কচ্ছের একটি কলেজে ঋতুমতী মেয়েরা ক্যান্টিনে ঢুকিয়াছে কি না, বুঝিতে তাহাদের অন্তর্বাস পরীক্ষা করিলেন অধ্যক্ষ। দেশের অপর প্রান্তে, কলিকাতা পুরসভার আশিটি স্কুলে মিড-ডে মিলে ডিম হইতে বঞ্চিত হইতেছে ছাত্রছাত্রীরা। দুইটি ঘটনা আপাতদৃষ্টিতে ভিন্ন হইলেও, সমস্যার মূল কারণটি এক— পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা একটি ধর্মীয় সংগঠন, যাহার বিধিনিয়মের সহিত বৃহত্তর সমাজের রীতির সংঘাত বাধিয়াছে। বিষয়টি সহজ নহে, নৈতিকতার অনেকগুলি বিচার পরস্পর জড়াইয়া রহিয়াছে। প্রথম জট ধর্মীয় অধিকার ও নারীর অধিকারে। নিজ ধর্মের অনুজ্ঞা পালন করিবার অধিকার সংবিধান দেশের সকল নাগরিককে দিয়াছে। অতএব যে কোনও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান শুচিতা-অশুচিতা, কর্তব্য-অকর্তব্য সম্পর্কে তাহার নিজের বিচারকে মান্যতা দিতে পারিবে। সেই অধিকার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান, সকলেরই আছে। কিন্তু সেই অধিকারকেও সংবিধান-প্রদত্ত অপরাপর মৌলিক অধিকারের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ হইতে হইবে। শবরীমালা মন্দিরে ঋতুমতী মেয়েদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা লইয়া সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় ইহাই প্রতিষ্ঠা করিয়াছে যে, ধর্মীয় আচার পালনে লিঙ্গবৈষম্য অন্যায়। তাহাতে অধিকারের হানি হয়।
যদিও শবরীমালা রায়, এবং মেয়েদের ধর্মীয় স্থানে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত আরও কয়েকটি মামলা এখন একটি বৃহত্তর বেঞ্চের বিবেচনাধীন, তবু ইহা স্পষ্ট যে পূজা-উপাসনার বিষয়ে ধর্মসম্প্রদায়ের প্রচলিত বিধির ন্যায্যতাও প্রশ্নাতীত নহে। অতএব ভুজ-এর কলেজটিতে মেয়েদের হস্টেলে যাহা ঘটিয়াছে, তাহা যে কেবল শ্লীলতা ও শোভনতার সীমা পার করিয়াছে, তাহাই নহে। ঋতুমতী মেয়েদের ‘অশুচি’ গণ্য করিবার মনোভাব অন্যায় কি না, তাহা ‘ধর্মীয় রীতি’ বলিয়া গ্রহণযোগ্য না কি কুসংস্কার বলিয়া বর্জনীয়, সেই গোড়ার প্রশ্নটিও উঠিতে বাধ্য। প্রচলিত মতকে যুক্তি দিয়া বিচার করিবার শিক্ষাই দিবার কথা স্কুল-কলেজের। ঋতুস্রাবের মতো একটি প্রাকৃতিক এবং জরুরি শারীরিক প্রক্রিয়াকে ‘অপবিত্র’ ভাবিবার প্রথাকে কী ভাবে কোনও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান চাপাইয়া দিতে পারে, সে প্রশ্নও উঠিবে।
দ্বিতীয় জটখানি পাকিয়াছে ব্যক্তিপরিসর ও জনপরিসরের বিবেচনায়। কোনও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নিজস্ব আশ্রমে অভ্যাগতদের উপর বিধি আরোপ করিতেই পারে। কিন্তু জনপরিসরে কোনও পরিষেবার ভার লইয়া সকল গ্রাহকের উপর নিজের বিধি চাপাইতে থাকিলে তাহা উপদ্রব। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালিত স্কুল-কলেজে যাহারা পড়িতে আসিয়াছে, তাহারা ‘শিষ্য’ হইতে আসে নাই। তাহারা একটি পরিষেবা গ্রহণ করিতেছে। সাধারণ শৃঙ্খলারক্ষা ব্যতীত তাহাদের প্রতি অপর কোনও প্রত্যাশা যুক্তিযুক্ত নহে। শিক্ষা বা চিকিৎসা দিবার সুযোগে ভিন্ন ধর্মমত চাপাইবার ঔপনিবেশিক বদভ্যাস হইতে আজও এ দেশের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলি মুক্তি পায় নাই, ইহা বড়ই আক্ষেপের কথা। এই কারণেই ধর্মের দোহাই দিয়া ডিম হইতে বঞ্চনা সমর্থনযোগ্য নহে। শিশু, নারী, তথা সকল নাগরিকের কী প্রাপ্য, কী অধিকার, সে বিষয়ে আইন রহিয়াছে, সরকারি নীতি ও প্রকল্প রহিয়াছে। জনপরিসরে পরিষেবা দিতে রাজি হইলে সে সকল মানিতে হইবে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে। গণতন্ত্রে জনস্বার্থ রক্ষা করাই ধর্ম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy