাতেও জ্বলজ্বল করছে তাঁর নাম, রাজা চার্লসের চেয়েও বিত্তশালী তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy