স্বাধীনতা দিবস অনুষ্ঠানে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কোভিড-যোদ্ধাদের সম্মান জানানোর সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে (১৫-৮)। সরকারি তালিকা অনুযায়ী, ডাক্তার, নার্স, পুলিশকর্মী, হোমগার্ড, আশাকর্মী, বিডিও, সাফাইকর্মী, অ্যাম্বুল্যান্স চালক, ল্যাব টেকনিশিয়ান, সিভিক ভলান্টিয়ার-সহ মোট ২৫ জন নাগরিকের হাতে সরকারের পক্ষ থেকে মানপত্র, পদক তুলে দেওয়াও হল। কিন্তু তালিকায় এক জনও সরকারি পরিবহণকর্মীর নাম না দেখে আশ্চর্য হলাম।
লকডাউনের শুরু থেকে সরকারি পরিবহণকর্মীরা অক্লান্ত পরিষেবা দিয়ে চলেছেন। চিকিৎসাকর্মীদের নিয়ে যাতায়াত, ভিন্রাজ্য থেকে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের তাঁদের ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া, আনলক পর্বে শহর ও শহরতলিতে পরিবহণ ব্যবস্থা চালু রাখতে সরকারি পরিবহণ নিগমগুলির কর্মীরা নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন। হাজার অনুরোধ, উপরোধ, প্যাকেজ উপেক্ষা করে বেসরকারি বাস মালিকদের সংগঠন কিন্তু এই সময় মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে।
এই কাজ করতে গিয়ে সরকারি পরিবহণকর্মীদের অনেকেই কোভিড-আক্রান্ত হয়েছেন। ধর্মতলা টার্মিনাসের দু’জন কর্মী মারা গিয়েছেন। নিগমের বাঁকুড়া ও মেদিনীপুর ডিপো ১৫ দিনের জন্য বন্ধ রাখতে হয়েছে। সামনের সারির যোদ্ধা সেই পরিবহণকর্মীদের কাউকে স্বীকৃতি দিলে ভাল হত।
রাজশেখর দাস
কলকাতা-১২২
চিঠির উত্তর
আমার নিবন্ধ ‘বক্তৃতায় যা ঢাকা পড়বে না’ (১৫-৮) প্রসঙ্গে বিনয়ভূষণ দাশ জানতে চেয়েছেন (সম্পাদক সমীপেষু, ১৯-৮), আমি আরএসএস প্রধান গোলওয়ালকরের যে প্রবন্ধটির উল্লেখ করেছি, সেটি কোথায় পাওয়া যাবে। বেঙ্গালুরুর বিক্রম প্রকাশন থেকে প্রকাশিত গোলওয়ালকরের বাঞ্চ অব থটস (১৯৬৬) তাঁকে দেখতে অনুরোধ করি, বিশেষ করে ১২১ নম্বর পৃষ্ঠা থেকে। ওখানেই তাঁর ‘টুওয়ার্ডস আ ভিরাইল নেশনহুড’ প্রবন্ধটি আছে। ওই একই দৃষ্টিভঙ্গি তাঁর গুরু হেডগেওয়ারও পোষণ করেছিলেন। হেডগেওয়ারের জীবনীতে সি পি বিশিকর লিখেছেন, তিনি বার বার বলতেন দেশভক্তি মানেই কারাবরণ নয়। ওটা নিছক পৃষ্ঠস্থ বা উপরিগত।
হ্যাঁ, হেডগেওয়ার তাঁর ছাত্রাবস্থায় কলকাতায় ছিলেন এবং অনুশীলন সমিতির দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। অল্প বয়সে তিনি বিপ্লবী রাজনীতিতে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। আমরা তো এই সময়কার কথা তুলিনি, কেননা ওঁর আসল রাজনৈতিক জীবন শুরু হল তার ১৫ বছর পরে। আমার বক্তব্য ১৯২৫ সালে ওঁর রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ স্থাপন করার পরের সময়ের। প্রচুর নথি থেকে দেখা যায়, তখন থেকেই তিনি অনুগামীদের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে দূরে থাকতে বলেছেন।
শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ১২ অগস্ট, ১৯৪২-এর চিঠির কথাও পত্রলেখক বলেছেন। এটি কোথায় পেয়েছেন, জানালে সুবিধে হয়। কিন্তু আমরা নিশ্চিত জানি, শ্যামাপ্রসাদ বাংলার গভর্নর হার্বার্টকে কয়েকদিন আগে লেখা চিঠিতে বলেছিলেন, তিনি যেন ভারত ছাড়ো আন্দোলনকে শক্ত হাতে দমন করেন। তিনি ইংরেজ সরকারকে বাহবা জানিয়ে হিন্দু মহাসভার পূর্ণ সমর্থনেরও আশ্বাস দিয়েছিলেন। গাঁধীজির কংগ্রেস ১৯৪২-এর সংগ্ৰামের পূর্বে মহাসভার অনুমতি নিয়েছিলেন কি না, সাহায্য চেয়েছিলেন, না চাননি, বলা কঠিন। আমরা শুধু জানি যে, আরএসএস এর আগের ২৭ বছরে জাতীয় আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেনি। ইতিহাস আরও বলে যে, হিন্দু মহাসভা ১৯৩৩ সালে রাজনৈতিক দলে পরিণত হওয়ার পর থেকে জাতীয় আন্দোলনের কার্যসূচির থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছিল। ইতিহাস এ-ও বলে যে, ব্রিটিশ সরকার শ্যামাপ্রসাদের ও সব চিঠির কোনও গুরুত্ব দেয়নি এবং তাদের আধিকারিকরা ভারতীয় মন্ত্রীকে গ্রাহ্যই করেনি। এত ভক্তি প্রদর্শন করার পরেও যখন তাঁকে সরকার মেদিনীপুর জেলায় যাওয়ার অনুমতি দিল না, তিনি রাগে একটি রাজনৈতিক কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করলেন। তার পর ইংরেজদের সমালোচনা শুরু করলেন।
বিনয়ভূষণবাবু যখন যুদ্ধের সময় ব্রিটিশ রাজশক্তিকে হিন্দু মহাসভার সাহায্যের কথা তুললেন, তখন আমাদের একটু স্বচ্ছতার প্রয়োজন। এক বার স্মরণ করা যাক সাভারকরের অবস্থান। তিনি বার বার ওই রাজশক্তির কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানিয়েছিলেন, তাঁকে যাতে আন্দামানের কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। তার বিনিময়ে প্রতিশ্রুতি দিয়ে স্পষ্ট বলেছিলেন যে, তিনি তাঁদের সব সময় সাহায্য করবেন। অতএব এটাও একটা কারণ হতে পারে, যার জন্যে তিনি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় ভারতীয়দের উৎসাহিত করেছিলেন ইংরেজদের হয়ে লড়াই করতে। তাঁর ঘোষিত যুক্তি অবশ্য ছিল যে, এই অভিজ্ঞতা হিন্দু যুবকদের পরে কাজে দেবে। কিসের জন্য স্পষ্ট নয়— তিনি তো ওঁদের নিয়ে কোনও সশস্ত্র বিপ্লবের ডাক দেননি। রাসবিহারী বসু জাপান থেকে হিন্দু মহাসভার পদে ছিলেন। কিন্তু তার সঙ্গে আজাদ হিন্দ ফৌজের কথা টানার ইঙ্গিত হল, হিন্দু মহাসভাকে নেতাজির বীরত্বের কিছু ছিটেফোঁটা কুড়িয়ে দেওয়া।
দেশের স্বাধীনতার যুদ্ধটায় যাঁরা সরাসরি অংশগ্রহণ করলেন না, আর ব্রিটিশ সরকারের কাছে আনুগত্য দেখালেন, তাঁরা এখন জাপানের গল্প শুনিয়ে তো আর ইতিহাস বদলাতে পারবেন না।
জহর সরকার
কলকাতা-১৯
দোষেগুণে
‘আমলকীর সুফল’ (‘পত্রিকা’, ১৫-৮) পড়ে এর গুণাবলি সম্পর্কে অবগত হলাম। আগে এবং এখনও বেশ কিছু পরিবারে দুপুরে খাওয়ার পর মুখশুদ্ধি হিসেবে জোয়ান, সুপুরি, বড় এলাচ খাওয়ার অভ্যাস আছে। আমাদের বাড়িতে দেখতাম, ঠাকুমা-বড় পিসিমারা আমলকী সেদ্ধ দুপুরে ভাতের সঙ্গে খেতেন। ছাদে কুলোতে কাঁচা আমলকী রোদে শুকিয়ে হামানদিস্তেয় গুঁড়ো করে সেটি পান সাজার কাজে ব্যবহৃত হত। বড়রা দুপুরে খাওয়ার পর রোজ সাজা পান খেতেন। এখন পানের জায়গায় অনেকে বেছে নিয়েছেন আমলকী।
কাঁচা আমলকী ছোট ছোট পাউচে ভরে ট্রেনে, বাসে হকাররা প্রতি দিন যাত্রীদের কাছে বিক্রি করেন। প্রথমটা কষা ও টক লাগে। চিবোনোর সঙ্গে সঙ্গে মিষ্টি।
ডায়াবিটিসের লক্ষণ যাঁদের আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে আমলকী খেলে তা ইনসুলিন উৎপাদনে যেমন সহায়তা করে, তেমনই অনেক সময় নাকি কমেও যায়। সে ক্ষেত্রে শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই যাঁরা সুগারের ওষুধ খান, তাঁদের ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে তবেই আমলকী খাওয়া উচিত। খালি পেটে আমলকী সেবনও স্বাস্থ্যসম্মত নয় বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
উৎপল মুখোপাধ্যায়
চন্দননগর, হুগলি
আখেরিগঞ্জ
আমির উল হকের চিঠি (১৪-৮) ‘সম্প্রীতির রামলীলা’-য় তৎকালীন অসাম্প্রদায়িক পরিবেশ প্রসঙ্গটি পড়ে ভাল লাগল। জন্মসূত্রে আখেরিগঞ্জের সেই পঞ্চাশ-ষাটের দশকের কিছু স্মৃতি এখনও মনে আছে। গ্রামের মাতব্বর তথা মন্দির কমিটির তৎকালীন সভাপতি মহাশয় খুব উদার মনের মানুষ ছিলেন। তাঁর আহ্বানে পুজো, রামলীলা, কৃষ্ণযাত্রা, রাসলীলা, কীর্তনের আসরে এলাকার মুসলিম প্রতিবেশীরা সানন্দে যোগদান করতেন। পাশের গ্রাম ট্যাঁকপাড়ায় দুর্গাপুজোয় বিরাট মেলা হত। সেখানে পুজো, মেলা, দোকানপাট, কবিগান, যাত্রা, আলকাপ— এ সবের আয়োজন ও পরিচালনায় প্রধান দায়িত্ব নিতেন মুসলিম প্রতিবেশীরা। গ্রামে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক, হাইস্কুলের হেড মাস্টারমশায়, স্থানীয় ইউনিয়ন বোর্ড প্রেসিডেন্ট, ডাক্তার, এঁদের কাছে ধর্মীয় গোঁড়ামির কোনও স্থান ছিল না। এবং এঁদের প্রভাবে এলাকায় যে সম্প্রীতির পরিমণ্ডল প্রতিষ্ঠিত ও প্রসারিত হয়েছিল, সে কথা আজও স্মরণ করতে হয়।
সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy